আজকের প্রেমের বড় গল্প টির মধ্যে পাঠক খুঁজে পাবেন এক পাগলামি ভালোবাসা। যেখানে পরিবার মেনে নিতে না চাইলেও অটল রয়েছে প্রেমিক যুগল।
প্রেমের বড় গল্পঃ- ‘হারেনি ভালোবাসা’
তুমি আবার এসেছ! আরে কেউ দেখে ফেলবে তো! উফ! কি যে করো না তুমি। যাও যাও শিগগির যাও, প্লিজ লক্ষ্মীটি, যাও গো। ভয়ার্ত কন্ঠে এদিক ওদিক তাকিয়ে দ্রুত কথাগুলো বলে কুহু অরিজিৎ কে।
আরে কুহু রাখো তো, দেখুক গিয়ে। আমি তোমাকে ভালবাসি তাই তোমার সাথে দেখা করতে এসেছি। আমি তো আর চুরি করে কিছু নিয়ে যেতে আসিনি, চুরি করে দেখা করতে এসেছি আমার ভালবাসার সাথে !
তুমি আবার মজা করছ, প্লিজ অরিজিৎ ইয়ার্কি কোরো না, তুমি যাও। কেউ দেখে ফেললে খুব বিপদে পড়ে যাবো দুজনেই।
তোমার ওই গব্বর সিং বাপ আমায় জব্দ করার চেষ্টা করলে ভুল করবেন ! বিজ্ঞের মতো করে বলে অরিজিৎ।
এই, একটা চড় মারব এবার, আমার গব্বর সিং বাপ মানেটা কি হ্যাঁ! উনি আমার বাবা আর তোমার হবু শ্বশুর মশাই।
শ্বশুর না অসুর! বিড়বিড় করে বলে অরিজিৎ।
কি বললে!!
কিছু না।
তুমি প্লিজ যাও।
গেলে তোমায় নিয়ে পালাবো বুঝেছ।
পালাবে! হোয়াট ননসেন্স!
ননসেন্স নয় যথেষ্ট সেন্স থেকেই বলছি।
তোমার আজ খুব ইচ্ছা বুঝতেই পারছি ধরা পড়ার। তুমি তো ধরা পড়বেই সঙ্গে আমিও। এত রাতে পাঁচিল টপকে, পাইপ বেয়ে চোরের মতো এসেছ আমার ঘরে আমার সাথে দেখা করতে, তোমার সাহস বলিহারি!
কতদিন আমাদের দেখা হয়নি খেয়াল আছে তোমার! তুমি তো একটা ভীতুর ডিম। বাবার ধমকেই এত ভয় যে আমার সাথে দেখা করাই বন্ধ করে দিয়েছ।
তা না তো কি করব বলো, বাবা তো এমনিতেই তোমাকে সহ্য করতে পারে না। মুখ ভার করে বলে কুহু।
কেন সহ্য করতে পারে না শুনি! আমি তো আর চুরি করে খাই না। হ্যাঁ আমি হয়তো অসৎ পথে বা ঘুষ দিয়ে বিরাট পদের চাকরি করি না , বিরাট টাকা রোজগার করি না কিন্তু আমি যেটা করি সেটা সৎপথে ও সৎভাবে পরিশ্রম করে। তোমাকে হয়ত রানীর মতো করে যত্নে রাখতে পারব না কিন্তু আমার বৌ কে অযত্নে রাখব এমন কাপুরুষও আমি না। আমার আয়োজন সামান্য হলেও আমি আমার বৌ টা কে আমার এই বুকে সবসময় আগলে রাখব।
কুহু ভয় ভুলে হাসে এতক্ষণে। ওর হাসিটা দেখে অরিজিৎ পাগল হয়ে যায় বারবার। ও বলে, হ্যাঁ গো পাগলী তুমি দেখো।
আমি তো জানি আমার পাগলটা আমাকে কত ভালোবাসে। তাই তো এই রাত দু’টো তে এত ঝুঁকি নিয়ে আমার সাথে দেখা করতে এলো। সত্যিই তুমি সার্থক প্রেমিক।
শুধু প্রেমিক না, তোমার বরও হবো তুমি দেখে নিও। তোমার ওই গব্বর সিং বাপ কিচ্ছু করতে পারবে না। সবসময় আমাকে প্যাঁচ এ ফেলা তাই না! আমিও মজা দেখিয়ে দেবো ওনাকে।
পড়ুনঃ- বাস্তব জীবনের শিক্ষণীয় গল্প - জীবন অঙ্কুর
এই তুমি আবার আমার বাবাকে গব্বর সিং বাপ বলছ!
ঠিক আছে সরি সরি আর বলব না। তবে গব্বর সিং কে গব্বর সিং বলব না তো কি বলব!
চোখ বড়বড় করে কুহু।
এই তোমাদের মেয়েদের সমস্যা কি বলোতো, তোমাদের বাবারা বদমাশ হলেও সাধু বলতে হবে। দেখছ উনি আমাকে কত সমস্যা তে ফেলে দেন, তোমার থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছেন, আরো কত কি,তবুও তুমি!
শোনো মেয়েরা যেমন বাবার নিন্দে সহ্য করে না তেমন প্রেমিক বা স্বামীর নিন্দেও সহ্য করে না। আর সতী কে দেখেছই পতি নিন্দা শুনে দেহত্যাগ করেছিলেন। তোমার নিন্দে যদি বাবা কখনো আমার সামনে করে তাহলে আমিও তা সহ্য করব না কখনো, কোনোমতেই। তবে তুমি বাবার নিন্দেও কোরো না গো প্লিজ ।
শোনো।
বলো।
সতী দেহত্যাগ করেছিল কিন্তু আমি আমার পাগলী কে কোনোমতেই আমার আগে যেতে দেবো না। মৃত্যু আমাকে পেরিয়ে তোমাকে ছোঁবে বুঝেছ। ঠিক আছে আজ আসি কেমন।
কুহু ধরা গলায় বলে, যাওয়ার আগে এসব কি কথা বলে গেলে! কষ্ট হচ্ছে তো খুব এবার।
অরিজিৎ কুহু কে জড়িয়ে ধরে বলে, পাগলী আমার, তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না আমি। আমার কিছু হবে না, তোমার ভালবাসা আছে তো সবসময় আমার সাথে।
এরপর কুহুর কপালে চুমু দিয়ে বিদায় নিয়ে অরিজিৎ।
পড়ুনঃ- চালাক শিয়ালের গল্প- ইশপের গল্প
কুহু বড়লোক বাড়ির ও উঁচু বংশের একমাত্র মেয়ে। আর অরিজিৎ খুবই নিম্ন মধ্যবিত্ত ও নীচু বংশের পরিবারের ছেলে। ওদের প্রেম টা শুরু হয়েছিল কলেজ লাইফ থেকে। অবশ্য অরিজিৎ তখন পড়াশোনার পাশাপাশি একটা খুব অল্প বেতনের প্রাইভেট কোম্পানীতে চাকরী করত। তবে অরিজিৎ খুবই মেধাবী ছাত্র ছিল বরাবর। পড়াশোনার প্রতি অসম্ভব দক্ষতা সবসময় তাকে সবার প্রথমে রাখত।
কিন্তু আমাদের কুহু পাগলী অরিজিৎ পাগলের মধ্যে এই মেধা ছাড়াও আরো কিছু খুঁজে পেয়েছিলেন যার জন্য সমস্ত হাই প্রোফাইলের ছেলে, বড়লোকের ছেলে, বিদেশ ফেরত আরো নানা গুণের অধিকারী ছেলেরা একবাক্যে বাতিল হয়ে যায়।
কুহুর বাড়িতে যখন সবাই জানে যে কুহু একটা দু ‘পয়সার ছেলেকে ভালোবাসে তখন থেকে বাড়িতে তার বাবা মেয়েকে অনেক ভালো ভাবে বোঝায়। মেয়েও তার প্রত্যুত্তর সুন্দর ভাবে দেয়। কিন্তু বাবা যখন দেখে মেয়ে শুনছে না কথা তখন অশান্তি শুরু করে। মেয়েকে অনেক চোখে চোখে রাখে। আর খোঁজ নেয় কে সেই দু’পয়সার ছেলে, যার জন্য কুহু নিজের মাথার বুদ্ধিশুদ্ধি জলে সেদ্ধ করে দিয়েছে।
অনেক খোঁজার পর অবশেষে জানতে পারে অরিজিৎ এর সম্পর্কে। আর জানার পর তো কুহুর বাবা আরোই অসন্তুষ্ট হয় এমনকি ঘৃণা পর্যন্ত করতে থাকে এটা ভেবে যে তার মেয়ে শুধু দু’পয়সার ছেলে নয়, একটা লোয়ার কাস্ট ছেলেও।
মেয়ের উপর প্রচুর রাগ হতে থাকে কুহুর বাবা অর্থাৎ মিঃ ব্যানার্জির।
আর তারপর থেকে কম অশান্তি হয়না কুহুর সাথে। কলেজের পড়া শেষ হলে, গ্ৰ্যজুয়েশন কোর্স কমপ্লিট হলে বাবা ঘোষণা করে, এখানে পোস্ট গ্ৰ্যজুয়েশন দরকার নেই।
কেন? প্রশ্ন করেছিল কুহু।
তোমাকে আমি বিদেশে পড়াবো। এখানে রাখব না। কারণ তুমি ঐ ফালতু, জঘন্য ছেলেটার সাথে মেলামেশা করছ, আমার কথা শোনার প্রয়োজন মনে করছ না।
প্রয়োজন নেই তাই প্রয়োজন মনে করছি না। শোনো বাবা, তোমার চোখে যারা ভালো ছেলে তারা আমার চোখে খারাপ বুঝতে পেরেছ।
ওও। আর তোমার কাছে ঐ ছেলে খুব ভালো তাই তো? কতটাকা ইনকাম করে ও? নিজেরই চলে না ঠিক মতো আবার তোমার দায়িত্ব নেবে! কেন জগতে কি আর ছেলে নেই, ওকেই পেলে খুঁজে খুঁজে! একটা লোয়ার কাস্ট ছেলে, না আছে পরিবারের স্ট্যাটাস না আছে বড় বাড়ি – গাড়ি, না আছে কোনো যোগ্যতা। কি দিয়ে বশীভূত করল তোমাকে?? তোমাকে বশীভূত করতে পারে আমাকে নয়। আসলে ওসব কিছু নয়, তোমার অঢেল টাকা দেখেছে , তোমার বাবার অঢেল সম্পত্তি দেখেছে তাই এত লোভ। এসব ছেলেদের আমার ভালো মতো চেনা আছে।
কুহু চুপ করে সব শোনার পর বলে, তোমার কথা বলা যদি শেষ হয়ে থাকে তাহলে আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই।
তুমি তো বললে ঐ ছেলের গুণগান করবে।
পড়ুনঃ- একতরফা ভালবাসাআর গল্প
ঠিক তাই, যে গুণগান পাওয়ার যোগ্য তাকে তো গুণগান করতেই হবে বাবা। তুমি বললে না, ওই ছেলে আমার কাছে ভালো, ও শুধু ভালো নয় বাবা, ও আমার কাছে সেরা ছেলে। তুমি শুধু ওকে দু’পয়সার ছেলে বলে অপমান করছ, তুমি জানো ও কত ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট ! আর কতটাকা ইনকাম করে? সৎপথে যতো টাকাই রোজগার করুক, তাতে হয়ত চর্ব্য, চোষ্য , লেহ্য, পেয় হবে না কিন্তু দু’বেলা ঠিক চলে যাবে আর সাথে শান্তির ঘুম, যেটা হয়ত বেশি টাকাপয়সা থাকা বাড়িতে হয় না। আমার পুরো বিশ্বাস, তোমার চোখে যেসব ছেলেরা মনে হয় আমাকে ভালো রাখতে পারবে তাদের তুলনায় বহুগুণ ভালো আমার অরিজিৎ আমাকে রাখতে পারবে।
আর জগতে এত ভীড়ের মধ্যে যে ওর মতো খাঁটি হৃদয় কে খুঁজে পেয়েছি এর জন্য আমি ঈশ্বরের কাছে কৃতজ্ঞ। ও সমাজের মাপকাঠিতে লোয়ার কাস্ট কিন্তু ওর মনটা তোমাদের মতো হায়ার কাস্ট মানুষের তুলনায় অনেক বড়। ও অন্তত তোমাদের এই হাই ফাই সমাজে কাউকে এইসব সামাজিক তকমা যেমন টাকাপয়সা, কাস্ট, ফ্যামিলি স্ট্যাটাস ইত্যাদি ইত্যাদি দিয়ে বিচার করে না। ও যেমন একজন আদর্শ মানুষ তেমন সবাইকেই মনুষ্যত্ব দিয়েই বিচার করে।
শোনো বাবা উঁচু জাত সেটা নয় যেটা তোমরা ভাবো, উঁচু জাত নয় উঁচু মন হওয়া দরকার। আর বাবা শোনো তুমি না ওকে তোমার টাকার প্রতি লোভ আছে এমন ভয়ঙ্কর মিথ্যে ও ভুল কথাটা বোলো না, ও সৎ, আদর্শ ও নিষ্ঠাবান, নির্লোভী ছেলে, ভালো একজন মানুষ ও। বড়লোক নয়, বড়োমানুষ হওয়া দরকার আর সেটাতে অরিজিৎ নিজেই নিজের তুলনা। আর ওর কাছে বড় বাড়ি, গাড়ি নেই ঠিক, কিন্তু ভালবাসা আছে এবং সেটার চেয়ে বড় বশীকরণ পৃথিবীতে আর কিছু নেই।
আর হ্যাঁ আমিও অরিজিৎ কেই ভালোবাসি ওকে ছাড়া আর কাউকে আমি বিয়ে করবো না সে তুমি যতোই চেষ্টা করো না কেন!
কুহু! তুই আমার মুখে মুখে তর্ক করছিস! এত সাহস বেড়েছে তোর!!
মুখে মুখে তর্ক নয় বাবা, এটাই সত্যি। এখনো পরিবার টাকা পয়সা দেখে, বাড়ি গাড়ি দেখে মেয়ের বিয়ে দেয়। হ্যাঁ জীবন ধারণে অর্থ নিশ্চয়ই দরকার কিন্তু তার চেয়েও বেশি দরকার ভালোবাসা, বিশ্বাস, একে অপরের পাশে আজীবন থাকার প্রতিশ্রুতি। তোমরা কেন বোঝো না বাবা, টাকার অভাবে কেউ মরে না, মরে ভালোবাসা হীন স্থানে রেখে চলে এলে। প্লিজ বাবা, যে যাকে ভালোবেসে সুখী হবে তাকে তার থেকে আলাদা কোরো না। সবেতেই ভাল খারাপ থাকে, সব অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ যেমন ভাল হয় না তেমন সব লাভ ম্যারেজও খারাপ নয়।
আমার যদি ভুল মানুষের সাথে দেখেশুনে বা প্রেম করে যেভাবেই বিয়ে হোক আমার সাথে খারাপ ই হবে আবার এর ঠিক বিপরীতটাও হয়, সেটাকেও মানতে শেখো।
আর কথায় কথায় এই বড়লোক, হাই প্রোফাইলের ছেলে এইসব শব্দগুলো বলা তো দূরের কথা মনে আনাই বন্ধ করে দাও।
খুব মুখে মুখে তর্ক করছিস কুহু। আমিও দেখে নেবো ঐ ছেলের সাথে তুই কীভাবে দেখা করিস, যোগাযোগ রাখিস। আর ওর সাথে আমার দেখা হোক, ওকে এমন অপমান করব এই ত্রিসীমানায় আর আসবে না।
পড়ুনঃ- অসমাপ্ত প্রেমের শেষ চিঠি- আত্মসম্মান
এরপরেই হয়েছিল সেটা যার জন্য অরিজিৎ রাতের অন্ধকারে অত ঝুঁকি নিয়ে এসেছিল দেখা করতে কুহুর সাথে।
কুহুর বাবা কুহুর ফোন কেড়ে নেয়। ওকে গৃহবন্দী করে। বহুদিন লাগেনি, দুইদিন যেতে না যেতেই অরিজিৎ অস্থির হয়ে ওঠে। দিনের বেলা ওর বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে কিছু সুবিধা করতে পারেনি কারণ ভীষণ কড়া পাহারা ছিল। তাই রাতেই এসেছিল কুহুর কাছে।
ওদিকে অরিজিৎ এর বন্ধুরাও ওকে বলে, মেয়েটা তোকে আজ ভালোবাসছে, কাল আর বাসবে না দেখিস। ও আজ বুঝতে পারছে না কিন্তু কাল যখন বুঝবে ও আমাদের মতো গরীব মানুষদের ঘরে মানিয়ে নেওয়া তো দূরে থাক, একটা মুহুর্তও থাকতে পারবে না তখন ও তোকে ছেড়ে চলে যাবে দেখিস। কুহুর মতো মেয়েরা বিশাল বড়লোক ঘরের তাই ওদের পছন্দ অপছন্দ বড় বেখেয়ালি। তাই বলে কি তুইও তাই করবি ওর সাথে তাল মিলিয়ে। ওর যা করা মানায়, তোর – আমাদের তা মানায় না। ওর আজ তোকে ভালো লাগছে আর সেটা কে তুই ভালোবাসা ভেবে নিচ্ছিস। বড়লোকের ছেলেমেয়েরা আর যাই হোক ভালোবাসতে পারে না। ঈশ্বর ঐ সম্পদ ওদের দেননি আমাদের দিয়েছেন। আমরা নিম্ন মধ্যবিত্ত হতে পারি কিন্তু ভালবাসা জানি, ভালোবাসতে জানি।
অরিজিৎ স্মিত হেসে বলে, তোরা কুহু কে যেমন ভাবছিস ও তেমন মেয়ে না রে। সত্যি বলতে টাকাপয়সা, বাড়ি, গাড়ি , ধনদৌলত বা আর যা কিছু হোক এইসবকিছু হৃদয়ের ঊর্ধ্বে নয়। আর কুহু বড়লোকের মেয়ে মানেই যে ও বাকি বড়লোকের মেয়েদের মতো তা কিন্তু নয়। কাউকে কারোর সাথে তুলনা করা ঠিক নয় রে। ও পুরো আলাদা।
আর কুহুর আমাকে ভালো লাগা নয়, আমার প্রতি ওর খাঁটি ভালোবাসা আছে।
ভালোলাগা আর ভালোবাসার মাঝে যে সূক্ষ্ম একটা তফাৎ আছে , সেটা কিন্তু অনেকেই বোঝে না। তোরা যেটা বলছিস ঠিক, অনেকেই প্রথম কিছু দিনের ভালো লাগা কে ভালোবাসা ভেবে ভুল করে সম্পর্কে চলে আসে। কিছু দিন বা কিছু মাস পরে যখন সেই ভালোলাগাটা ফুরিয়ে যায়, সেই মানুষটাকে জানার কৌতূহলটা শেষ হয়ে যায়, তখন আর তাকে আগের মতো ভালো লাগে না , মনের মিল হয় না, ফলে সম্পর্ক ভেঙে যায় , মন ভেঙে যায় , ভালোবাসার প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে যায়।
আসলে কারোর প্রেমে পড়া বা কাউকে ভালোলাগা যতটা সহজ , তাকে ভালোবেসে তার খেয়াল রাখা কিন্তু ততটা সহজ নয়। আসলে কারো প্রেমে পড়াটা যতটা চিন্তামুক্ত, কাউকে ভালোবাসাটা কিন্তু সেরকম নয়। কাউকে ভালোবাসার জন্য দায়িত্বশীল হতে হয় , দায়িত্ব নিতে হয় সেই মানুষটাকে ভালো রাখার, যেটা আমার কুহুর হৃদয়ে আছে আমার প্রতি।কারো ভালো গুণগুলো দেখে বা সে কি কি করতে পারে তা দেখে তার প্রেমে পড়ে যাওয়াটা যতটা সহজ , তার দোষগুলো বা সে কি কি করতে পারে না তা জেনে যাওয়ার পরও তাকে ভালোবাসাটা কিন্তু অতটা সহজ নয় ।
একটা গোলাপ যখন সবে মাত্র ফুটেছে , তখন সেটাকে দেখে ভালো লাগা যতোটা সহজ, সেই গোলাপটাতেই যখন পাপড়ি গুলো হলুদ হয়ে গেছে, অনেকগুলো পাপড়ি ঝরে গেছে, তখনও সেই গোলাপটাকে আগের মত ভালোবাসা কিন্তু ততটা সহজ নয়। কিন্তু যে সেই ঝরে যাওয়া গোলাপটাকেও ভালোবাসতে পারে, তাকে নতুন করে ফুটতে শেখাতে পারে, সেই সত্যিকারের ভালোবাসতে পেরেছে গোলাপ টাকে।
পড়ুনঃ- স্বামী স্ত্রীর প্রেমের গল্প- প্রেম স্মৃতি
একটা মানুষ সফল হওয়ার পর, তার সাফল্য দেখে তাকে ভালো লেগে যাওয়াটা অনেকটাই সহজ, কিন্তু সেই মানুষটাই যখন ব্যর্থ হয়েছে বার বার, তখন ও তার পাশে থেকে তাকে নতুন করে শুরু করার উৎসাহ দেওয়া অতটাও সহজ নয়। কিন্তু যে সেই মানুষটার খারাপ দিনগুলোতেও তার পাশে থেকে তাকে সাহস দেয়, সেই ওই মানুষটার ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য । তার থেকে আরো ভালো কাউকে পাবো জেনেও যে শুধু ওই মানুষটার সাথে থাকে, তার ভালোবাসায় সত্যি।
একটা মানুষের কেরিয়ার, স্ট্যাটাস, রূপ বা টাকা দেখে তাকে পছন্দ করাটা কিন্তু ভালোবাসা নয় । একজন মানুষ কে তখনই সত্যিকারের ভালবাসা যায় , যখন আমরা তার মনটা দেখে তাকে ভালবাসি , যখন তার চরিত্র , নীতি আর মূল্যবোধ দেখে তাদেরকে ভালো লাগে আমাদের । কাউকে ভালো লাগলে আমরা সেই মানুষটাকে চাই , কিন্তু কাউকে ভালোবাসলে আমরা সেই মানুষটার ভালো চাই । সত্যিকারের ভালোবাসা কখনো বদলায় না , না সময়ের সাথে না বাস্তবতার সাথে । পরিস্থিতি যতই কঠিন হোক না কেন , সত্যিকারের ভালোবাসা ছেড়ে যায় না , পাশে থাকে ।
সত্যিকারের ভালোবাসাতে রোজ একে অপরকে উপহার না দিলেও চলে , প্রতি সপ্তাহে ডেটে না গেলেও চলে। সত্যিকারের ভালবাসা দামী উপহার চায় না , সময় চায় । তাকেই সত্যি করে ভালোবাসা যায় যাকে নির্দ্বিধায় বলা যায় মনের সব কথা , বিশ্বাস করা যায় চোখ বন্ধ করে । সত্যিকারের ভালবাসা কখনো শেষ হয় না , সময় এর সাথে সাথে আরো গভীর হতে থাকে।
আর আমার কুহু ঠিক সেরকম। আমি আমার জীবনে কুহুর মতো মেয়ে কে অনেক পুণ্য ফলে পেয়েছি, আমি ওকে হারাতে চাই না কোনোমতেই। সারাজীবন আগলে রাখতে চাই।
অরিজিৎ এর কাঁধ চাপড়ে ওর বন্ধুরা বলে, বেশ বন্ধু, তোদের ভালোবাসা কে পূর্ণতা দেওয়ার জন্য আমাদের সবসময় পাশে পাবি। আমরা সবসময় থাকব তোদের সাথে। দেখি তোদের কে আলাদা করে।
এবার কুহুর বাবার মুখোমুখি আমাকে হতে হবে । কুহুর কথায় অনেক হয়েছে লুকিয়ে থাকা। আমি কুহুকে অনেকবার বলেছি আমি ওর বাবার সাথে কথা বলতে চাই কিন্তু কুহু আমাকে বারবার বাধা দিয়েছে। আর নয়। এবার কুহুর কোনো কথা শুনব না।
যেই ভাবা সেই কাজ। অরিজিৎ ঠিক করেই নেয় যে ও কুহুর বাবার সাথে কথা বলবে।
ওদিকে কুহুর বাবাও ঠিক করে অরিজিৎ এর সাথে দেখা করবে।
দুজনের সাথেই দুজনের দেখা হয় সময়, সুযোগ মতো। তবে কুহুর অনুপস্থিতিতে।
কুহুর বাবা অরিজিৎ কে ডেকে বলে, তুমি কি আমার মেয়ে নাকি তার টাকা কে ভালোবাসো শুনি? দুপয়সার ছেলে তুমি! ভিখিরি পরিবার। হয়তো টাকা দেখে লোভ সামলাতে পারছ না।
মাথায় রক্ত উঠে গেলেও শান্ত গলায় অরিজিৎ বলে , আপনার মন মানসিকতা তো আমি বদলাতে পারব না আপনি যদি না চান। তবে আমি আমার মন মানসিকতা থেকে বলতে পারি আমি কুহুকে বিয়ে করে নিয়ে যাওয়ার সময় ওর পোষাক, অলংকার কিচ্ছু নিতে দেবো না। আমার এতোটুকু যোগ্যতা আছে। কুহুকে ওর বাবার দেওয়া কিছু নিয়ে যেতে হবে না।
পড়ুনঃ- স্কুল লাইফের ক্রাশ
জীবনটা কিন্তু হিন্দি সিনেমা নয় অরিজিৎ যে মুখে বড় বড় কথা বললে আর তারপর দু’দিনের মধ্যেই সেই বড় বড় কাজ গুলোও করে ফেললে। জীবনটা জীবনই । আর তার উপর তোমার মতো লোয়ার মিডিল ক্লাসদের থেকে সামান্য কিছু আশা করাও বোকামি।
অরিজিৎ হাসে আর বলে, ঠিক বলেছেন আপনি, জীবনটা সত্যিই কোনো হিন্দি সিনেমা নয়। এটা শুধু সিনেমা যেটা আপনাদের মতো কিছু ক্ষমতাশালী ব্যক্তির অভিনয় ছাড়া অচল।
মানে! কি বলতে চাইছ তুমি! ক্রোধে ফেটে পড়ে কুহুর বাবা।
এই যে আপনি একজন উচ্চবিত্ত, সম্পদশালী ব্যক্তি আর আমি খুব ই অল্প বেতনের চাকুরী করি। অথচ দেখুন আপনি আমার সাথে কীরকম অশিক্ষিত, অভদ্র আচরণ করছেন। আপনার টাকা থাকলেও মানবিক শিক্ষা নেই কিন্তু আমার কাছে টাকা নেই ঠিক, মানবিক শিক্ষা আছে। অথচ এই আপনিই বাইরে গেলে গরিবদের দান ধ্যান করবেন, দু’চারটে বড় বড় ভাষণ দেবেন। আর লোকেরা আপনাকে বাহবা দেবে। অথচ আপনার সামনেই একজন দাঁড়িয়ে আছে যে আপনার মেয়েকে পর্যন্ত ভালোবাসে আর তার সাথে আপনার কি অপূর্ব ব্যবহার! জানেন তো, হঠাৎ করে বড়লোক হওয়া যায় কিন্তু হঠাৎ করেই ভদ্রলোক হওয়া যায় না কারণ ভদ্রতা হচ্ছে পারিবারিক শিক্ষা।
কিন্তু দেখুন আপনার মতো লোকেরাই সমাজের উচ্চাসনে বসে আছেন আর আমাদের মতো মানুষদের চালাচ্ছেন ইচ্ছামতো , ঐ একটাই কারণ, আপনাদের অসৎ বা যেকোনো ভাবেই হোক অফুরন্ত টাকা আছে আর আমরা ভিখারী তাই কেউ কেউ আপনাদের চালানো অনুযায়ী চলছে আর কেউ কেউ আবার আমার মতো প্রতিবাদী।
আমি আপনার সাথে এত কথা বলতে চাই না, আমি কুহুকে ভালোবাসি, ওকে আমি বিয়ে করে সংসার করতে চাই ওর সাথে। ওর সাথে গোটা জীবনটা কাটাতে চাই।
এত সোজা নাকি হ্যাঁ! রাগে ফুঁসে ওঠে মিঃ ব্যানার্জি।
চাইলেই সোজা আর না চাইলেই কঠিন।
তোমার মতো অসভ্য ছেলের সাথে আমি কিছুতেই আমার মেয়ের বিয়ে দেবো না। এই বলে অরিজিৎ কে পরিবার তুলে অনেক অপমান করে কুহুর বাবা।
অরিজিৎ অপমানের আগুনে জ্বলে ওঠে এবার। রাগে, ক্ষোভে ফেটে পড়ে বলে, অনেক সহ্য করেছি, আমার সম্পর্কে যা বলার বলেছেন মেনে নিয়েছি। কিন্তু আমার পরিবার সম্পর্কে কোনোরকম কমেন্ট আমি আপনাকে বলার অধিকার দিইনি। আমি চাইলেই আমার এডুকেশনাল কোয়ালিফিকেশন দেখাতে পারতাম না কিন্তু এই আপনাদের মতো কিছু অর্থ লোভী লোকের কাছে শিক্ষার স্থান মাটিতে। আপনারা শুধু টাকার ভাষা বোঝেন আর কোনো ভাষা বোঝেন না। তাই আমাদের মতো ছেলেদের যাদের টাকা নেই তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকলেও ভালো চাকরি হয়না আপনাদের মতো মানুষদের জন্য। ধিক!
বলে চলে যায় অরিজিৎ ।
এরপর প্রচন্ড রাগে, অপমানে কুহুর সাথে যোগাযোগ রাখা বন্ধ করে দেয়। কুহু কিছুই বুঝতে পারে না। সে অনেক বার ফোন করে কিন্তু অরিজিৎ ফোন রিসিভ করে না কিছুতেই। দেখা করে না একদমই। ওর বাড়িতে বা ওর বন্ধুদের কাছেও কোনো খোঁজ পায় না । কুহু বিচলিত হয়ে পড়ে খুব। সে বাবার কাছে জানতে গিয়েও কিছু জানতে পারে না।
বেশ অনেক দিন ধরে অরিজিৎ এর এমন আকস্মিক ও যন্ত্রণাদায়ক পরিবর্তন কুহুকে ছিন্নভিন্ন করে দেয় মানসিক ও শারীরিক ভাবে।
পড়ুনঃ- প্রেমের গল্প- দুটি গোলাপ
আর এই সুযোগ টাই ব্যবহার করে কুহুর বাবা। মেয়ের বিয়ের জন্য পাত্র খোঁজ খবর নেওয়া শুরু করে অবশেষে ঠিক করেও ফেলে।
কুহু যখন জানতে পারে এসব তখন ও কাঁদতে থাকে। অরিজিৎ এটা কেন করল ওর সাথে? ওকে কিছু না বলে এভাবে ছেড়ে চলে যাওয়ার মানে কি?
ওর তবুও মনে হতে থাকে কিছু একটা ভুল হচ্ছে। অরিজিৎ কখনোই এমন করতে পারে না। তাহলে ও কোথায় চলে গেল?
বাবাকেও বারবার বলে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে এভাবে বিয়ে দেওয়ার চেয়ে তাকে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলতে পারত, তাহলে আরো ভালো হতো।
কিন্তু তবুও কুহুর কথা শোনে না কেউ আর অরিজিৎ এরও কোনো খবর পায়না।
অবশেষে বাধ্য হয়ে সে সকলের আড়ালে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করে।
এই জীবনে তার কথার দাম কারোর কাছে নেই। আর আবেগী মেয়ে কুহু। অভিমানীও বটে। তার উপর তার ভালোবাসার মানুষটির আকস্মিক দূরত্ব আর এই জোর করে বিয়ে। এত অশান্তির পরেও যদি নিজেকে এভাবে জীবিত ভাবে বিসর্জন দিতে হয় তার চেয়ে মরে গিয়ে বিসর্জন হওয়া অনেক ভালো।
কিন্তু শেষবারের মতো মনে হচ্ছে অরিজিৎ কি সত্যিই এমন করল তার সাথে ইচ্ছা করে তাও! মন চাইছে আরেকবার ফোন করতে, কিন্তু না, ফোন সে করবে না আর।
নিজের ঘরে চুপচাপ বসে কাঁদতে থাকে কুহু। হঠাৎ ওর কাঁধে খুব চেনা একটা হাতের স্পর্শ অনুভব করে।
চমকে ওঠে, এ যে অরিজিৎ!
তুমি এখানে আবার পাঁচিল টপকে, পাইপ বেয়ে ! এতদিন কোথায় ছিলে! কাঁদতে কাঁদতে বলে ওঠে কুহু।
অরিজিৎ বলে, আমি সময় মতো ঠিকই আসতাম কুহু। এখন কথা বলার সময় নেই। আমি আসছি, তুমি বিয়ের মন্ডপে যাবে।
কিন্তু অরিজিৎ…
এখন কোনো কথা নয়। আমি আসলাম। অরিজিৎ চলে যায় সেখান থেকে।
কুহু তৈরি হয়ে যায় বিয়ের মন্ডপে। কুহুর বাবা খুব খুশি, মেয়ের সব মেনে নেওয়া দেখে।
কিন্তু বিয়ে মন্ডপে অরিজিৎ সবটা বদলে দেয়। কুহুর বাবার সামনেই কুহুকে সিঁদুর পরিয়ে দেয় আর বলে, সমাজ বা টাকার কাছে সব ভালোবাসা হারে না। নিজের উপর একটু বিশ্বাস আর সাহস থাকলেই প্রিয়জনকে শত বাধা থেকেও নিজের করে নেওয়া যায়।
মেয়ের সুখ, শান্তি দেখুন নিজের ইগো নয়। চলি।
এরপর অরিজিৎ কুহুকে একটা পোষাক দিয়ে বলে, কুহু তোমার বাবার দেওয়া সমস্ত কিছু রেখে আসো। উনি তোমাকে মেয়ে হিসেবে ভালোবেসে যেদিন দেবেন সেদিন তুমি সেসব গ্ৰহণ করবে। কিন্তু যতদিন পর্যন্ত উনি মানুষ কে মানুষ হিসেবে না দেখা শিখছেন ততদিন পর্যন্ত কিচ্ছু নেবে না তুমি।
এরপর অরিজিৎ কুহুকে নিয়ে চলে যায় সেখান থেকে। কুহু নিজের বাবার দিকে চেয়ে অরিজিৎ কে উদ্দেশ্য করে বলে, গোটা পৃথিবী তোমার বিরুদ্ধে থাকলেও, আমি সবসময় তোমার সাথে থাকব। কারণ আমি কোনো ভুল মানুষ কে বাছিনি। একজন ঠিক মানুষ কে বাছতে গিয়ে যদি আমাকে আমার আপনজনের কাছে ভুল হতে হয় তাহলে কষ্ট হলেও সেটাই মেনে নেবো।
তবুও ভালোবাসা কে হারতে দেবো না।
গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে।
সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।
পড়ুনঃ- অসম্পূর্ণ প্রেমের গল্প হাসির গল্প- বউ নিয়ে হাসির গল্প
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে-
ফেসবুক Group - গল্প Junction
ফেসবুক- ছাড়পত্র
টেলিগ্রাম- charpatraOfficial
WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)
প্রেমের বড় গল্প। ভালোবাসার পাগলামি। bengali love story. madness love.
from ছাড়পত্র https://ift.tt/4CugLnQ
via IFTTT
0 Comments