ব্যর্থ প্রেমের শেষ কথা প্রেমে ব্যর্থ হলেই সবার প্রথমে নিজেকে শেষ করার ভাবনা মাথায় আসে, কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত যে পরিবারের উপর কি প্রভাব ফেলতে পারে, তার অনুমান আমরা করি না। গল্পে এক প্রেমিকা তার ব্যর্থ প্রেমের শেষ কথা বলে গেছে। আর এর পরেই সে পারি জমায় নতুন দিগন্তে নতুন উদ্যমের সাথে।
ব্যর্থ প্রেমের শেষ কথাঃ- ‘শেষ থেকে শুরু’
নাবিকের দিক নির্ণয়ের ভুল যেভাবে জাহাজ ডুবির মূল কারণ হতে পারে, ঠিক সেভাবেই পথভ্রষ্ট পথিকও জীবন যুদ্ধে দিশেহারা হয়ে পড়তে পারে।
হ্যাঁ আমি ও সেই নাবিক আর পথিকের দলেই পরি জানেন! আমার জীবনেও লক্ষ্য স্বপ্ন ইচ্ছে সবকিছুর ভরাডুবি ঘটেছে , তবে পুনরায় সেগুলোকে বাঁচিয়ে তোলার গল্পই আজ আপনাদের সামনে তুলে ধরছি। যেখানে শুরুর থেকে সবটা শেষের পথে গেলেও পুনরায় শেষ থেকেই শুরুর সূত্রপাত।।
ব্রিজের ওপর থেকে পূর্ণিমার চাঁদ টা বেশ সুন্দর লাগছে। চারদিক ফাঁকা, মাঝে মধ্যে একটা করে গাড়ি পেরিয়ে যাচ্ছে দ্রুত বেগে । সময় এখন রাত এগারটার কাছাকাছি হবে। আমি রাস্তার এপার বয়ে হেঁটে যাচ্ছি , জানিনা আর বাঁচার ইচ্ছে আছে কি নেই , তবে নিজেকে আজ শেষ করব বলেই বেরিয়ে এসেছি ।
ব্রিজের ধারে পা দুটো ঝুলিয়ে কানে হেড ফোন টা নিয়ে বসে পরলাম । জানি এভাবে বসে থাকলে বেশিক্ষণ বাঁচবো না , কারণ এখানে যেভাবে দ্রুত গতিতে গাড়ি যাতায়াত করে তাতে আমার লক্ষ্য সহজেই পূরণ হবে । হঠাৎ করে শিউরে উঠলাম , আমার কোলে কে যেন মাথা রেখে শুয়ে পরলো । মুহূর্তে চোখ খোলা মাত্রই তার নিষ্পাপ চোখ দুটো দেখে , এতদিনের জমিয়ে রাখা চোখের জল টপ টপ করে তার নাক মুখের ওপরেই পড়তে লাগল। মনে হলো , এই সে, যাকে আমি মৃত্যুর আগের মুহূর্তে সবটা বলে যেতে পারি , হ্যাঁ সবটা !
২০১৯ সাল , তখন আমি ক্লাস ইলেভেনের ছাত্রী । পড়াশোনা , স্বভাব , চরিত্র সবমিলে মিস পারফেক্ট এর শিরোপা আমার মাথায় তখন বিরাজমান। তবে নিত্যান্ত সাধারণ পরিবারের মেয়ে বলেই হয়তো এই গুন গুলো বজায় রেখে চলতে হত। ছেলেদের ওপর ছিল এক অদ্ভুত রকমের অ্যালার্জি। মেশা তো দূরের কথা , কথাও বলতাম না কোনো ছেলের সাথে।
কিন্তু সেই অ্যালার্জি এর প্রতিষেধক রূপে আমার জীবনে বিরাজমান হলো শুভ নামের একটি ছেলে। আমার চেয়ে বয়সে অনেকটাই বড় ছিল । কিন্তু লোকের মুখে তার নাম ,গুনগান , ভদ্রতা , চরিত্র সবটা দেখে একটু একটু করে ভালো লাগার সূত্রপাত । তারপর যেই , শুভ একদিন স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে, একেবারে হিন্দি সিনেমার স্টাইলে গোলাপ ফুল নিয়ে সবার সামনে প্রপোজ করলো , আর নিজেকে সামলে রাখতে পারলাম না । সপে দিলাম নিজের ব্যক্তিত্ব কে শুভর হাতে।
পড়ুনঃ- না পাওয়া প্রেমের গল্প
প্রথম প্রথম শুভর ভালোবাসাটা এক তরফা হলেও ধীরে ধীরে আমিও বেশ গভীর ভাবে জড়িয়ে পরলাম । দেখতে দেখতে দুই বছর পেরিয়ে গেল। আমি সবে মাত্র তখন কলেজে ভর্তি হয়েছি , ঠিক তখনই শুভ একটা বেসরকারি কোম্পানিতে কাজ পেলো। এবার বাড়িতে জানতে পারলেও আর কোনো অসুবিধায় পড়তে হবে না ভেবে , দুজনেই খুব স্বস্তি বোধ করলাম । তবে আমার মনের মধ্যে একটা দ্বিধা সবসময় কাজ করতো , আমার জীবনেও কিছু স্বপ্ন , ইচ্ছে আছে , নিজে স্বনির্ভর হয়ে বাবার মায়ের দায়িত্ব পালন করার ইচ্ছে , সেগুলোর মূল্য কি শুভ দেবে আদৌ! সে কি আমার স্বপ্ন পূরণে সঙ্গী হবে!
তাই বারেবারে তাকে নিজের স্বপ্ন , ইচ্ছের কথা গুলো বলতাম ওকে। আর সে একরাশ হাসি মুখে নিয়ে বলতো ” আমি তো আছি নাকি , এত কিসের চিন্তা পাগলী”। এই কথাটা শোনা মাত্রই একটা প্রবল শক্তি পেতাম মনের মধ্যে। তবে যখন সেই স্বপ্ন পূরণ এর জন্য নিজেকে সময় দিতাম তখনই শুভর মেজাজ ভার হয়ে যেতো। বুঝতে পারতাম না ওর আসল চাহিদা টা কি ? তবে ওকে খুশি করতে নিজেই পিছিয়ে যেতাম । স্বপ্নের চেয়ে আগে ওকে জায়গা দিতাম। তাও যেন কিছুতেই ওর মন পাওয়া হয়ে উঠেছিল দুষ্কর ব্যাপার।
এরপর দিন দিন শুভ কেমন যেন বদলে যেতে লাগলো । আগের সেই আমি পাগল মানুষটার সাথে এই মানুষটার যেন কোনো মিল এই পেতাম না। কথায় কথায় রেগে যাওয়া , ছোট খাটো বিষয় নিয়ে ঝগড়া করা , ব্লক করে দেওয়া এগুলো হয়ে উঠলো নিত্য দিনের অভ্যাস। তাও সবটা মানিয়ে চলার চেষ্টা করতাম ।
হঠাৎ একদিন কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার সময়, খুব দ্রুত গতিতে বাইক টা সামনে এনে দাড় করিয়ে বললো ” আমার সাথে এখুনি চলো, আজই আমরা রেজিস্ট্রি টা সেরে ফেলবো ” । এরকম একটা প্রস্তাব আমি কখনোই আশা করিনি , তাই কষিয়ে গালে একটা থাপ্পড় দিয়ে , চোখের জল ফেলতে ফেলতে বাসে উঠে গেলাম ।
প্রায় পনেরো দিনের মতো আর ওর সাথে আমার যোগাযোগ ছিল না । সোশ্যাল মিডিয়া, ফোন সবকিছু থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে নিয়েছিলাম। বাড়িতে সবাই নিস্তব্ধতার কারণ জিজ্ঞাসা করলেও আমার কাছে দেওয়ার মত কোনো উত্তর ছিল না ।
তিন দিন আগে পাশের বাড়ির একটা বোন দেখা করতে এলো , আর বইয়ের মাঝে কি যেন একটা ঢুকিয়ে এনে , হাতে দিয়ে বলল ” বইটা মন দিয়ে পড়বে “। নিজের রুমে গিয়ে বইটা খুলতেই বেরিয়ে এলো একটা লাল রঙের বিয়ের কার্ড , ওপরে সুন্দর করে লেখা ” শুভ পরিণয় দীপা “।মুহূর্তের মধ্যে একটা আচমকা ধাক্কা ছারখার করে দিলো আমার জীবন ।
আজ সেই শুভর বিয়ের রিসেপশনেই বিনা আমন্ত্রণে গিয়েছিলাম। কি দেখলাম জানেন , দীপার সাথে বেশ সুন্দর মানিয়েছে ওকে । ওদের পরিবারের সবাই খুব খুশি । আর যেই শুভর জন্য একদিন সিনিয়র, ক্লাসের ফার্স্ট বয় দেবাংসু দা কে রিজেক্ট করেছিলাম। আজ সেই ছেলেটাই ওর বিয়েতে আমন্ত্রিত। নিজেকে খুব ছোট মনে হচ্ছে আজ , মনে হচ্ছে এই জীবনের কোনো দামই নেই । যা ছিল সবটাই সাজানো মিথ্যে।এতক্ষন ধরে নিষ্পাপ প্রাণীটা মন দিয়ে সব কথা শুনেছে আর আমিও মন খুলে সবটা বলতে পেরেছি ওকে , কারণ ও চাইলেও এই কথা গুলো কাউকে বলতে পারবে না ।
পড়ুনঃ- কয়েক লাইনের ছোট ছোট লাভ স্টোরি
হঠাৎ করে পেছন থেকে, কে যেন ” রকি ” বলে আওয়াজ দিলো । এতক্ষন কোলের ওপর বসে থাকা সেই নিষ্পাপ প্রাণী টা ছুট্টে গিয়ে তার কোলে ঝাঁপিয়ে পড়লো । এই মানুষটা আর কেউ নয় সেই দেবাংসু দা , আমার অজান্তেই সে এতক্ষন ধরে, পেছন থেকে সবটা শুনেছে… সেটা বুঝতে আর বাকি রইলাম না । সে রকি কে কোলে নিয়ে , আমার দিকে হাত টা বাড়িয়ে দিয়ে বললো ” বাড়ি ফিরবে না ?”
আমি আলতো হেসে বললাম –
এতক্ষন ধরে ওই নিষ্পাপ প্রাণীটাকে সবটা বলার পর , মনের মধ্যে অনেক প্রশ্ন তৈরি হয়েছে । ” কেন আমি অপরকে পরিবারের থেকেও বেশি গুরুত্ব দিলাম , কেন আমি নিজের চেয়ে বেশি অপরকে ভালোবাসলাম , কেন আমি একটা স্বার্থপরের জন্য মরতে যাচ্ছিলাম ? “
বিকট একটা হাসি হেসে দেবাংসু দা বললো ” বাঁচতে হলে নিজের জন্য বাঁচো, পরিবারের জন্য বাঁচো, আর তার জন্য বাঁচো যে তোমার জন্য বেঁচে আছে “
শেষের কথাটার মানে বুঝেও না বুঝার ভান করে, তার হাত ধরেই আবারও উঠে পড়লাম । ব্রিজের ওপর দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বললাম-
“যেই পথে একবার পা বাড়িয়ে নিজের পরিবার , স্বপ্নকে সময় দিতে পারিনি ,সেই পথে আর পুনরায় হাঁটবো না, আবারও বাঁচবো নিজের জন্য , পরিবারের জন্য , প্রমাণ করে দেবো স্বপ্ন পূরণে কোনো সঙ্গীর প্রয়োজন নেই , শুধু মাত্র প্রয়োজন নিজের অক্লান্ত পরিশ্রম আর কাছের মানুষ গুলোর উদ্যম “
গল্পের গহীন ভাবনায়-
গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে।
সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।
পড়ুনঃ- অসমাপ্ত প্রেমের কাহিনী দুঃখের লাভ স্টোরি
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে-
ফেসবুক Group - গল্প Junction
ফেসবুক- ছাড়পত্র
টেলিগ্রাম- charpatraOfficial
WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)
ব্যর্থ প্রেমের শেষ কথা। একটি ব্যর্থ প্রেমের ইতিকথা। 1 new bengali very sad love story.
from ছাড়পত্র https://ift.tt/rlRISnP
via IFTTT
0 Comments