গল্পঃ বেস্টফ্রেন্ড যখন বউ
#পর্ব_০৭
(৬ষ্ঠ পর্বের পর থেকে)
রাত প্রায় ৯.৩০ টা, আমি তন্নিদের বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছি, কলিং বেল দেওয়ার সাথে সাথেই দেখলাম তন্নির মা এসে দরজা খুলে দিলো, তারপর বললো…
শাশুড়িঃ বাবা আসছো? পথে কোনো সমস্যা হয়নি তো?
আমিঃ না কোনো সমস্যা হয়নি।
শাশুড়িঃ আচ্ছা বসো, খাওয়া দাওয়া করে নাও।
তন্নিও বসে আছে বাট আমি কিছু বলছি না দেখে সেও বলছে না। খাওয়া দাওয়া শেষ করে রুমে গেলাম, গিয়ে একটা চেয়ারের উপর বসে আছি, একটু পর তন্নি এসে দরজা লাগিয়ে দিলো। আমাকে বললো…
তন্নিঃ সরি!
আমিঃ সরি কেন? (অবাক হয়ে)
তন্নিঃ সেদিন রাতের ঘটনার জন্য, আমি ভাবছি তুই আমার সাথে…
আমিঃ থাক বলতে হবে না। আমার কপালে ওগুলোই ছিলো। তুই ঘুমা, সকালে তাড়াতাড়ি যেতে হবে।
তন্নিঃ তুই কোথায় ঘুমাবি?
আমিঃ আমাকে নিয়ে তোর চিন্তা করতে হবে না। তুই ঘুমা,,,
তন্নিঃ খাটে ঘুমা। আমি নিচে ঘুমাবো।
আমিঃ কেন তোর চড় খাওয়ার জন্য নাকি তোর কাছে অপমানিত হওয়ার জন্য?
সে আর কিছু না বলে ঘুমিয়ে পড়লো, আমিও একটা বালিশ নিয়ে নিচে শুয়ে পড়লাম।
সকালবেলা ঘুম থেকে সাঁদে গেলাম, তন্নিও আমার পেছনে পেছনে গেলো, দেখে মনে হচ্ছে কিছু একটা বলবে বাট বলতে পারছে না। এরপর আমি বললাম…
আমিঃ কিছু বলবি?
তন্নিঃ তুই কি সত্যিই আমাকে ভালোবাসিস?
আমিঃ পাগল নাকি তোরে কেন আমি ভালোবাসবো? (মিথ্যা বললাম, দেখি ও কি রিয়েক্ট করে)
তন্নিঃ তাহলে এতোদিন যে বললি, তুই আমাকে ভালোবাসিস।
আমিঃ মিথ্যা বলেছি। তোর সাথে থাকার বা কথা বলার কোনো ইচ্চাই আমার নেই।
তন্নিঃ তাহলে আমাকে নিতে আসলি কেন?
আমিঃ আব্বু আম্মু বলেছে তাই, নাহলে জীবনেও আসতাম না।
তন্নিঃ বাহ ভালো তো, নতুন কাউকে পেয়ে গেছিস এখন তো আমার দরকার নেই।
আমিঃ তোর দরকার কখনো ছিলো না। থাকবেও না, আদিবার সাথে আমি খুব ভালোই আছি। (রাগানোর জন্য বললাম)
তন্নি আর কিছু না বলে চোখ মুখ লাল কান্না করতে করতে নিচে চলে যায়।
মনে মনে বন্ধু আয়মান কে ধন্যবাদ দিতে লাগলাম, ওর বুদ্ধিটা কাজে লেগেছে, এই রকম জানলে আরো আগে থেকে ইগনোর করতাম।
যাইহোক একটু পর আমিও নিচে গেলাম, গিয়ে দেখি তন্নি চুপ করে বসে আছে, আমি বললাম…
আমিঃ রেড়ি হয়ে নে, বাসায় যেতে হবে।
তন্নিঃ আমি যাবো না। তুই যা,,
আমিঃ তোর ন্যাকামি দেখার টাইম নাই আমার, আদিবা বসে আছে, তাড়াতাড়ি রেড়ি হয়ে নে।
তন্নিঃ বললাম তো আমি যাবো না (চিৎকার দিয়ে)
আমিঃ ওকে, একটু পর নিজেই যাবি।
তন্নিঃ তুই এখান থেকে যা, তোকে যেন না দেখি।
আমিঃ চলে তো যাবোই, এখানে তো থাকতে আসিনি।
তন্নিঃ তুই আর এক সেকেন্ডও এখানে থাকতে পারবি না, এখনি বের হয়ে যা।
আমিও আর কিছু না বলে নাস্তা না করে ওর বাবা মা কাউকে না জানিয়ে সোজা অফিসে চলে গেলাম, বাসায় গেলে বাবা চিল্লাচিল্লি করবে।
কাজ করতেছি এমন সময় আদিবা আসলো…
আদিবাঃ আসতে পারি স্যার।
আমিঃ আরে আদিবা আসো, বসো।
আদিবাঃ ধন্যবাদ স্যার। আপনার কি মন খারাপ?
আমিঃ আরে না, এমনিই ভালো লাগছে না।
আদিবাঃ আমি জানি স্যার, মেম আপনাকে কিছু বলেছে। আসলে স্যার সেদিন যদি জানতাম মেমও মার্কেটে যাবে তাহলে আপনাকে যেতে বলতাম না।
আমিঃ আরে ধুর এটা কোনো ব্যাপার না।
এমন সময় বাবা কল দিলো… আদিবা উঠে চলে গেলো….
বাবাঃ এই কই তুই?
আমিঃ আমিতো অফিসে।
বাবাঃ তোকে না বললাম বৌমাকে নিয়ে বাসায় আসতে!
আমিঃ ও আসবে না বলেছে। সেজন্যই তো আমি অফিসে চলে আসছি।
বাবাঃ চুপ কর বেয়াদব, ও আসবেনা বলছে নাকি তুই নিয়ে আসিস নি!
আমিঃ মানে? আমি কেন নিয়ে আসবো না।
আমিঃ আরে তুমি এসব কি বলো, সব গুলো মিথ্যা কথা।
বাবাঃ চুপ কর, তন্নি আমাদের সব কিছু বলেছে, মেয়েটা কখন থেকে কান্না করতেছে।
আমি আর কিছু না বলে কেটে দিলাম, ধুর ফকিন্নি টা বাবাকে আনিয়ে বানিয়ে কি বললো আল্লাহই যানে, নিজে সব দোষ করে এখন আমাকে ফাঁসাই দিছে।
বিকালবেলা আয়মান কল দিলো…
আয়মানঃ কিরে দোস্ত কি অবস্থা?
আমিঃ মামা কি বুদ্ধি দিলি, তন্নিতো ফেসে গেছে।
আয়মানঃ আরে কি বলিস! আচ্ছা শোন সন্ধ্যার সময় তুই আর তন্নি কফিশপে আসিস, কথা আছে।
আমিঃ ধুর আমি তন্নিকে নিয়ে আসতে পারবো না, তোরা বল আসতে।
আয়মানঃ আচ্ছা ঠিক আছে বলবো, তুই অন্তত সাথে করে নিয়ে আসিস। সানি আর ফারিয়াও থাকবে।
আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে।
এরপর বাসায় গেলাম, দেখলাম তন্নি রেড়ি হয়ে বসে আছে। আমাকে দেখে বললো…
তন্নিঃ আয়মান কিছু বলেছে?
আমিঃ না, কিছু বলেনি। কেন?
তন্নিঃ কফিশপে যাওয়ার জন্য বলেছে।
আমিঃ তো যা, আমাকে বলছিস কেন?
তন্নিঃ তোকেও যেতে বলেছে।
আমিঃ আমি যাবো না, তুই যা।
তন্নিঃ একসাথে যাওয়ার জন্য বলেছে, তুই না গেলে আমিও যাবো না।
মনে মনে তো আমার লাড্ডু ফুটতেছে, আহা কি যে আনন্দ বলে বোঝাতে পারবো না। যাইহোক বেশি মোড নিতে গেলে আবার দেখা যাবে যে একসাথে যাওয়াই হবে না।
একটু পর আমি আর তন্নি বের হয়ে গেলাম, একটা রিক্সা নিলাম, এই প্রথম বিয়ের পর একসাথে রিক্সা নিয়ে ঘুরতেছি, যখন ওর সাথে ফ্রেন্ড হিসেবে ঘুরতাম রিক্সায় কি মঝাটাই না হতো, সব কিছু মনে পড়তে লাগলো, আমি রিক্সার একপাশে সরে বসে আছি। তন্নি বার বার আমার দিকে তাকাচ্ছে।
একটু পর কফিশপে গেলাম, দেখলাম আয়ামান, সানি আর ফারিয়া বসে আছে। আমাদের দেখে বললো…
ফারিয়াঃ বাহ দুজনের এখন আসার সময় হলো?
আমিঃ নারে একটু কাজ ছিলো তাই,
ফারিয়াঃ বুঝি বুঝি কি এমন কাজ।
তন্নি গিয়ে ফারিয়াকে জড়িয়ে দরলো, এদিকে আয়মান আমাকে ইশারা দিতেছে, বলতেছে কাজ হচ্ছে। এমন সময় সানি বললো…
সানিঃ দোস্ত শোন তোরা থাক, আমাদের একটু কাজ আছে যেতে হবে।
আমিঃ সেকি মাত্রই তো আসলাম, কপিটা খেয়ে যা।
সানিঃ নারে অনেক কাজ, সময় কম।
তন্নিঃ আচ্ছা তুই যা, ফারিয়া থাকুক।
সানিঃ নারে, ওরে ছাড়া আমার কোনো কাজ হয় না, ওর কপালে চুমু না খেলে কাজে মন বসে না।
ফারিয়াঃ চুপ কর ফাজিল, আচ্ছা তোরা থাক। পরে কথা হবে।
একথা বলে ফারিয়া আর সানি চলে গেলো, আয়মানও কেমন জানি চড়পড় করতেছে, আমি বললাম….
আমিঃ কিরে তোর আবার কি হইছে?
আয়মানঃ আসলে দোস্ত, বাসায় একটা কাজ ফেলে চলে আসছি। এখনি বাসায় যাওয়া লাগবে।
আমিঃ মানে কি তোদের সবার কাজ আছে, আগে বলতি। তোরা না বললি একসাথে কফি খাবি।
আয়মানঃ তোরা খা, আমি একটু আসি।
একথা বলে আয়মানও চলে গেলো, আমি আর তন্নি বসে আছি, একটু পর কফি আসলো, দুজনেই খেলাম। দুজনের নীরবতা ভেঙ্গে তন্নি বললো….
তন্নিঃ একটা কথা বলতাম!
আমিঃ হুম বল।
তন্নিঃ অনেক দিন কোথাও ঘুরি না, চল পার্কটাতে একটু ঘুরে আসি।
আমিও কেন জানি ওর এই আবদার টা না রেখে পারলাম না। অনেকক্ষণ দুজনে একসাথে হাটলাম ভালো লাগলো।
রাত প্রায় ৮.০০ টা, বাসায় গেলাম, দেখলাম বাসায় কেউ নেই, কিন্তু দরজা খোলা, বাবা মা দুজনকেই ডাক দিলাম, কারো কোনো সাড়া শব্দ নেই। তন্নিও ভয়ে কাঁপতেছে,,,
একটু পর নীরবতা ভেঙ্গে শুরু হলো আমাদের দুজনের মুখের উপরের স্প্রে মারা। আর সবাই একসাথে বলতে লাগলো…
Happy Birthday Tonni, Happy Birthday Too You….
বাবা, মা, সানি, আয়মান আর ফারিয়া সবাই একসাথে। দেখেতো আমরা পুরাই অবাক, আমি নিজেও ভুলে গেছি আজকে তন্নির জন্মদিন। কিন্তু বন্ধু গুলার মনে আছে। সেজন্য তারা কফিশপ থেকে তাড়াতাড়ি চলে আসছে।
তারপর বড় একটা কেক কাটা হলো, তন্নি সবার প্রথম আমাকেই খাইয়ে দিয়েছে, আমিও খাইয়ে দিয়েছি। একেক করে সবাই সবাইকে খাইয়ে দিয়েছে। এমন সময় তন্নি বললো….
তন্নিঃ এতো গুলো আয়োজন কে করছে?
সবাই একসাথে আমাকে দেখিয়ে দিলো আমিতো পুরাই টাসকি খেয়ে গেলাম, আমি নিজেই কিছু জানি না। আর ওরা বলছে আমি করছি। সেদিন সবাই একসাথে খাওয়া দাওয়া করে নিলাম। ওদের বাসায় যেতে দিই নি। আমি সানি আয়মান একসাথে ঘুমাইছি, ফারিয়া আর তন্নি একসাথে ঘুমাইছে।
পরের যে যার মতো চলে গেলো, আমিও অফিসে চলে গেলাম, দুপুরবেলা আদিবা আমার রুমে আসলো…..
আদিবাঃ স্যার আসতে পারি?
আমিঃ হুম আসো, বসো।
আদিবাঃ স্যার একটা কথা বলতাম।
আমিঃ হুম অবশ্যই বলো।
আদিবাঃ আসলে স্যার আমার একজনের সাথে রিলেশন আছে। বাবা বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিলো তাই আমি বাবাকে ফাহাদের (আদিবার বয়ফ্রেন্ড) এর কথা বলছি। বাবা বলেছে ও কে নিয়ে বাবার সাথে দেখা করার জন্য। যদি আজকে বিকালের জন্য আমাকে ছুটি দিতেন, উপকার হতো।
আমিঃ আরে এটা কোনো কথা? তুমি আমাকে আগে বলবেনা। ওকে যাও, দিলাম।
আদিবাঃ ধন্যবাদ স্যার।
আমিঃ আদিবা! একটু কষ্ট করতে পারবে?
আদিবাঃ জি স্যার বলুন।
আমিঃ তোমার পাশের আলমারিটার উপর একটা হলুদ রঙের ফাইল আছে, যদি একটু কষ্ট করে দিতে উপকার হতো।
আদিবাঃ এতে কষ্টের কি আছে।
এ কথা বলে আদিবা উঠে ফাইলটা নিতে গেলো, আলমারি উচু হওয়ার কারণেই, সে একটু উপরের দিকে উঠে পায়ের আঙ্গুলের উপর ভর করে ফাইলটা নিতে যাবে এমন সময় পা শ্লিপ করে উলটে যেতে লাগলো। আমি তাড়াতাড়ি উঠে ও কে ধরে ফেললাম। আর এমন সময় তন্নি এসে উপস্থিত!
আমাদের দুজনকে এভাবে একসাথে দেখেই…….
চলবে…..
To be Continue……
0 Comments