নতুন বাংলা ছোট গল্পটির কেন্দ্রে রয়েছে এক ডায়েরী বা ছোট্ট খাতা, সেই খাতাকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়েছে গোটা গল্পটি।
নতুন বাংলা ছোট গল্পঃ- ” কে সে…!”
সেই ছোটবেলা থেকে দেখছি , দাদুর ওই পুরোনো আলমারি এর ভেতরে একটা ছোট্ট মতো খাতা রাখা আছে । যেটা দাদু মাঝে মধ্যে বাড়ি ফাঁকা দেখেলেই বের করে পড়তে শুরু করে আর যেই আমরা ছোটরা কেউ গিয়ে সেটা দেখতে চাই , অমনি দাদু ওটা পুনরায় আলমারির ভেতর রেখে চাবি দিয়ে , এক ধমকে আমাদের রুম থেকে বের করে দেয়।
এই ঘটনা কিন্তু একবার দুইবার নয় বেশ কয়েকবারই ঘটেছে। তাই আমিও আর নিজের কৌতূহল চেপে রাখতে না পেরে দাদু যেদিন পেনশন তুলতে বাবার সাথে রওনা দিলো, সেদিন লুকিয়ে লুকিয়ে দাদুর সেই খাতার রহস্য উদঘাটন করেই ফেললাম । আর সেটা জানার পর সত্যিই বুঝতে পারলাম , কেন দাদু কাউকেই এই খাতার ধারে কাছে যেতে দেয় না । কি আপনারা জানতে চান সেই খাতার রহস্য! তাহলে আসুন খাতার ভাষায় সেই লেখা পড়ে শোনাই।
‘অবিভক্ত বাংলার বর্তমানের বাংলাদেশের খুলনা তে বাড়ি ছিল আমার পূর্বপুরুষের। তবে আমি যখন যৌবনে পা দিলাম তখন এই আমায় বাপ ঠাকুরদা দের সাথে চলে আসতে হয়েছিল এই কলকাতায়। আর ছেড়ে আসতে হয়েছিল ছোট থেকে বড়ো হয়ে উঠা স্মৃতি জড়িত প্রিয় খুলনা কে । তবে শুধু মাত্র জায়গা নয় , সেই জায়গায় এমন একজন ছিল যার জন্য আমি খুলনা ছাড়ার পর একটা দিন ও শান্তি পায়নি। তার কাতর কন্ঠে নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে আমার নাম ধরে ডাকা সেই শেষ ডাকের আওয়াজ আজ অব্দি আমার কানে ভেসে আসে।
তখন আমি খুব ছোট , ভালো করে হাঁটতেও শিখিনি তখন রেহমান চাচার সাথে সে আমাদের বাড়ি আসত। তবে আমার মা কুলীন ঘরণী হাওয়া সত্ত্বেও হিন্দু মুসলিম ভেদাভেদ করতেন না। দুই কোলে দুইজন কে যত্ন করে বসিয়ে খাবার খাওয়াতেন । আর খাওয়াতে খাওয়াতে এক গাল পান মুখে নিয়ে বেশ সুর করে বলতেন , ” কি রে বাছা, হিংসে করছিস নাকি! শুনে রাখ কক্কনো এরে হিংসে করবি না জানবি এ তোর মায়ের আরেক সন্তান। আর এই কথা শুনে আমার মুখ খানা গম্ভীর হয়ে গেলেও , সে বেশ খীল খিল করে হেসে, মা কে জড়িয়ে ধরত।”
এরপর একসাথে ছোট থেকে বড়ো হয়ে উঠলাম দুই জনে । কিশোর বয়স তখন , ওকে নিয়ে আমতলা জামতলা ঘুরে বেড়াতাম। একসাথে নদীর পাড়ে বসে মাছ ধরতাম দুই জন মিলে । সে আমার চেয়ে বেশ চাক্ষুষ ছিল , শিকার করা যেন তার রক্তের গুন। এই বন্ধুত্বের শুরু টা যতটা মধুর ছিল শেষ টা ঠিক ততটাই বেদনা দায়ক।
পড়ুনঃ- বাংলা ভূতের গল্প- নিভা
ইতিমধ্যে বঙ্গভঙ্গের নির্দেশ দিলো লর্ড কার্জন সাহেব। ঢাকার নবাব সলিমুল্লাহ এতে সায় দিল। পরিস্থিতি তখন এমন হয়ে উঠলো , চারদিকে দাঙ্গা হাঙ্গামা , ঝগড়া ঝামেলা, বেশ অশান্ত পরিবেশ। ঠিক সেই সময় খবর এলো , তার বাবা অর্থাৎ রেহমান কাকা আর এই পৃথিবীতে নেই , দাঙ্গা তে তার প্রাণ গেছে। আর সে প্রাণ দিয়েছে আমার ঠাকুরদাকে বাঁচাতে গিয়ে। কথাটা শুনে সবাই বড্ডো মর্মাহত হয়ে পড়লো। তবে আমার চিন্তা শুরু হলো ” তাকে নিয়ে ” , রেহেমান চাচা আর নেই , এবার তার দায়িত্ব কে নেবে?
তবে সেই অসামাল পরিস্থিতিতে যেকোনো সময় বাড়িতে দাঙ্গার লোক হামলা করতে পারে, বাড়িতে মেয়ে মানুষরা ভয়ে প্রহর গুনছে । তখন ঠাকুরদা মাঝ রাত্রে , অমাবস্যার ঘন অন্ধকারে খুলনা ছেড়ে বেরিয়ে যেতে হবে বলে নির্দেশ দিলেন। যে যার মতো জিনিস বাগিয়ে গুছিয়ে রওনা দিলাম পদ্মা নদীর পাড়ে তখনও ভোরের আলো ফুটে নী । পাড় থেকে নৌকা ছেড়ে দিল পাল তুলে বেশ দ্রুত গতিতে যেন নদীর জলের বুক সিন্ধিয়ে নৌকাটা পেরিয়ে যাচ্ছে। সাথে সাথে আমার বুকের ভেতর টাও যেন বারবার তার মুখটা মনে করে , জ্বলে পুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে। সাহস করে কাউকে একবারের জন্যও মুখ ফুটে বলতে পারলাম না সেদিন ” ওকেও কি সাথে নেওয়া যায় না !”
হঠাৎ নদীর পাড় থেকে চিৎকার এর আওয়াজ শুনতে পেলাম। রাত্রের নিস্তব্ধ পরিবেশে কে যেন আমার নাম খুব জোর জোর করে ডেকে চলেছে আর নৌকা যত পেরিয়ে যাচ্ছে তার গলার আওয়াজ টাও যেন ক্ষীণ হয়ে আসছে। ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথে সব ক্ষিন হয়ে গেলো। তার আওয়াজ সমেত খুলনা সব ছেড়ে তখন আমরা পৌঁছে গেলাম তৎকালীন ভারতের প্রধান রাজনীতির কেন্দ্র কলকাতায়।
এরপর অবশ্য আমার পরিস্থিতি বেশ শোচনীয় হয়ে পড়েছিল। কলকাতার মাটি জল কোনোটাই আমার সহজে পোষায় নী । আমি নাওয়া খাওয়া ছেড়ে তার মুখ টা মনে করে দিনের পর দিন দরজার ভেতর চোখের জল ফেলেছি । পরে ঠাকুরদা আমার অবস্থা দেখে তার খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু তার নাকি কোনো খোঁজ এই আর পাওয়া যায়নি।
আমার মন বলে , ” সেদিন পদ্মা নদীর জলেই ও নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছ” । ও জানতো ওর বাবা মারা যাওয়ার পর আমি ছাড়া ওকে দেখার আর কেউ ছিলো না , আর সেই আমি এই না জানিয়ে এভাবে পালিয়ে এসেছি সেটা ও মেনে নিতে পারেনি। হ্যাঁ আমি নিশ্চিত, ও মেনে নিতে পারেনি…।
দাদুর খাতা টা পুরোটা পড়ার পর , চোখ গুলো ছল ছল করে উঠলো। বুঝতে পারলাম ঠিক কতটা কষ্ট এই খাতার মধ্যে দাদু লুকিয়ে রেখেছে পুরোনো দিনের দোয়াতের কালীতে। তবে যাই হোক পুরোটা পড়ার পরেও একটা প্রশ্ন আমার মনের মধ্যে রয়েই গেলো , যেটা হয়তো কোনোদিনও জানতে পারবো না, দাদুর খাতা তে যাকে কেন্দ্র করে লেখা সব বর্ণনা , সেই ” সে ” টা কে ? কোনো পুরুষ না মহিলা? দাদুর প্রিয় বন্ধু না দাদুর ভালবাসার মানুষ , কোনটা ?
পড়ুনঃ- অসাধারণ সব রহস্যময় গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
সত্যি তো একটা রহস্য উদঘাটন করতে গিয়ে আরেকটা রহস্যের সম্মুখীন হয়ে গেলাম । তবে ” সে ” টা কে যেভাবেই হোক জানতে হবে , নইলে দাদুর খাতার রহস্য টা যে অমলিন হয়েই রয়ে যাবে।
গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে।
সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।
পড়ুনঃ- ভূতের গল্প- অভিশপ্ত বাড়ি হারিয়ে যাওয়া প্রেম দুঃখের গল্প- ব্যস্ততা
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- ফেসবুক Group - গল্প Junction ফেসবুক- ছাড়পত্র টেলিগ্রাম- charpatraOfficial WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)
নতুন বাংলা ছোট গল্প। বাংলা ছোট রহস্যময়য় গল্প। 1 new bengali short mysterious story
from ছাড়পত্র https://ift.tt/7wUSjHG
via IFTTT
0 Comments