মামাতো_বোন_যখন_অফিসের_বস..♥, Part..15

তানহার বিয়ের খবর টা যেন আমার পৃথিবীটাকে উলটপালট করে দিয়েছে। ভাবতেই পারছিনা তানহাকে আমি চিরতরে হারিয়ে ফেলেছি।
হঠাৎ কলিংবেলের শব্দে আমার ঘুমটা ভেঙে গেল। উঠে গিয়ে দরজাটা খুলি।
খুলতেই দেখি তানহা দাঁড়িয়ে আছে.....








--গুড মর্নিং..
কিরে তোর নাকি ঘুম হয় না?
আর বেলা দশটা পর্যন্ত এখনো ঘুমোচ্ছিস?? আজব তো.
ওর কথা শুনে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি সত্যি সত্যি দশটা বাজে।
--ওহ, সরি।
আসলে ভোররাতে চোখটা লেগে এসেছিল।
--ভোর রাতে চোখটা লেগে এসেছিল মানে?
তুই সারারাত ঘুমাসনি..?
--আসলে ঘুম আসছিল না.
--ঘুম আসে না কেন?
তোর কি হয়েছে রে?
কিভাবে তোমায় বলব তানহা, তুমিই আমার এই নিদ্রাহীনতার কারণ। একমাত্র তুমি।
--কিরে কথা বল.
তুই ঘুমাস না কেন?
-- বলতে পারবো না.
আচ্ছা.
আমি অফিসের জন্য জলদি রেডী হয়ে নিচ্ছি।
--হ্যাঁ. রেডি হয়ে নে.
তবে অফিসের জন্য নয়।
-- মানে.?
-- আজকে অফিস যাব না.
--তাহলে কোথায় যাবো আজকে?
--- আজকে কোথায় যাব মানে?
তোকে কালকে বলেছিলাম না, অফিস থেকে বের হওয়ার সময় আমার সাথে দেখা করে যাবি।
তুই গেলিনা কেন?
-- আসলে মনে ছিল না.
-- মনে ছিল না.
বুদ্ধ যেন কোথাকার।
তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে।
--কিন্তু যাবো কোথায়?
--উফফ,,,,
তুই না বেশি প্রশ্ন করিস?
কালকে তোকে বলেছিলাম না বিয়ের আর 6 দিন বাকি।
বিয়ের শপিং করতে হবে না?
-- মানে?
--তোকে বলেছিলাম না আমার শপিং তুই করে দিবি. আমার সবকিছু তুই চয়েজ করে দিবি.
--আসলে ম্যাম.
আমার ভাল লাগছে না আজকে।
প্লিজ অন্য দিন।
--একদম না.
আজকেই তুই আমার সাথে যাবি।
--কিন্তু.....
--কোন কিন্তু না...
আচ্ছা বিয়ের কার্ড টা দেখেছিস?
--জি দেখেছি.
নামটা সুন্দর না?
--হ্যা,,
খুব সুন্দর।
( মিথ্যে কথা। আসলে আমি বিয়ের কার্ডটা ছুয়েও দেখিনি.)
--আর তুই তো ছেলেটাকে দেখিস নি এখনও.
সেদিন তোকে ফটোটা দেখাতে চেয়েছিলাম কিন্তু তুই চলে এলি।
দাঁড়া তোকে ছেলের ছবিটা দেখাচ্ছি।
কথাটা বলেই তানহা ওর ব্যাগ থেকে একটা ছবি বের করল। তারপর আমার সামনে ধরল।
দেখলাম প্যান্ট শার্ট পড়া একটি লম্বা ছেলের ছবি। দেখতে খারাপ নয়। ভালোই।
--হ্যান্ডসাম না ছেলেটা?
তাই দেখেই আমার পছন্দ হয়ে গেছে।
-- হ্যাঁ..
আপনার সাথে খুব মানাবে ওকে।
তারপর ছবিটা ওর ব্যাগে রেখে আমায় বলল--
-- এবার যা.
তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নে।
আমি এখানে অপেক্ষা করছি।
কথাটা বলেই ও বিছানার উপর ঝাপটি মেরে বসে রইল। কি আর করার। ও যা জেদি মেয়ে, আমার কোন কথা শুনবে না।
যদিও ওর সাথে যেতে ইচ্ছে করছিল না কিন্তু যেতে হবে। ওর সুখের জন্য, ওর আনন্দের জন্য।
কি ভাগ্য আমার?
যাকে ভালোবাসে বিয়ে করবো ভেবেছিলাম, আজ তার বিয়ের শপিং-এ যেতে হচ্ছে আমাকে। বাধ্য হয়ে।
কিন্তু তাঁর বিয়েটা আমার সাথে হচ্ছে না।
হঠাৎ আমার দিকে মুখ ফিরিয়ে বলল--
-- তুই এখনো দাঁড়িয়ে আছিস?
তোকে যেতে বলেছি না??
তাড়াতাড়ি যা শপিং করব।
আমার কিন্তু দেরি হয়ে যাচ্ছে এবার।
--আচ্ছা.
যাচ্ছি।
তারপর কথাটা বলে ফ্রেশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। ফ্রেশ হয়ে বাইরে এসে দেখি তানহা আমার জন্য ব্রেকফাস্ট তৈরী করেছে।
-- এসব কি.?( অবাক হয়ে)
--এসব আমার মাথা আর কলিজা.
দেখতে পাচ্ছিস না এটা ব্রেকফাস্ট।
--কিন্তু.....
-- কিন্তু কি হা কিন্তু কি???
আমি বানিয়েছি।
কেন? আমার হাতে ব্রেকফাস্ট পছন্দ না?
আমি জানি তো সকাল বেলা না খেয়েই তুই বেরিয়ে পড়িস।
তাই তোর জন্য ব্রেকফাস্টটা বানিয়ে নিলাম।
এবার খেয়ে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে।
আমি ওর কথা শুনে ওর দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছি।
কেন এমন করলে তানহা?
কেন আমায় ছেড়ে চলে গেলে? তোমার মত কে আমাকে এতটা যত্ন করে খাওয়াবে?
কে আমার এত এতটা কেয়ার রাখবে?
কে আমাকে ভালোবাসে খাইয়ে দেবে? কি আমার প্রত্যেকটা পছন্দ-অপছন্দের খেয়াল রাখবে?
কে রাখবে না তানহা? কেউ না?
তুমি কেন বুঝতে পারোনি আমার মনের কথাটা?
তুমি কেন আমার ভালোবাসাকে অনুভব করতে পারোনি? আমার কষ্ট গুলো কেন তুমি বুঝতে পারলে না তানহা?
ওর সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে অনেকটা অসহায় লাগছে আজকে। আগে ওর বকাবকি আমার কাছে অনেক ভাল লাগত। ওর শাসন আমার হৃদয়ে আনন্দ দিত।
মনে হতো ওর চেয়ে কাছের বোধহয় আমার জীবনে আর কেউ নেই।
কিন্তু এখন ওই বকাবকি আমার হৃদয়ে হতাশার সৃষ্টি করে। কালো মেঘ জমিয়ে দেয়। মনে হয় দুদিনের জন্য মরীচিকা হয়ে এসেছে তানহা আমার জন্য।
আবার শূন্যে মিশে যাবে।
অনেকক্ষণ আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তানহা বলল----
-- বুঝেছি.
আমার ব্রেকফাস্ট তোর পছন্দ হয়নি।
ঠিক আছে, ফেলে দিচ্ছি।
কথাটা বলেই ব্রেকফাস্ট গুলো হাতে নিল।
-- আরে,
কি করছেন। রাখুন।
কখন বলেছি আপনার বেকফাস্ট আমার পছন্দ নয়?
-- তাহলে মূর্তির মত এতক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি সব ভাবছিলি?
-- কিছু না.
দাঁড়ান মাথাটা একটু মুছে নেই।
কথাটা বলেই আলনা থেকে তোয়ালে নিতে গেলাম। ঠিক তখনই কিছু একটার সাথে হাতটা লেগে একটু কেটে গেল। আর একটু আওয়াজ দিয়ে উঠলাম।
-- কিরে.
কি হল তোর?
-- হাতটা একটু কেটে গেছে....(আঙুল ধরে)
-- মেহমেদ..
তুই এতটা বেখেয়ালি না।
একটু দেখে কাজ করবি না।
তারপর একটা কাপড় ছিড়ে আমার হাতটা বেঁধে দিল।
-- তোয়ালাটা আমার কাছে দে।
আমি তোর মাথা না মুছে দিচ্ছি।
কথাটা বলেই আমার হাত থেকে তোয়ালেটা নিয়ে নিল। তারপর খাটের উপর উঠে আমার মাথাটা মুছে দিচ্ছে।
আমি একটু লম্বা বলে ওর হাত নাকি আমার মাথায় যায় না।
আগে যখন আমার মাথা মুছে দিয়েছিল তখন ওর দিকে শুধু তাকিয়ে ছিলাম। খুব আপন মনে হয়েছিল তখন।
কিন্তু এখন ওর মাঝে আর আমার মাঝে যেন কত দূরত্ব সৃষ্টি হয়ে গেছে। কতটা পরপর লাগছে ওকে আজ।
মনে হচ্ছে, ওতো আজি আছে কালি আবার অন্য কারো হাত ধরে চলে যাবে। অজানা কোন পথে, নতুন কোন জীবনে প্রবেশ করবে তানহা।
আমি মাথা নিচু করে আছি। ওর দিকে তাকাতে সংকোচ লাগছে আমার।
এরপর আমার মাথাটা মুছে দিয়ে ও বলল---
-- নে মাথা মুছে দিয়েছি.
এবার ব্রেকফাস্ট করে নে।
-- আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললাম.
-- মাথা নাড়াচ্ছিস কেন শুনি?( চোখ রাঙিয়ে)
কথাটা শুনেই আমি ওর দিকে তাকালাম।
--মানে...?
--মানে তোর যে হাত কেটে গেছে সে খেয়াল আছে.
সে হাত দিয়ে খাবি কিভাবে শুনি?
--ওহ,,
আমার তো খেয়ালই ছিল না?
--থাকবে কিভাবে।।
নিশ্চয়ই কোন মেয়েকে পছন্দ হয়েছে?
সারাদিন সারাক্ষণ শুধু সেই মেয়ের কথা ভাবছিস।( একটু মুচকি হেসে)
ওর কথা শুনে মনটা আরও খারাপ হয়ে গেলো। কে আছে আমার জীবনে তানহা তুমি ছাড়া?
তোমায় ছাড়া আমি আর কাকে ভালোবেসেছি? কাউকে না?
--এখানে আয়.
বস।












তারপর আমাকে জোর করে বসিয়ে নিজ হাতে খাইয়ে দিল তানহা। ও আমায় খাইয়ে দিচ্ছি আর আমি শুধু ওর দিকে তাকিয়ে আছি.
কেন আমায় এতটা মায়ায় জড়াচ্ছো তানহা। যে মায়া আমি কোনদিন কাটিয়ে উঠতে পারবো না, সে মায়ায় আমাকে কেন জড়াচ্ছো?
কষ্ট হবে তানহা। তোমাকে হারিয়ে অনেক কষ্ট হবে আমার।
এরপর আমাকে খাইয়ে দিয়ে বলল---
-- নে এবার রেডি হয়ে নে.
তাড়াতাড়ি।।।
তারপর আমি দেরি না করে রেডি হয়ে নিলাম। তারপর তানহা আর আমি গাড়িতে করে একটা বড় শপিং মলে গেলাম।
শপিং মলে ঢুকেই একটা বড় ক্লথ স্টোরে চলে গেলাম। সেখানে গিয়ে তো আমি পুরাই অবাক। সেখানে মামা, মামি, ছোট মামা, ছোট মামি, নানু, ছোট ভাই বোনেরা সবাই আছে।
হয়তো তানহার বিয়ের শপিং করতে এসছে সবাই। আমাকে দেখেই বড় মামি বলল----
-- এসেছিস বাবা.
সে কখন তানহাকে পাঠিয়েছি তোকে আনার জন্য।
আর মেয়েটা তোকে নিয়ে এখন এলো।
-- না মামী.
আসলে আমার দেরি হয়ে গেছিল।
-- আচ্ছা.
এখানে বস।
আচ্ছা ওই শেরওয়ানি টা দেখান তো (দোকানদারকে বলল মামি)
তারপর দোকানদার একটা শেরওয়ানি মামীর হাতে দিলো। মামি ওই শেরওয়ানি টা আমার গায়ের সাথে মিলিয়ে দেখছে ঠিক আছে কিনা।
-- কি করছো মামি.
শেরওয়ানি আমার গায়ের সাথে মিলাচ্ছো কেনো?
-- ছেলেটার ছবি দেখিস নি?
--হুম,
--তোর মতই লম্বা-চুরা.
তোর মতই রোগাসোগা।
ছেলে তো এখন আমেরিকায়।
কিন্তু ছেলেকে একটা শেরওয়ানি দিতে হবে না। তাই তোর মাপেই কিনছি.
দেখি দেখি, একটু ঘোরতো।
মামী আমার মাপেই সোরোয়ানিটা কিনল।
কি ভাগ্য আমার। যাকে ভালোবাসি, যাকে ভালোবাসলাম।
তার হবু বরের শেরওয়ানি টা আমার মাপেই কিনতে হল। অথচ আমার এই শেরওয়ানি টা পড়ার কত ইচ্ছে ছিল।
তানহাকে বিয়ে করবো বলে। সবই এখন মরীচিকা হয়ে গেছে আমার কাছে।
--আচ্ছা,
তানহার বরের ছবি দেখেছিস?( মামী)
-- হ্যাঁ দেখেছি.
-- কেমন হয়েছে ছেলেটা.
তানহার সাথে মানাবে না??
--হ্যাঁ মামী.
খুব মানাবে।
--আমি জানতাম.
তানহা ওই ছেলেটাকে পছন্দ করবেই।
আমি মাথা নীচু করে আছি।
এরপর তানহা আমায় ডেকে নিল।
-- এই মেহমেদ.
এখানে আয়তো একটু।
আমি ওর কাছে গিয়ে বললাম --
--জ্বি বলুন.
-- আচ্ছা.
কোন শাড়িটা নেই বলতো?(আমাকে অনেকগুলো শাড়ি দেখিয়ে)
-- আপনার পছন্দমত একটা নিন না.
--আশ্চর্য তুই বলনা.
কোন শাড়িটা নেব,
লালটা না নীলটা??
আমি ওর হাতে লাল শাড়িটা তুলে দিলাম, বললাম-
--এই লাল শাড়িতে আপনাকে খুব মানাবে.
তানহা অবাক হয়ে বলল --
--লাল শাড়ি...?
কিন্তু তোর নীল শাড়ি পছন্দ।
আমার বউ করবো বলে তোমাকে নীল শাড়িতে দেখার খুব ইচ্ছে ছিল তানহা,
কিন্তু আমার এই পছন্দের আর কোনো মানেই হয় না।
-- আসলে মেয়েদেরকে বিয়ের সময় লাল শাড়িতেই ভালো লাগে।
আমি তো এমনি বলেছিলাম সেদিন।
--আচ্ছা.
ঠিক আছে, তাহলে এটাই নেই বল।
-- জি...
-- আচ্ছা ভাই.
এই লাল শাড়িটা প্যাক করে দিন।( তানহা দোকানদারকে বলল)
এরপর তানহা আমাকে জুয়েলারি দোকানে নিয়ে গেল। ওর পছন্দ মতো কয়েকটি গয়না কিনলো।
অবশ্য আমার পছন্দের কথা জিজ্ঞেস করেছিল। আমি হ্যাঁ না এর মধ্যে উত্তর দিয়ে দিয়েছিলাম ব্যাস,,,,,
শপিং করা শেষ হলে আমরা পুরো ফ্যামিলি মিলে একটি বড় রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসলাম।
শপিং করতে করতে দুপুর হয়ে গেছিল। তাই দুপুরের লাঞ্চটা আমরা সবাই রেস্টুরেন্টে করব। সবাই একটি বড় ডাইনিং টেবিলে বসলো।
আমি গিয়ে নানুর পাশে বসলাম। চুপ করে বসে রইলাম। কোন কথা বললাম না।
-- কিরে মেহমেদ.
এত চুপচাপ কেন? (ছোট মামা)
-- আমার তো মনে হয়, কোন মেয়েকে ওর মনে ধরেছে,,,,,,
সারাক্ষণ ওর কথা ভাবছে দেখছো না?
আসার পর থেকে স্যার কেমন চুপচাপ রয়েছে (ছোট মামী)
--মেহমেদ বাবা...
সকালে নাস্তা করেছিস? (বড় মামি)
--হ্যাঁ..
আমি করেছি।
-- করবে না মানে.
নিজে হাতে জোর করে খাইয়ে দিয়ে এসেছি।
জানো, ও না সকালে প্রায় সময় নাস্তা করে না।
বুদ্ধ একটা....( তানহা)
--এই খবরদার,,,,
আমার নাতিকে একটাও খারাপ কথা বলবি না।
আমার মেহমেদ এর মত লক্ষী ছেলে এ পৃথিবীতে দ্বিতীয় একটা আছে নাকি? (নানু)
-- উরে বাবা,,,,,
কেন দাদী?
তোমার নাতি কি সোনা দিয়ে মোড়ানো?
-- সোনা নয় সোনা নয়.
হীরা দিয়ে মোরানো আমার মেহমেদ। হীরার টুকরা নাতি আমার। (আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে)
--দেখো দাদি....
এই হিরা আবার চুরি না হয়ে যায়?
কথাটা শুনেই সবাই হাসাহাসি করতে লাগল। আমি চুপচাপ বসে রয়েছি।
নানু আমায় চুপচাপ বসে থাকতে দেখে প্রশ্ন করল---
-- কিরে মেহমেদ...
এত চুপ কেন নানু,,,,,?
মন খারাপ নাকি?
-- না নানু,
এমনি।
-- সেই তখন থেকে দেখছি তোকে চুপ করে বসে থাকতে.
কথা বলছিস না।
কি হয়েছে,?
--কিছু না নানু???
এমনি কথা বলতে ইচ্ছে করছে না।
এরপর ওয়েটার খাবার নিয়ে এলো। বড় মামী সবাইকে খাবার সার্ভ করছে। সবাই খাচ্ছে।
কিন্তু আমার একটুও খেতে ইচ্ছে করছিল না। আসলে মানুষের মন যখন কালো মেঘে ছেয়ে যায়, মানুষের বাহ্যিক চাহিদাটুকু কমে যায় তখন।
আমি খাচ্ছি না দেখে নানু আমায় বলল ---
--কিরে মেহমেদ...
খাচ্ছিস না কেন?
-- ইচ্ছে করছে না.
--কেন.?
এটা আবার কেমন কথা?
--কলতে ইচ্ছে করছে না নানু।
-- আচ্ছা দাঁড়া.
আমি তোকে খাইয়ে দিচ্ছি।
-- প্রয়োজন নেই নানু...
আমি খেয়ে নেব।
-- কোন কথা নয়.
চুপ করে বসে থাক।
আমি খাইয়ে দিচ্ছি।
এরপর নানু আমায় জোর করে খাইয়ে দিল। তানহা দেখে ছোট মামাকে বলল ------
--দেখেছো চাচ্চু...
কচি খোকা একটা, নিজে হাতে খেতে পারে না।
উনাকে খাইয়ে দিতে হয়..
--তের এত গায়ে ফোসকা পড়ছে কেন শুনি,,,
হিংসুটে কোথাকার...(ছোট মামী)
--তুমিও ওদের দলে ভিড়লে চাচী??(তানহা)
--তানহা তোকে দুগালে দুটো থাপ্পর বসিয়ে দেবো...
ও আমার হাতে খাচ্ছে বলে তোর এত হিংসে হচ্ছে কেন..( নানু)
--হিংসা হবে না কেন..?
আমার তো দুদিন পরে বিয়ে হয়ে যাচ্ছে।
যদি আদর করে খাইয়ে দিতে হয় তাহলে আমাকে দেবে। ওকে দিচ্ছ কেন?????
--আহ.. তানহা চুপ করে খা তো.
খাওয়ার সময় এত বেশি কথা বলতে নেই।( বড় মামি)
--মেয়ের কত হিংসে দেখেছো??(বড় মামা)
--একদম লাল মরিচ,
হিংসুটে কোথাকার.. (ছোটমামা)
--শোন তানহা,,,,,
আমার মেহমেদ এর জায়গা আর তোর জায়গা আমার কাছে কখনোই এক নয়, বুঝলি??
আমার নাতি আমার কাছে সবচেয়ে বেশি। সবার উপরে।
ওর সাথে তুই নিজের তুলনা করছিস কেন, হুম???
-- নানী-নাতির ঢং দেখে আর বাঁচি না।(মুখ ভেঙিয়ে)
সবাই হাসাহাসি করতে শুরু করল। সবাই একটা আনন্দময় পরিবেশ এর মধ্যে আছে তানহার বিয়ে উপলক্ষে।
কিন্তু আমার মধ্যে যেন কোন আনন্দই কাজ করছে না। আমার মাঝে এখন শুধু নিশ্চুপ নিরবতা।
আমার ভেতরটা যেন গভীর অন্ধকারে ডুবে গেছে। তিমিরে ঢাকা পড়ে গেছে আমার এ হৃদয়টা।
এরপর খাওয়া শেষ করে সবাই শপিং মল থেকে বেরিয়ে এলাম।
-- আচ্ছা নানু...
এবার আমি আসি,
-- কোথায় যাচ্ছিস..?
-- নানু বাড়িতে যাব.
-- আশ্চর্য..
একদম না।
এখন আমাদের সাথে যাবি?
-- কোথায় যাবো?
--কোথায় যাবি মানে?
বাড়িতে।
বিয়ের কত কাজ আছে বলতো?
-- না নানু,
আরেক দিন।
আজ ভালো লাগছে না।
নানু আমাকে খুব জোর করলো উনাদের সাথে বাড়িতে যেতে। কিন্তু আমি নানু কে এক প্রকার বুঝিয়ে-সুজিয়েচলে এলাম।
আমার এই হতাশাগ্রস্থ মুহূর্ত আর এই ব্যর্থ হৃদয়টা নিয়ে দেখতে দেখতে চার দিন পার করে দিলাম।
আজ তানহার গায়ে হলুদ। সকাল থেকে আমাকে ফোন করছে ও বাড়িতে যেতে। কিন্তু যাকে ভালোবাসি সে অন্য কারো হয়ে যাচ্ছে,
তার গায়ে হলুদে আমি কিভাবে যাই?
কিভাবে এ হৃদয়কে সামলাবো সেটাই বুঝতে পারছি না?
চলবে....

Post a Comment

0 Comments