রহস্যের গল্প। রহস্যময়ী নারী। 2 new mysterious story in bengali.

আজকের রহস্যের গল্প দুটি ভিন্ন ভিন্ন। প্রথম গল্প টির কেন্দ্রে রয়েছে একটি রহস্যময় ডায়রি আর দ্বিতীয়টির কেন্দ্রে রয়েছে একজন রহস্যময়ী নারী।

রহস্যের গল্পঃ- ‘সাপের দাঁতটা!’

মনটা খুব ভারাক্রান্ত। রোজ আলু-পেঁয়াজের সাথে থাকতে থাকতে নিজেও কেমন বাসি হয়ে যাচ্ছি, তবে রাতটা তো স্বর্গ। সৌম্য ডায়েরীটা বন্ধ করে রাখলো। হ্যাঁ তেমন পড়া হয়নি ওর। তবে এতো আগ্রহ যে, সময় পেলেই বসে পরে ডায়েরীটা দেখতে। “আপনি ফাইলটা বের করেছেন সৌম্যবাবু?” এক ক্লার্ক এসে প্রশ্ন করল।

সৌম্য- “আপনি রুদ্রর কাছে পেয়ে যাবেন।” রাত ১০ টার দিকে বাড়ি ফেরে সৌম্য। আর প্রতিদিনের মতো মাছ-ভাত খেয়ে বিছানার কোল বালিশে রেখে ডাইরীটা ওলট পালট করে। এই ডায়েরীটা সৌম্য তার বাবার বন্ধু ঘুরতে গিয়ে এক জঙ্গলে পেয়েছিল, তবে ডায়েরীটা সে তার কাছে রাখেনি, কোনো এক অজ্ঞাত কারণে সৌম্যর কাছেই রাখতে দিয়েছিল, তবে এটা ভুতুড়ে নামে কুখ্যাত, এ ভাবনা কোনোদিনই সৌম্যর চিন্তায় আসেনি।

ডায়েরির কিছু পাতায় সে দেখল, লাল ক্রস চিহ্ন রয়ে আছে, অদ্ভুতভাবে সেই পৃষ্ঠাগুলোয় এক মৃত সাপের দাঁতের গন্ধ পাওয়া যায়। আরো অবাক লাগছে তার যে ওই একই গন্ধ সমস্ত লাল ক্রস চিহ্ন পৃষ্ঠাগুলিতে একইভাবে পাওয়া যাচ্ছে। পৃষ্ঠাগুলো লক্ষ্য করে সৌম্য কিছু অলৌকিক লেখা খুঁজে পেল, কিন্তু সেগুলো যে পালি ভাষায় লেখা তা সে বুঝতে পারলেও, পালি ভাষা সে পড়তে পারে না। তবে শেষের প্রায় ৩০টি পৃষ্ঠা সংস্কৃতে লেখা। যাতে সৌম্য যা বুঝতে পারে তা হল,-

রহস্যের গল্প
রহস্যের গল্প

‘প্রাচীন মুনি ঋষিদের বাস ছিল ভারতে। আর মূলত বিন্ধ্য পর্বতের উত্তরে তাদের বাস বেশ ভালোই ছিল। তাদের কিছু অংশ উত্তরে হিমালয়ের দুর্গম স্থানে যায়, আর কিছু অংশ পশ্চিমে যায়। এমনই একটি মুনি বহুদিন হিমালয়ে তপস্যা করেন, বহু তুষার ঝড় তার দেহে পতিত হয়, বছরের পর বছর ধরে তিনি এভাবেই তপস্যা করেন, কিন্তু রাতে একটি প্রহর তিনি ব্যস্ত থাকতেন একটি অনাগত সাপের সাথে। তবে সেটা সাধারণ সাপ নয়, এক দিব্য উজ্জ্বল মণিযুক্ত বিশালাকার সাপ। ওই মুনি প্রতিদিন একটি মাংসাশী প্রাণী সাপের খাদ্যের জন্য নিয়ে আসত।

একদিন মুনি কোথাও সাপের খাদ্য খুঁজে পায় না, ফিরে আসে সে এক বিষন্ন মুখে, কারণ এর পরিনতি সে হয়তো জানতো। সেদিন ভরা পূর্ণিমা ছিল, প্রায় মধ্যরাতে সেই মনি আরো চকচক করে ওঠে। লালারস ঝরে তার মুখ থেকে। হঠাৎ এক বিকট ফোঁস করে ওঠে সাপটি, কেঁপে যায় সেই মুনির আশ্রম। অবস্থা এতটাই খারাপ হয় প্রাণ ভয়ে পালাতে যায় মুনি কিন্তু ওই হিংস্র সরীসৃপের গ্রাস থেকে বাঁচতে পারে না, সেই সময় সে অভিশাপ দেয়, “হে সর্প তুই কোনোদিনই মুক্তি পাবি না, মৃত্যুর পরও তোর দাঁত আমার ভয়াল মৃত্যুকে মনে করাবে” কিছুক্ষন পরেই তিনি মারা গেলেন, আর তার দেহের মাংস ছিঁড়ে যেন ভোজ করলো সেই নরখাদক সাপটি।

হঠাৎ সৌম্য একটা গলা শুনতে পেলো, ওর মা ডাকছে রাতের ভাত খেতে। সৌম্য সেদিন রাতে আর ডায়েরীটা খুললো না। পরের দিন সৌম্য ফোন করলো তার বাবার বন্ধুকে, খুব ভয়ার্ত কন্ঠে তিনি বলে উঠলেন,”বাবা তুমি ওই ডায়েরীটা পুড়িয়ে দাও”। সৌম্য অবাকভাবে বলল, “আমি আপনাকে কিছু তো বলিনি, আর ডায়েরীটা কেনোই বা পোড়াবো?”

ওর বাবার বন্ধু বললেন-“না বাবা, তুমি কি কোনো দাঁতের গন্ধ পেয়েছ, বিষদাঁত?” সৌম্য ফোনটা কেটে দেয়, মনে মনে প্রশ্ন থাকলেও, কিছু বলে না ও। তবে এটাই ভাবে, এক বিষাক্ত গন্ধ পেয়েছিল সে, হতেও পারে সেটা বিষদাঁত আর মুনি তো বলেও ছিল তা।

সেদিন রাতে, এক অদ্ভুত স্বপ্ন দেখে সৌম্য, দেখে একটা মনিযুক্ত বৃহৎ আকার সাপ সৌম্যকে জড়িয়ে ধরে তার দাঁত দেখাচ্ছে, কিন্তু তার একটা দাঁত সম্পূর্ণ ভাঙা। সকালে উঠে এসব থেকে মন সরিয়ে অফিসে গিয়ে কাজে মন দেয় সে। দুপুরের দিকে একটা কুরিয়ার আসে সৌম্যর অফিসের ঠিকানায়। অফিসের সবাই তা নিয়ে বেশ উৎসাহী, হয়তো ভাবছে কোনো দামি উপহার হবে। তাই সৌম্যকে বাধ্য করে সবার সামনে তা খুলতে।

mysterious story in bengali
mysterious story in bengali

বাক্সটি খুলতে এক ভয়ংকর রঞ্জক তরল পদার্থ গড়িয়ে পরে এবং তার গন্ধ বিষের থেকেও প্রাণঘাতী। কিছুক্ষনের মধ্যেই দুজন সেই গন্ধে দম আটকে ফেলে, স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাদের মৃত বলে ঘোষণা করে। আর কিছুদিনের মধ্যেই সৌম্যকে গ্রেপ্তার আর অফিসটিকে বাজেয়াপ্ত করে প্রশাসন। তবে এরপর সৌম্যর তেমন খোঁজ পাওয়া যায় না। অনেকে বলে সৌম্য পুলিশ সেল থেকেই গায়েব হয়ে যায়। তবে তা মদ্যপ কথার বুলি বলেই সমাজে ছড়িয়ে যায়। তবে অনেকে এটা বলে, কলকাতায় এক সাপুড়ের আমদানি হয়েছে, যার গায়ের গন্ধ বিষাক্ত সাপের দাঁতের মতো।

পড়ুনঃ- রহস্যময় গল্প- অভিশপ্ত পেইন্টিং 

রহস্যময়ী নারীঃ- ‘রাতের আলাপ’

স্কুল করে আমাকে টিউশন পড়িয়ে বাড়ি ফিরতে হয়। সেটা চিন্তার ব্যাপার নয়, তবে আবার চিন্তারও। আকাশ বলে মাঝে মাঝে ওদের বাড়িতে পড়তে যেতে। তবে টিউশনের চাপে আর যাওয়া হয় না। শুভংকর ঘোষ নামে একটি দাদা দারুন পড়ায়, তবে মাইনেটাও বেশ ভালো তাই তার কাছে পড়া হয়ে ওঠে না। সেই শুভংকর দা মানে শুভ দাই একদিন ফ্রি ক্লাস করান আকাশের বাড়িতে, সপ্তাহে একবার, আবার কোনো সপ্তাহে হয় না। তাই কিছুসপ্তাহ পড়বো ভাবলাম।

একদিন এক বর্ষার বিকেলে পড়তে যাই আকাশের বাড়িতে, ওদের তিনতলা বাড়ি হলেও নিচের এক বড়ো দালানে আমি আকাশ, সুমিত, কৃষান আর পায়েল আর শুভদা বসলাম। সেদিন ইতিহাস পড়াতে পড়াতে এক ঘটনা বলতে আগ্রহী হলো শুভদা। তবে আকাশ সে ব্যাপারে বেশ কৌতুক করেই বললো, “আবার কল্পনাকে কেন টানাটানি শুভদা, এর থেকে বরং আমরা একটু এই সিঙাড়া নিয়ে দড়িটান খেলি”। কাকিমা বরাবরই শুভদা আর সবার জন্য সিঙাড়া, নিমকি সহযোগে চা খাওয়ান কিন্তু পায়েল শুধু নিমকি খায়।

যাই হোক শুভদা আকাশকে বললো,”তুমি ছোটো তো তাই একটু সময়ের সবুর করো, তুমিও তখন কল্পনা আর বাস্তবকে মেলাতে পারবে। বলে শুভদা শুরু করলো, “আমি তখন ক্লাস ১১ এ, পড়াশোনায় বরাবরই ভালো ছিলাম। তবে ফুটবল আমার প্রাণ। কত ক্লাবে ভাড়ায় যেতাম, আর জিতে ট্রফি নিয়ে ক্লাবকে গর্বিত করতাম।

আমাদের যে মাঠটা আছে না! ওই সুভাষ বোস লেনের মোড়ে, তবে এখন খাবার দোকান বসে তেমন কেউ আর খেয়াল করে না। তবে ওই মাঠে একসময় দারুন ফুটবল অনুশীলন করা হতো। আমিও ছিলাম সেই সময়, খেলতাম ওই মাঠে। তবে রাতে অন্য কিছু ঘটতো ওই মাঠে।”

“শুরু হলো, ভূতের কেত্তন”, আকাশ বিদ্রূপে বলে উঠলো।

তবে এসব শুভদার কান অবধি গেলো না, সে আবার বলতে শুরু করল, “ওই মাঠের ধারে একটা মেয়ে প্রতিদিন আমাদের খেলা দেখতো। মেয়েটি খুবই সুন্দরী কিন্তু লাজুক প্রকৃতির। তবে এটা তো স্বাভাবিক ভাবেই মনে হতো আমার। এরকমই একদিন রাত ৩ টে হবে, ঠিক সেই সময়ে আমি ফুটবল নিয়ে ওই মাঠে প্র্যাকটিস করছি, দেখলাম সেই মেয়েটা যে প্রতিদিন আমাদের খেলা দেখতো সে ওই মাঠের ধারে এক বেঞ্চে বসে আমার দিকে অপলকে তাকিয়ে আছে।

আমার বেশ ভয় লেগেছিল, কারন এতো রাতে একটা ১৮ বছরের মেয়ে একা এখানে কি করছে? পরে ওর সামনে গিয়ে শুনলাম, ওর বাড়ি এখানে। তারপর থেকে আমাদের দুজনের মধ্যে বেশ প্রতিদিনই কথা হতো। আলাপ এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, আমি ভাবি ওকেই আমি বিয়ে করবো। সেদিন মেয়েটি খুব সুন্দর একটি চুড়িদার পরে এসেছিল, হলুদের ওপর সাদা আর লালের রঙিন কাজ। মেয়েটি বললো, “তুমি আমায় সত্যি কি ভালোবাসো?” উত্তরে বললাম, “রাতের আলাপে আমি তোমাকে ভোরের আলো দেবো যদি সঙ্গিণী হও”।

রহস্যময়ী নারী
রহস্যময়ী নারী

মেয়েটি এক স্নিগ্ধ ক্লান্ত হাসি দিয়ে বললো, তুমি খুব ভালো মানুষ শুভ, তবে কাল থেকে আমাদের আর দেখা হবে না। বলে সে আমাকে কিছুটা দুরে মাঠ থেকে কিছুটা জঙ্গলের পাশে নিয়ে যায়। মেয়েটির চোখটা অজ্ঞাত কারনে আর্দ্র হয়ে যায়। আমি ম্লান হেসে ওর চোখটা মুছিয়ে দিই। মেয়েটি বললো, “তুমি ওই স্তূপটা আস্তে আস্তে সরিয়ে দাও। আমিও একটু অবাক হয়েও মাটি সরাতে থাকি। কিছুক্ষন পর চোখে পড়ে, এক অল্প মাংস লেগে থাকা একটা কঙ্কাল। “ওই কঙ্কালটাই আমিই”, মেয়েটি মৃদু করুণ হাসি মুখে বললো।

আমি সেই সময়ে নিজেকে স্থির রাখতে পারি না। মেয়েটি আরো বললো,”আমার এই কঙ্কালটি তুমি দাহ করো শুভ, তাহলে আমি মুক্তি পাবো”। এবার সে প্রচন্ড চিৎকার করে কেঁদে উঠলো। আর আমিও নিজেকে বেসামাল হয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলাম, বুঝলাম এক বরফখন্ড আমার বুকের মাঝে জাপটে আছে। আমার আবেগ তখন পাথর হয়ে নিশ্চুপভাবে দাঁড়িয়ে থাকলো।

এরপর যখন আমার জ্ঞান ফিরেছিল, কিছুদিন পর হসপিটালের বেডে। আমি কাউকে এসব বললেই আমাকে মানসিক রোগী ভাবতে থাকতো। তবে আমি ওই জায়গায় দেখেছিলাম, মাটি খুঁড়ে এক মৃত কঙ্কাল। পরে এব্যাপারে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারে, একটি মেয়ে খুন হয়, তবে কেন তা জানতে পারে না তারা। ভূত কিনা জানিনা তবে সেই প্রেম রাতের আলাপ আজও এই হৃদয় জুড়ে রয়ে যাবে।

সৌগত প্রামাণিক

গল্পের লিপিতে-
গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে। 
সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।

পড়ুনঃ- 
ছোট ছোট ভালোবাসার গল্প 

সত্যি ভুতের গল্প- অদ্ভুতুড়ে স্কুল 
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- 

ফেসবুক Group - গল্প Junction 

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)

রহস্যের গল্প। রহস্যময়ী নারী। 2 new mysterious story in bengali



from ছাড়পত্র https://ift.tt/qLQ05Rd
via IFTTT

Post a Comment

0 Comments