মামাতো_বোন_যখন_অফিসের_বস..♥, Part....3

ম্যাম আমি এখন আসি,কথাটা বলেই চলে আসব আর তানহা আমার হাতটা ধরে ফেলল....
--তুই বারবার আমাকে ম্যাম বলে ডাকছিস কেন...?
--অফিসের বসকে ম্যাম কিংবা স্যার বলেই ডাকতে হয়। তাইতো জানতাম..(অভিমানী কন্ঠে)
--তোর আমার সম্পর্কটা কি শুধুই বস এবং কর্মচারীরর...?
ওর মুখে এই কথাটা শুনে বেশ অবাকই হলাম। কেন জানি মনে হলো, ও আমার খুব আপন হওয়ার চেষ্টা করছে।





--এর বাইরে আমি তো কোনো রিলেশন দেখছি না ম্যাম,, (হাতটা ছাড়িয়ে)
--কেন,,? আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্কটা কি তোর কাছে শেষ হয়ে গেছে মেহমেদ..?
--আমার কাছে আমার পৃথিবী ছিল আমার আম্মু। আম্মু যেদিন আমাকে ছেড়ে চলে গেছে, সেদিন আমি আমার পৃথিবী হারিয়েছি। যার পৃথিবী বলতে কিছু নেই, তার আবার সম্পর্ক, বন্ধুত্ব..?(মাথা নিচু করে)
--আমরা নাহয় তোর কেউ নই,,কিন্তু দাদী..? সেও কি তোর কাছে পর হয়ে গেছে..?
--তা কেন হবে..কেমন আছে নানু..?
--চার বছরে তোর একবারও মনে পড়েনি এই কথা যে তোর নানু কেমন আছে,,?
--পড়বে না কেন..? অনেক বার নানুকে মিস করেছি। হয়তো একমাত্র মেয়েকে হারিয়ে কষ্ট পেয়েছে অনেক। কিন্তু তার পাশে তো আপনারা আছেন, মামারা আছে।
--হ্যা তা ঠিক হয়তো। কিন্তু তুই..?তোর কি কোনো রিসপ্সেবেলেটি ছিল না দাদীর প্রতি..?জানিস, এই চার বছরে দাদু তোর জন্য কত কেদেছে?কিন্তু তুইতো পুরো নিরুদ্দেশ.. কোনো খোজ নেই তোর??
-- আমি আমার আম্মুকে হারিয়েছি। সেই পরিস্থিতিতে নিজেকেই সামলাতে পারিনি, অন্যকে কিভাবে সামলাবো..?
--কিন্ত....
--ম্যাম... আমি অনেক ক্লান্ত, আজ আসি..(ওকে থামিয়ে দিয়ে)
--কোথায় যাচ্ছিস, দাদীর সাথে দেখা করবি না..?
--অন্য একদিন, আজ আসি।
কথাটা বলেই চলে আসার সময় ওর দিকে একবার ফিরে তাকালাম।
তানহা মলিন দৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়েছিল, যেন কিছু বলতে চায়..ওর দিকে তাকালে যেন ওর মায়ায় পড়া আবশ্যক।
এতটাই মায়াবী মেয়েটা।
আমি নিজেকে সামলে ওর রুম থেকে চলে আসলাম।
বেড়িয়েই দেখি সবাই আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। জাবেদ বলে একজন আমাকে প্রশ্ন করে বসল--
-কি ভাই, পুরোনো রিলেশন নাকি..?
আরেকজন বলে উঠল-
-কি বলল ভাই এতক্ষণ ম্যাম আপনাকে? আসতে না আসতেই প্রমোশন হয়ে গেছে মনে হয়..?
কথাগুলো শুনে একটা বিরক্তিকর লুক নিয়ে ওদের দিকে তাকাতেই ওরা সবাই চুপ হয়ে যায়।
তারপর ওদের পাশ কাটিয়ে আমি অফিস থেকে বেড়িয়ে আসলাম।আজ সারাদিন অফিসেই চলে গেছে। একটা রিক্সা নিয়ে সোজা বাসায় চলে আসলাম।ততক্ষণে রাত ৯টা বাজে।
রুমে ডুকেই ফ্রেশ হয়ে বিছানায় একটু বসলাম। চোখের সামনে বারবার তানহার চেহারাটা ভেসে উঠছে।
আম্মুকেও বড্ড মিস করছি আজ-মনে পড়তেই টেবিল থেকে ডায়রিটা নিয়ে আম্মুকে উদ্দেশ্য করে লিখতে লাগলাম--
আম্মু, কেমন আছো তুমি.? আমাকে কি তোমার মনে পড়ে ? তোমার মেহমেদ কে ছাড়া তুমি কিভাবে আছো আম্মু?আমি তো তোমাকে ছাড়া একটুও ভালো নেই।
জানো আম্মু, আমি না প্রায় সময়ই রাতে না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়ি। কিন্তু তোমার মতো করে কেউ বকা দিয়ে আমায় খাইয়ে দেয় না।
ঘরটা আগের মতই অগোছালো করে রাখি। কেউ তোমার মত বকবক করে আমার ঘরটা আর গুছিয়ে দেয় না।
সকাল হলে আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে কেউ আর বলে না,,"মেহমেদ, উঠ বাবা। সকাল ১০টা বাজলো তো, আর কত ঘুমাবি",,।
কেউ সকালের নাস্তাটা আর জোর করে খাইয়ে দেয় না। আমার পছন্দের খাবারগুলো আর কেউ বানিয়ে দেয় না।
আমার জন্মদিনে কেউ আর পায়েস বানিয়ে দেয় না আম্মু।তোমার মত করে কেউ আর যত্ন নেয়।
তোমায় বড্ড মিস করি আম্মু।
আমার জীবনে সবচেয়ে বড় শূন্যতা তৈরি করে তুমি কোথায় চলে গেলে আম্মু..? তুমি এতোটা সেলফিস কিকরে হতে পারলে আম্মু..?
জানো আম্মু, আমি না প্রতিটা রাতে কাদি, তোমার জন্য। বালিশটা ভিজে যায় আমার চেখের পানিতে।
কেন এমন করলে আম্মু..?কেন ছেড়ে চলে গেলে আমায়..?তুমি একটিবারও ভাবলে না, তোমায় ছাড়া আমি কিভাবে থাকবো, কিভাবে বাচবো। কে করবে আমার দেখাশুনা??
তুমি তো চলে গেলে, আর আমায় ভাসিয়ে দিয়ে গেলে কষ্টের সাগরে।
তুমি প্রায় সময় বলতে আম্মু," আমি যখন থাকবোনা , তখন বুঝবি, পৃথিবীটা কত কঠিন"..
সত্যিই আম্মু আজ বুঝতে পারছি তুমি ছাড়া পৃথিবীটা অনেক কঠিন।
জানো আম্মু, আজ না তানহাকে ৪বছর পর দেখলাম।ও আজ মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির ম্যানেজার। আমার অফিসের বস।
তোমাকে কখনো বলিনি যে, আমি ওকে ভালোবাসি। কারন ও আমাকে ভালোবাসতো না।
কিন্তু আজ যখন ও আমাকে দেখল, খুব অস্থির ভাবে আমার খোজ নিচ্ছিল। যেন আমার জন্য একটা আলাদা অনুভুতি দেখতে পেলাম ওর মধ্যে।
আমি কোনোদিন ওকে বলতে পারলাম না আমার অনুভুতির কথাটা।
হয়তো না বলাই থেকে যাবে।
আমার না আর বাচতে ইচ্ছা হয় না আম্মু। মাঝে মাঝে নিজেকে শেষ করে দিতে মন চায়। কিন্তু পারিনা।
তুমি দোয়া করো আম্মু, খুব দ্রুত যেন আমার মৃত্যু হয়। আর বাচতে ইচ্ছা করে না। খুব একা লাগে নিজেকে।
যেখানেই থাকো, ভালো থেকো আম্মু।
তোমার মেহমেদ...
হাত দিয়ে চোখের পানি মুছলাম। ডায়রিটা বন্ধ করে টেবিলে রাখতেই কলিং বেল বেজে উঠলো। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত ১১:৩৩ বাজে। এতো রাতে আবার কে এলো..
ভাবতে ভাবতে দড়জা খুলতেই ঠাসসসসসসস..
কেউ একজন স্বজোরে আমার গালে একটা থাপ্পর বসিয়ে দিল
চোখ খুলে দেখি আমার নানু সামনে দাঁড়িয়ে আছে, চোখ দিয়ে অনর্গল পানি ঝরছে, কাঁদছে আর একটা রাগী লুক নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে,
আমি তো নানু দেখে পুরাই অবাক, নানুর ঠিক পেছনে তানহা দাঁড়িয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। বোঝাই যাচ্ছে থাপ্পড় দেওয়ার বিষয়টায় সে মজা নিচ্ছে।
নানু হঠাৎ আমায় বলল--
-- কিরে ভাই এই বুড়িটার কথা কি তোর মনে পড়ে নাই একদিনও..? কেমনে তুই এমন একটা কাজ করলি..?(কাঁদতে কাঁদতে)
নানুকে দেখে আমিও নিজেকে সামলাতে পারলাম না। অজান্তেই আমার চোখ দিয়ে পানি ঝরতে লাগল, নানুকে জড়িয়ে ধরে বললাম--
-- কেমন আছ নানু..?
নানু আমায় জড়িয়ে ধরে বলল
--কেমনে ভালো থাকি, তোরা আমায় ভালো থাকতে দিলে তো..?
আমি নানুর দু গালে হাত দিয়ে বললাম,
-- কেন আমি না থাকাতে তো ভালোই হয়েছে। আমি থাকলে তো মিষ্টি খেতে পারতে না,পান ও খেতে দিতাম না তোমায়।আমি না থাকায় এই চার বছরে খেয়ে খেয়ে মোটা হয়ে গেছো একদম আর বেশ সুন্দরীও হয়ে গেছে অনেক। তা কজনের সাথে affair চলতেছে হুম..?
নানু আমার গালে আলতোভাবে হাত লাগিয়ে বলল
-- তোর মত বিএফ তো পাই নাই রে নানু, যে আমায় কথায় কথায় শাসন করতো, আমার আচল থেকে টাকা চুরি করে নিয়ে যেত, সকল গোপন কথা আমারে বলতো, পাই নি তোর মতো নানু। তোর মতো কাউকে পাই নাই। (কাঁদতে কাঁদতে)
-- আমি বিশ্বাস করি না, তোমার যা চরিত্র না জানি কয়টা ছেলের সাথে এখন affair করতেছ..? (একটু হেসে)





নানু এবার আমায় জড়িয়ে ধরে বলল
--কেমন আছিস নানু..? একি চেহারা করছস..?
নিজের একটু যত্ন নেস না তাইনা..?
-- কে বলল যত্ন নেই না? ভালোই তো আছি।
--হুম, কেমন ভালো আছিস তা তো দেখতেই আছি।(অভিমানী কন্ঠে)
-- তোমার চোখে ছানি পড়েছে বুড়ি।
কই ভালোই তো আছি,,
আমাদের কথা শুনে তানহা মুচকি মুচকি হাসছে পেছন থেকে,,হঠাৎ বলে উঠলো,,
-- আরে নানি নাতির এই প্রেম লিলা দরজার সামনে দাঁড়িয়েই হবে নাকি ভেতরে ও আসতে বলবি..?
-- ওহ সরি, ভেতরে আসুন।
-- এই মেহমেদ তুই তানহাকে আপনি করে বলছিস কেন..?ও না তোর ছোট..?( নানু)
--দাদী, ও তুমি বুঝবে না।(তানহা)
-- আমি বুঝতাম না..? তুই বুঝস তাইনা..?নিজের ছোট মামাতো বোনরে কেউ আপনি করে বলে..?
--আরে দাদী, তোমার নাতির অনেক ইগো হয়েছে বুঝলা।এখন অনেক বড় কোম্পানিতে চাকরি হয়েছে তো, তাই অহংকার বেড়ে গেছে, অহংকারে মাটিতে পাই পড়ে না।
নানু তানহার কান টেনে বলল--
-- তোকে এত পাকা পাকা কথা বলতে হবে না, আমার নাতি যেমন আমার নাতি তেমন, আমার জন্য তো সে রাজপুত্র, সাত রাজার ধন হুম।
--এই রাজপুত্রকে কতদিন নিজের আঁচলের তলায় লুকিয়ে রাখো তাও দেখবো হুম..?
--কেন..?
-- কোন একদিন কোন এক রাজ্যের রাজকন্যা এসে তোমার সাত রাজার ধন কে যেদিন কোমড় বেধে নিয়ে যাবে সেদিন কি করবে..?
( আমার রুমে ঢুকতে ঢুকতেকথাটা বলল)
--সেদিন আমার কিউট বিএফ টাকে আমি নিজেই তুলে দেব সেই রাজকন্যার হাতে।
--দেখা যাবে(একটু মুচকি হেসে)
আমি নানু কি নিয়ে রুমে ঢুকলাম, তানহা রুমে ঢুকেই বলল-
-- একি হাল করে রেখেছে ঘরটার..? ঘর তো নয় যেন স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম।
আমি নানু কি নিয়ে বিছানায় বসলাম। তানহা আমার ঘরের এদিক ওদিক তাকাচ্ছে আর বলছে-
-- তুই একটু চেঞ্জ হলি না, সেই বাচ্চাটাই রয়ে গেলি, এটা কোন ঘর.? নিজের ঘরের কেউ এই অবস্থা করে রাখে..?
আমি ওদিকে কর্ণপাত না করে নানুকে বললাম--
--কেমন আছো তুমি..? তোমার সুগার টা কেমন..? সব ভালো তো..?
আমাকে উল্টো প্রশ্ন করে বলল--
-- ভাই তোর অবস্থা এমন হইছে কেন..? একি হাল করে রাখছিস নিজের..?
-- আরে বুড়ি ভালোই তো আছি।
-- হুম সবই দেখতেছি।
-- আমার কথা ছাড়ো তো,মামা মামী কেমন আছে সেটা বল।
-- সবাই ভালো
হুট করে তানহার এসে বলল--
--এই তো রান্না ঘর কোথায়???
-- কেন??
-- বলনা কোথায়??
-- ওই যে ওই দিকে।।
তানহা রান্নাঘরে গিয়ে কি সব করছে।
আমি নানুর কোলে আলতো করে মাথা রাখলাম। নানু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। ওদিক ফিরে নানু কে প্রশ্ন করলাম ---
--নানু একটা কথা বলি..?
-- একটা কেন হাজারটা বল..?
--আমি চলে আসার পর আব্বু আমার খোঁজ নিয়েছিল..?
নানু একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল--
-- তুই চলে আসার পর একবার এসেছিল, তোর কথা জিজ্ঞেস করেছিল, তুই কেমন আছিস? কোথায় আছিস? এসব......
--তারপর??
--আমি কিছু বলতে পারিনি, কারণ তুই তো আর ছিলি না। কোথায় হারিয়ে গেলি,তোকে তো আর খুঁজে পেলাম না..
তোর আব্বু কোন উত্তর না পেয়ে চলে গেল।
--আমার সাথে কেন এমন হলো নানু? বলতে পারো? কি অপরাধ ছিল আমার?
জীবনটা এতো নিষ্প্রাণ হয়ে গেল নানু??
-- সব ভাগ্যের খেলা নানু, আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে।
তুই নতুন করে আবার জীবনটা শুরু কর।
--সম্ভব না নানু।
--সম্ভব না মানে..? তুই চাইলেই সম্ভব।(একটু রেগে গিয়ে)
-- আচ্ছা বাদ দাও,
আমাদের বাড়ির খবর কি সেটা বলো, ওটা বিক্রি করে দিয়েছো নাকি এখনো আছে..?
--বিক্রি করে দিয়েছো মানে..?
ওটা আমার মেয়ের কষ্টে গড়া বাড়ি, আমার মেয়ের কত স্বপ্ন ছিল ওই বাড়িতে তোর জন্য লাল টুকটুকে একটা বউ আনবে, কিন্তু আমার মেয়ের অকাল মৃত্যুতে সেই স্বপ্নটারও তার মৃত্যু হয়েছে। (কাদতে কাদতে)
-- তুমি আবার কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছো..?(বিরক্ত হয়ে)
--ঠিক আছে আর কাঁদবো না। (চোখের পানি মুছতে মুছতে)
বাড়ির দলিলপত্র সব আমার কাছে রেখে দিয়েছি,,
এবার বল বিয়ে কবে করবি?
--জানি না
-- জানি না মানে,? এবার তোকে বিয়ে করতেই হবে, এভাবে আর কতদিন চলবে..?
--বাদ দাও তো
-- না বাদ দেওয়া যাবে না, তোকে এভাবে একলা ছেড়ে দিয়ে আমি তো মরেও শান্তি পাব না।
আমার একমাত্র মেয়ের একমাত্র সন্তান তুই।
তোকে নিয়ে আমার মেয়ের কত স্বপ্ন ছিল..
--আমি চুপ করে নানুর কথাগুলো শুনে যাচ্ছি শুধু..
-- মেহমেদ কথা বলছিস না কেন..?
-- কি বলব..?
--বিয়ে কবে করছিস সেটা বল.কোনো মেয়ে পছন্দ করে রেখেছস..?
-- বলতে পারব না..
বুঝেছি তাহলে তোর জন্য মেয়ে দেখার দায়িত্ব আমাকেই নিতে হচ্ছে তাহলে..
নানুর মুখে কথাটা শুনে বুকের ভেতরটা যেন কেমন করে উঠলো। কারণ এই জীবনে তানহাকে ছাড়া অন্য কাউকে আমি জীবনসঙ্গী হিসেবে কল্পনা করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। জীবনের প্রথম ভালোবাসাতো সেই মেয়েটাই।
হুট করে তানহা এসে বলল
-- কার বিয়ের কথা হচ্ছে শুনি..?
-- কার আবার, আমার নাতির বিয়ের কথা হচ্ছে।(নানু)
--ও তোমার এই নাজুক বিএফ বিয়ে করবে বুঝি..?
আমি তানহা কি দেখে নানুর কোল থেকে উঠে বসলাম।
তানহা এক বাটি পায়েশ আমার দিকে দিয়ে বলল --
--এই নে তোর পছন্দের পায়েস, আমি নিজে হাতে বানিয়েছি।
আমি তো পুরাই অবাক তারমানে তানহা রান্নাঘরে গিয়ে আমার জন্য পায়েস বানিয়ে এনেছে।
আমি অবাক হয়ে প্রশ্ন করলাম--
-- এসবের কি প্রয়োজন ছিল..?
নানু আমায় বলল--
--ঘড়িতে কয়টা বাজে..?
আমি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললাম--
--বারোটা..
ঠিক তখন তানহা আমায় বলল--
-- হ্যাপি বার্থডে টু ইউ & মেনি মেনি হ্যাপি রিটার্নস অব দ্যা ডে...
আমি অবাক হই নানুর দিকে তাকাতেই নানু আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে বলল--
--আমার মাথায় যত চুল আছে ততগুলো বছর যেন আল্লাহ তোকে বাঁচিয়ে রাখেন নানু
আমি নানুর গালের সাথে নিজের গালটা লাগিয়ে বললাম--
-- থ্যাঙ্ক ইউ মাই বিউটিফুল জিএফ
তানহা কি বললাম --
--থ্যাংকস টু ইউ..
তানহা মুচকি হেসে বলল
-- মোস্ট ওয়েলকাম
মেয়েটা একটু হাসলে এত সুন্দর লাগে চোখ ফেরানোই দায়।আজ তানহা কি অনেক সুন্দর লাগছে,
একটা নীল শাড়ি পরে এসেছে, কপালে একটা নীল টিপ, হাত ভরা কাচের চুরি,, কানে দুটো ঝুমকো, এক কথায় আকাশ থেকে নেমে আসা ডানা কাটা পরি।
গল্প করতে করতে রাত একটা বেজে গেল, নানুকে এবার বললাম--
--নানু, বাড়ি যাও অনেক রাত হয়েছে, তোমার তোমার রাত্রি জাগা মানা
-- আরেকটু থাকি না নানু।
--একদম না আবার কালকে এসো.
তানহা একটু খোঁচা মেরে বলল--
--আরে দাদি কে বলতে পারে আমাদেরকে তাড়িয়ে দিয়ে তোমার নাতি রাতভর কার সাথে ফোনে গল্প করবে..
আমি ওর কথার কোন উত্তর না দিয়ে শুধু একটু মমুচকি হাসলাম।
নানু কে বললাম--
-- চলো তোমাদের এগিয়ে দিয়ে আসি।
বাইরে গিয়ে দেখি তানহা গাড়ি নিয়ে এসছে। নানুকে গাড়িতে উঠে দিয়ে তানহাকে বললাম--
--একটি অসাধারণ মুহূর্ত দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে। অনেকদিন পর আজকে একটু হাসলাম।আমার ততো মনেই ছিল না আজকে আমার জন্মদিন।থ্যাংকস ফর এভরিথিং...
তানহা শুধু মুচকি মুচকি হাসছে। বারবার ওই হাসির মায়ায় পড়ে আমি যেন আবার ওর প্রেমে পড়তে লাগলাম। ওর হাসিটা এত সুন্দর যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।
--কাল সময় মত অফিস পৌঁছে যাবি বুঝেছিস।
--(আমি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললাম)
তারপর তানহা গাড়িতে উঠে চলে গেল। আমি রুমে এসে ঘুমিয়ে পড়লাম। এক ঘুমে রাত পার করে দিয়ে সকাল 9 টায় ঘুম ভাঙলো। উঠে ফ্রেশ হয়ে প্যান্ট শার্ট পড়ে রেডি হয়ে নিলাম অফিস যাওয়ার জন্য। হঠাৎ আমার নজর গেল টেবিলের ওপর,
আমার ডায়েরী টা নেই,টেনশনে আমার মাথা কাজ করছে না।।
বিছানা,ওয়্যারড্রব,রান্নাঘর সব জায়গায় খুজলাম,
কোথাও পেলাম না।
এখন খুব বেশী টেনশনে পড়ে গেলাম।
আমার জীবনের সব অনুভুতি, পছন্দ অপছন্দ, সব গোপনীয় কথা ওই ডায়রিতে লিপিবদ্ধ করা আছে।
এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠলো..
দড়জা খুলেই দেখি ঐশী....
চলবে.....

Post a Comment

0 Comments