মামাতো_বোন_যখন_অফিসের_বস..♥, Part...16

আজ তানহার গায়ে হলুদ। সকাল থেকে আমাকে ফোন করছে ও বাড়িতে যেতে। কিন্তু যাকে ভালোবাসি সে অন্য কারো হয়ে যাচ্ছে,










তার গায়ে হলুদে আমি কিভাবে যাই?
কিভাবে হৃদয়কে সামলাবো সেটাই বুঝতে পারছি না?
অনেক চিন্তা করলাম, কোথাও চলে যাব কি না? কিন্তু এভাবে কোথাও চলে গেলে নিজের কষ্ট থেকে তো আর দূরে পালাতে পারবে না।
নিজের কষ্ট গুলো তো আমার কাছেই থেকে যাবে। সে তো আর কোথাও যাবে না। তাই কোথাও চলে গিয়ে কোন লাভ নেই।
তাছাড়া নানু, মামা, মামি উনারা কি ভাববেন?
এখন দুপুর তিনটা বাজে। সেই সকাল থেকে আমাকে শুধু ফোন করেই যাচ্ছে। আমি কেন যাচ্ছি না?
কিন্তু আমার না যাবার কারন টা কেউ বুঝতে চাইলো না । বুঝতে পারছেও না।
হঠাৎ করে কলিং বেল বেজে উঠলো. আমি বিছানা থেকে উঠে গিয়ে দরজা খুললাম. খুলেই কিছুটা বিস্মিত হলাম.
বাড়িওয়ালার মেয়ে ঐশী ----
--আসসালামু আলাইকুম, মিস্টার মেহমেদ।
কেমন আছেন?
-- জ্বি ভালো আছি.
আপনি কেমন আছেন?
--ভালো.
কি ব্যাপার আপনার চোখ মুখ কেমন যেন লাগছে।
-- অমন কিছু না।
আসেন ভিতরে আসেন।
-- না আজ আর আসবো না.
একদম সময় নেই।
আসলে সিঙ্গাপুর যাচ্ছি। আমি আর আমার হাজব্যান্ড।
হানিমুনে....
তো ভাবলাম আব্বু আম্মুর সাথে একটু দেখা করে যাই।
--আপনার হাজব্যান্ড কেমন আছে?
-- জ্বী ভালো.
আপনি যেভাবে আমাদেরকে সাহায্য করেছেন, তা ভুলার নয়। জানি না এ ঋণ কিভাবে শোধ করবো।
--ও আর এমন কিছু না.
এটা তো আমার মানবিক দায়িত্ব ছিল।
--যাইহোক আজ তাহলে আসি.
আবার দেখা হবে,,,
-- জি অবশ্যই...
কথাটা বলেই ঐশী চলে গেল। আমি আমার দরজা লাগিয়ে বিছানায় মাথা দিয়ে দিলাম। ভালো লাগছে না। কিছু খুব কান্না পাচ্ছে। হৃদয় ভেঙ্গে গেছে আমার। কি করব বুঝতে পারছি না।
আমি আমি কি স্বপ্ন দেখছি?
তাননহা কি সত্যি সত্যি আমার জীবন থেকে চলে যাচ্ছে?
ভাবতে পারছি না, আর ভাবতে পারছি না আমি।
আমার হৃদয় এখন মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। এসব কথা ভাবতে ভাবতেই চোখের কোনে পানি চলে এলো। চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরতে লাগলো।
কেউ দেখছে না, আমার এই কষ্ট গুলো দেখার কেউ নেই।
হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো। জানি ও বাড়ি থেকে কেউ ফোন করেছে। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি নানু কল দিয়েছে। রিসিভ করতেই বকাবকি শুরু করে দিল---
-- মেহমেদ.
তোর কোন সাধারণ জ্ঞান বলতে কিছু আছে?
সেই সকাল থেকে তোকে বলছি এখানে আসতে অথচ তুই বিকেল তিনটা গড়িয়ে পড়ল এখনো আসলি না?
কোথায় তুই?
-- এই তো নানু,,,,
বাড়িতে, আসছি এখনই।
-- কি আসছি এখনই...?
তাড়াতাড়ি আয় নানু,
এখানে সবাই অপেক্ষা করছে তোর জন্য।
-- হ্যাঁ নানু... এখনই আসছি.
ফোনটা কেটে দিয়ে চোখের পানি গুলো মুছে নিলাম হাত দিয়ে। তারপর কাপড় গুলো চেঞ্জ করে বিয়ে বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
বাড়ির সামনে নামতেই দেখলাম খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে বাড়িটা।
তবে নানুর বাড়িতে নয়, আম্মুর বাড়িতে। মানে আমার বাড়িতে সাজানো হয়েছে।
বাড়ির ভিতরে ঢুকতেই ছোট মামা আমায় দেখে বকাবকি শুরু করে দিল----
-- মেহমেদ,
কোথায় ছিলি তুই এতক্ষণ?
তোকে সকাল থেকে ফোন করতে করতে আমার ফোনের বারোটা বাজিয়ে ফেলেছি।
দেখ, আমার ফোন এখন কথা বলছে না।
সব তোর কারনে। দে এখন একটা ফোন কিনে???
ছোটমামা আগে থেকেই একটু রসিক স্বভাবের। সব সময় মজা করতে পছন্দ করে।
আমি একটু হেসে বললাম---
-- মামা এখন তোমার মজা করতে ইচ্ছে করছে?
-- আরে তুই তো একটা বেকুব...
বিয়ে বাড়িতে মজা করবো না নয়তো কি হাত পা ছড়িয়ে কাঁদবো নাকি, পাগল।
যা ভিতরে যা,
ভাইজান তোকে খুঁজছে।
গেলেই বকা খাবি, যা ঠেলা সামলা।
তারপর বাড়ির ভিতরে ঢুকলাম। বাড়ির ভিতরে ঢুকেই দেখি বড় মামি, ছোটমামী, নানু এবং ছোট বোনেরা কাঁচা হলুদ বাটছে।
এবং আরো অনেক কিছু গায়ে হলুদের জন্য যা প্রয়োজন হয় আরকি, ও সব গোছগাছ করছে। কিছু বয়স্ক মহিলারা সুরে সুরে গায়ে হলুদের গানও গাইছে দেখছি।
গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে তেমন কোন মানুষকে আমন্ত্রণ করা হয়নি দেখছি। খুব কম লোকজন।
অফিসের কর্মচারী এবং নিকট আত্মীয় স্বজন ছাড়া আউটসাইড এর বেশি লোক কে ইনভাইট করা হয়নি। তবে পুরো বাড়িটা মানুষের হাসা হাসি আর আনন্দে মুখরিত হয়ে আছে।
বিয়ে বাড়ি বলে কথা।
হঠাৎ নানু আমায় দেখে উঠে এলো। এসেই আবার বকাবকি শুরু করে দিল-----
-- কিরে..
এখন সময় হল আসতে।
তোকে সেই সকাল থেকে তলব করছি, তোর কোন পাত্তাই নেই।
সত্যি তোর কোনো কান্ডজ্ঞান নেই।
একদম দায়িত্বহীন হয়ে গেছিস তুই।
-- নানু.
ভালো লাগছে না একদম।
আর বকাবকি করো না তো।
( নানুর গলা জড়িয়ে ধরে)
--না বকাবকি করবে না...
এরকম কাণ্ডজ্ঞানহীন হলে চলে।
ছাড়তো আমার গলা ছাড়,,, ভালো লাগছে না।
--এরকম করছ কেন?
--এরকম করবে না,,,
সেই সকাল থেকে তোকে ডাকছি আর তুই এখন এসেছিস।
--এসেছি তো...
এবার থামো,,,,,
হঠাৎ বড় মামী এসে বলল----
-- আহ মা....
ছেলেটা কে আর বকবেন না তো।
ওখানে হলুদ বাটা হয়ে গেছে,
কিভাবে কি করতে হবে আপনি কি গিয়ে একটু দেখুন।
ওরা সবটা সামলাতে পারছে না।
এরপর নানু চলে গেল, মামি আমায় বলল ----
--হ্যাঁ রে বাবা...
কি হয়েছে তোর?
সকাল থেকে তোকে ফোন করা হচ্ছে আর তুই এখন এলি কেন????
--মামী তুমি আবার শুরু করে দিও না.
শরীরটা ভাল লাগছিলো না।
তাই আসতে একটু দেরি হয়েছে।
--সেকি কথা...
জ্বর হয়েছে নাকি দেখি দেখি,,,,,
(আমার কপালে হাত দিয়ে)
-- না না....
জ্বর হয়নি,,,, এমনি।
--আচ্ছা ঠিক আছে...
এখানে বস।
তোর বড় মামা এখনি চলে আসবে।
কথাটা বলেই মামী ও চলে গেল। ওদের সাথে হাত মেলাতে।
সোফায় গিয়ে বসতেই ছোট ভাই বোনেরা এসে আমার কাছে বসে কিছুক্ষণ গল্পগুজব করল। তারপর আবার চলে গেল।
আমি একাই বসে আছি। একটুও ভালো লাগছে না। মনটা বড্ড খারাপ। তার ওপরে এখানে এসে আরো খারাপ লাগছে।
যেন কেউ একাকিত্বের বোঝা আমার মাথায় জোর করে চাপিয়ে দিয়েছে। মনের ভেতর শুধুই অশান্তির তোলপাড় শুরু হয়েছে।
কিছুক্ষণ পর বড় মামা এসে আমার সামনে দণ্ডায়মান হলেন। চেহারা দেখেই বুঝতে পারছি বকা খাওয়া নিশ্চিত। যা রাগি মানুষ তিনি।
--কি ব্যাপারটা কি??
তোকে সেই সকাল থেকে ফোন দাওয়া হচ্ছে আর তোর এখন আসার সময় হল??
-- আসলে মামা শরীরটা ভালো লাগছিলো না,
তাই শুয়ে ছিলাম। (মাথা নিচু ককরে)
--শরীর তো ভালো লাগবেই না,
ঠিকমতো খাস না, ঘুমাস না।
শরীরটা ভালো লাগবে কি করে বল।
তা সকাল পর্যন্ত খেয়েছিস কিছু? নাকি রোজা রেখেছিস এই পর্যন্ত??
-- না মামা...












খেয়েছি।
--আচ্ছা..
কিছুক্ষণ পর তানহার গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হবে।
কোথাও যাস না কিন্তু। বোঝা গেছে?
--জি মামা...
কথাটা বলেই মামা চলে গেল। সবাই খুব ব্যস্ত। ছোটমামা আর বড় মামা চলে গেলেন কালকের বিয়ের অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে।
আর মামীরা তো ব্যস্তই।
কিছুক্ষণ পর দেখলাম মিস শায়লা খুব সুন্দর ভাবে সেজেগুজে এলেন। আমাকে দেখেই বললেন --
--হ্যালো মিস্টার মেহেমেদ,,,
কখন এলেন??
-- জ্বী এখনি এসেছি.
তা আপনি একা কেন?
আফসার ভাই কোথায়?
--আপনি তো আশ্চর্য রকমের প্রশ্ন করছেন ?
মিস্টার আফসার কোথায় সেটা আমি কি করে বলব?
-- তাও ঠিক.
--তা মিস্টার মেহমেদ.
আজকে আপনার কথা বলার স্টাইল, মনোভাব একটু অন্যরকম লাগছে।
ব্যাপার কি? মনটা খারাপ নাকি?
--না মন খারাপ হতে যাবে কেন?
এমনি।
--সত্যি বলছেন তো.? (একটু অন্যভাবে প্রশ্ন করল)
-- মিথ্যা বলার কি আছে?
সত্যি বলছি।
--আমার কাছে কিছু লুকাচ্ছেন নাকি?
--আশ্চর্য..
আপনার কাছে কি লুকাবো??
--আমি কিন্তু সবই শুনেছি।
মিস্টার অফসার আমাকে সব বলেছেন।
কথাটা শুনে আমি মিস শায়লার দিকে তাকালাম।
--কি বলেছে মিস্টার আফসার আপনাকে?
মিস শায়লা একটি লম্বা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলবো--
-- আপনার মনের কষ্টগুলোর কথা বলেছে, ভালোবাসার মানুষকে না পাওয়ার কথা বলেছে,
-- মানে.
কিছু বুঝলাম না, (না বুঝার ভান করে)
-- আমাদের ম্যাডাম কে যে আপনি ভালবাসেন অথচ বলতে পারেননি, একথাই মিস্টার আফসার আমাকে বলেছেন।
মিস শায়লার মুখে কথাটা শুনে আমি মাথা নিচু করে সোফায় বসে পরলাম। মিস শায়লাও আমার পাশে বসে বললেন ------
--কেন বলতে পারলেন না আপনি আমাদের ম্যাডাম কে?
আপনার অনুভূতির কথা গুলো,
হঠাৎ তানহার এক বান্ধবী এসে আমায় বলল--
--আপনি কি মিস্টার মেহমেদ?
--জি.
--তানহা আপনাকে ডাকছে,
তারপর মিস শায়লার কোন প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই আমি তানহার কাছে চলে গেলাম। গিয়ে দেখি ওর বান্ধবীরা ওর পাশে বসে আছে।
আমাকে দেখে সবাই রুম থেকে চলে গেল। তারপর তানহা আমায় বলল---
-- কিরে তুই কোথায় ছিলি এতোক্ষন?
আমি শুধু ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছি। কত সুন্দর লাগছে মেয়েটাকে হলুদ শাড়িতে।
যা মানিয়েছে না তানহাকে। তার উপর আবার গাঁদা ফুলের মালা। অসাধারণ লাগছে মেয়েটাকে। এক কথায় আকাশ থেকে নেমে আসা পরী।
--কিরে তুই আমার প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিস না কেন?
আর এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?
আমাকে কি দেখতে খারাপ লাগছে?
--না না..
আপনাকে অনেক সুন্দর লাগছে।অনেক,,,,,
-- তা কোথায় ছিলি তুই এতক্ষণ?
সকাল থেকে তোকে কতবার ফোন দেয়া হয়েছে,
এলিনা কেন।
-- শরীরটা ভালো লাগছিলো না,
তাই। (মাথা নিচু করে)
তানহা আমার দু গালে আলতো করে হাত দিয়ে বলল--
-- কি হয়েছে তোর?
মনটা খারাপ কেন?
-- আমি কখন বললাম আমার মন খারাপ?
-- বলতে হয় নাকি?
কাছের মানুষরা মুখ দেখলেই বলতে পারে কখন তার মন খারাপ আর কখন তার মন ভালো থাকে।
বল আমায় কি হয়েছে তোর?
-- কিছু না...
--বলনা রে..
আমার কাছে বল, কেন তোর মন খারাপ?
কেন মুখটা এতো গোমরা করে রাখিস সবসময়?
-- বললাম তো কিছু হয়নি. (আমার গাল থেকে ওর হাত দুটো নামিয়ে)
-- আচ্ছা মেহমেদ..
একটা কথা বলবো তোকে? (খুব মায়াবী ভাবে)
-- বলুন...
-- বল তুই আমার কথা রাখবি?
--আগে বলুন না.
রাখার মত হলে অবশ্যই রাখবো।
--তুই না আমাকে আর আপনি করে ডাকিস না রে.
আমার খুব খারাপ লাগে।
কথাটা শুনে ওর দিকে খুব অবাক দৃষ্টীতে তাকালাম।
-- কেন?
তাহলে কি বলে ডাকবো আপনাকে।
-- তুমি বলে ডাকবি.
কথাটা শুনে আমি একটু হাসলাম। মনে মনে চিন্তা করলাম, তুমি বলে ডাকার অধিকার টা অনেক আগেই তুমি কেড়ে নিয়েছো তানহা।
কিভাবে সেই অধিকার আমি আবার আদায় করব? তা তো সম্ভব নয়.
-- কিরে..
তুই হাসলি কেন?
--আপনার কথা শুনে.
--আমি হাসার মত কি বললাম?
-- আপনি আর তুমি এর মধ্যে অনেকটা পার্থক্য. জানেন তো?
আকাশ-পাতাল তফাৎ।
-- তারপরও.
আমাকে তুমি বলে ডাকবি।
তোর মুখ থেকে আপনি শব্দটা শুনতে আমার আর ভালো লাগেনা।
খুব পর পর মনে হয়।
--সম্ভব না.
--কেন সম্ভব না?
--সে অধিকার আমার নেই.
--আমি এতকিছু জানি না.
তুই আমাকে আর কোনদিন আপনি বলে ডাকবি না ব্যাস।
ওর মুখে কথাটা শুনে আমার বুকটা যেন ফেটে যাচ্ছে। চোখ দুটো যেন কান্না করতে চাইছে।
কিভাবে তোমাকে তুমি বলে ডাকব তানহা?
তা তো সম্ভব নয়। আমি কিভাবে নিজেকে সামলাব তুমি চলে যাওয়ার পর?
আমার হৃদয়ককে তুমি ভেঙ্গে দিয়ে চলে যাচ্ছো।
প্লিজ বোঝার চেষ্টা করো, আমি যে তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না। ওর দিকে গভীরদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি।
-- কিরে.
কিছু বল।
-- আমি আসি এখন.
-- কোথায় যাচ্ছিস?
-- কিছু কাজ আছে.
কথাটা বলেই আমি চলে আসবো আর তানহা পিছন থেকে ডাক দিল।
--মেহমেদ.
তোকে একটা কথা বলার ছিল।
--প্লিজ এখন না.
অন্য কোন সময় শুনি।
-- কিন্তু......
-- প্লিজ.
আমি এখন আসি।
কথাটা বলেই আমি রুম থেকে চলে আসলাম। চোখটা আমার পুরো ভিজে গেছে নোনা পানিতে।
আর কিছুক্ষণ ওর সামনে দাঁড়িয়ে থাকলে আমার চোখ দিয়ে পানি ঝরে যেত। নানুর ঘরে এসে বসলাম।
খুব কাঁদছি এখন। চোখ দিয়ে শুধু পানি ঝরছে। অশ্রু যেন থামবার নয়। আমার বুকের ভেতরটা ফেটে যাচ্ছে।
কেন আমার সাথে এমন হলো। আমি কেন আমার ভালোবাসার মানুষটাকে পেলাম না। আমার পৃথিবীটা যেন উলটপালট হয়ে যাচ্ছে।
হঠাৎ নিচ থেকে নানু আমায় ডাকলো ---নানুর ডাক শুনে আমি চোখটা মুছে নিলাম। এরপর নিচে চলে গেলাম।
দেখলাম গায়ে হলুদের স্টেজ তানহা বসে আছে। এবার এক এক করে সবাই ওকে হলুদ লাগাবে।
প্রথমেই নানু ওকে হলুদ লাগিয়ে দিল। তারপরে বড় মামা, বড় মামী, ছোট মামা, ছোট মামি, আত্মীয় স্বজন সবাই ওকে হলুদ লাগালো।
এরপর আমার পালা। আমি গিয়ে ওর পাশে হালকা করে বসলাম।
তারপর হাতে একটু হলুদ নিয়ে আলতো করে ওর গালে একটু লাগিয়ে দিলাম। তানহা আমার দিকে কেমন ভাবে যেন তাকিয়ে আছে ।
কি যেন বলতে চাইছিলো ও আমায়। কিন্তু আমি তখন না শুনে চলে এসেছি। ওর চেহারার দিকে তাকালেই যেন আমার কান্না পায়। যেন নিজেকে আর সামলে নিতে পারি না।
তাই বেশিক্ষন দেরি না করে আমি উঠে চলে এলাম। তারপর আনন্দ, নাচ গান।
একটি বিয়ে বাড়িতে যেমন পরিবেশ হওয়া দরকার ঠিক তেমনি।
তবে ওই পরিবেশে আমার নিজেকে কেমনজানি বেমানান মনে হচ্ছিল। তাই কিছুক্ষণ ওখানে বসে থাকার পর আমি কাউকে কিছু না জানিয়ে সোজা আমার ঘরে চলে আসি।
চলে আসতেই নানুর ফোন।
--কিরে।
তুই কোথায়?
-- নানু আমি বাসায় চলে এসেছি.
-- আশ্চর্য.
কেন?
-- নানু ভালো লাগছিলো না. তাই.
--কিন্তু......
-- নানু এখন রাখছি...প্লিজ....
কথাটা বলেই কেটে দিলাম। এরপর নিজের বিছানায় এসে মুখ থুবরে পড়লাম। বালিশের কোনে মুখ লুকিয়ে খুব কাঁদলাম। খুব।
কষ্ট গুলো কান্না হয়ে ঝরে যাচ্ছিল। হৃদয়টা ফেটে যাচ্ছিল কষ্টের বেত্রাঘাতে।
আঘাতে আঘাতে আজ আমি এতটাই আহত হয়েছি যে এ ক্ষত কাউকে দেখানো যাবে না। নিয়তি আমাকে হারিয়ে দিল আমার ভালোবাসার কাছে।
আমি হেরে গেলাম। সারাটা রাত ঘুমাইনি। শুধু কেদেছি। এতই কেঁদেছি দুচোখে অন্ধকার দেখছিলাম।
সকাল হতেই মামা ফোন করে। ও বাড়িতে তাড়াতাড়ি যেতে বলল। যেতে ইচ্ছে করছিল না। কিন্তু বাধ্য হয়ে যেতে হল।
গিয়ে দেখলাম পুরো বিয়ে বাড়ি মানুষের কোলাহলে পরিপূর্ণ। আমি যে বাড়ির ভেতরে ঢুকেছি সেটা কেউ খেয়াল করেনি।
আমি গিয়ে সোজা নানুর রুমে সোফায় মাথাটা দিয়ে বসলাম । হঠাৎ কেউ একজন আমার মাথায় হাত দিয়ে স্পর্শ করল।
মাথা তুলে তাকাতেই দেখি নানু।
--কিরে নানু..
কখন এলি।
-- এই তো. এখন এসে বসেছি.
--কি হয়েছে তোর?
মনটা খারাপ কেন?
-- কিছু হয়নি নানু।
এমনি,
-- আজ কদিন যাবত লক্ষ্য করছি,
তুই কেমন যেন মনমরা হয়ে গেছিসস।
কি হয়েছে তোর?
আমায় বল.. কিছু হয়েছে নানু?
-- না. কিছু হয়নি.
তুমি অযথা টেনশন নিও না তো।
--কিছু হলে আমায় বল নানু.
--বললাম তো. কিছু হয়নি.
তানহা কোথায়?
--ওকে ওর বান্ধবীরা সাজাচ্ছে।
-- আচ্ছা,
আর তানহার বর কখন আসবে?
--এইতো সময় হয়ে গেছে.
এখুনি চলে আসবে।
হঠাৎ করে নিচ থেকে আওয়াজ এলো- বর এসেছে, বর এসেছে,
-- ওই দেখ.
বলতে না বলতে চলে এসেছে।
নে নে তাড়াতাড়ি নিচে আয়।
এখানে বসে থাকিস না।
কথাটা বলেই নানুর নিচে চলে গেল।
তানহার বর কে দেখার জন্য আমিও নিচে এলাম।
তবে তানহার বড়বেশে যাকে দেখলাম তাকে দেখেই আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছিল।
এ কেমন বিশ্বাসঘাতকতা আমার সাথে..?
এ আমি কাকে দেখছি...........?
নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না আমি।
কল্পনাও করতে পারছি না....যে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে আমাকে.......
চলবে.....

Post a Comment

0 Comments