#পিচ্চি_বউ
(part 14)
.
তখন আমার মুখ দিয়ে শুধু একটা শব্দ
বেরিয়ে আসল,,
-- দিয়াআআআ !!
.
আমি আমার নিজের শরিরে একটা চিমটি
কেটে চোখ বন্ধ করে আবার তাকালাম,,
হুম,,আমি ঠিকই দেখছি দিয়া আমার
সামনে,,
আমার পিচ্চি বউ আমার সামনে,,
কিন্তু এটা কোন দিয়া? এটা কি সেই
পিচ্চিটা?
পিচ্চিটা তো এখন পিচ্চি নাই, অনেক বড়
হয়ে গেছে,,
এদিকে দিয়া আমাকে দেখে চেয়ারে বসে
থাকতে পারল না,
চেয়ার থেকে উঠে দাড়াল,,
মুখটা হ্যা করে আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে
তাকিয়ে রইল,,
আর গাল বেয়ে চোখের পানি গড়িয়ে
পরছে,,
আমি যেই দিয়ার কাছে এগিয়ে গিয়ে কিছু
বলতে যাব,
তখনই আমার পিছন থেকে একটা বাচ্চা
বলে উঠল,,
-- আম্মুওওও,,
আমি পিছনে তাকিয়ে দেখলাম একটা
লোকের কোলে 3-4 বছর বয়সি একটা
বাচ্চা !(লোকটা হয়তো ড্রাইভার)
কিন্তু বাচ্চাটা আম্মু বলল কাকে?
বাচ্চাটা সেই ড্রাইভারটার কোল থেকে
নেমে ছোট্ট ছোট্ট পায়ে দৌরে গিয়ে
আম্মু আম্মু বলতে বলতে দিয়ার কোলে
উঠল,,
আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল,,
তারমানে সেদিনের আব্বুর কথাটাই সত্যি
হল,,
দিয়া অন্য কারো সাথে বিয়ে হয়ে সংসার
করছে,,
আর তার প্রমান হল এই বাচ্চাটা,,
আমার সেখানে দাড়িয়ে থাকতে কষ্ট
হচ্ছে,,
বুকের ভিতর অনেক কষ্ট ফিল হচ্ছে,,
মনে হচ্ছে কেউ বুকে হাতুরি দিয়ে পিটাচ্ছে,,
আমি কিছুক্ষণ ওদের মা মেয়েকে দেখে
কেবিন থেকে বেরিয়ে যেতে লাগলাম,,
পিছন থেকে দিয়া ডাক দিল,,
-- এই যে শুনুন,,
আমি ঘুড়ে দিয়ার চোখের দিকে তাকালাম,,
দিয়া একবার আমার চোখের দিকে তাকিয়ে
আবার চোখ নিচে নামিয়ে বলল,,
-- অফিসের বসকে কোনোদিন নাম ধরে
ডাকতে নেই !
এই ভূলটা যেন আর না হয় ৷
আমি দিয়ার কন্ঠে রাগ, মান অভিমান ফিল
করলাম,,
কিছুক্ষণ দিয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে
বললাম,,
-- জ্বি..মেডাম !
বলেই আমি আবার বেরিয়ে যেতে লাগলাম,,
পিছন থেকে দিয়ার মেয়েটা দৌরে এসে
আমার হাত ধরল,,
আর তুতলিয়ে তুতলিয়ে বলল,,
-- আনকেল,,আমিইই ততোমাকে
চিনিইই !
আমি মেয়েটাকে কোলে নিয়ে গালে একটা
চুমু দিয়ে বললাম,,
-- কিভাবে চিন??
-- ততোমাকে আমিই আম্মুর ফোনেএএ
দেখেছিইই,,!!
মেয়েটার কথা শুনে আমি দিয়ার দিকে
তাকালাম,,
দিয়া মেয়েটাকে ধমক দিয়ে বলল,
-- হিয়া এদিকে আস বলছি ৷
মেয়েটা বলল,,
-- না আমিইই যাব না, আমিইই
আনকেলের কাছেএএ থাকবব,,!!
বলেই আমার গলা দুই হাত দিয়ে শক্ত করে
জড়িয়ে ধরল,,
দিয়া রেগে সেখান থেকে উঠে এসে
মেয়েটাকে আমার কোল থেকে টেনে নিয়ে
নিল,,
মেয়েটা কান্না শুরু করে দিল,,
তারপর অন্য দিকে মুখ করে বলল,,
-- আপনি এখন আসতে পারেন !
আর গিয়ে আপনার কাজ শুরু করে দেন,,
আমি সেখান থেকে বেরিয়ে আসলাম,,
দিয়ার কথায় আসি,,
.
নিয়ান বেরিয়ে যাওয়ার সাথে সাথেই দিয়া
কেবিনের দরজাটা লক করে এসে কান্না
করতে লাগল,,
দিয়ার চিৎকার দিয়ে কান্না করার ইচ্ছে
করতেছে,
কিন্তু অফিস বলে সেটা করতে পারছে না ৷
দিয়া হাত দিয়ে মুখ চেপে কান্না করতে
লাগল,,
কান্না করছে আর বলছে,,
আমি কি করে পারলাম আমার নিয়ানের
সাথে এরকম ভাবে কথা বলতে,,
যাকে আমি আমার জীবনের চাইতেও বেশি
ভালবাসি থাকে আমি কি করে পারলাম
এরকম অপমান করতে,,
এইগুলা বলছে আর মুখ চেপে কান্না করছে
দিয়া,
দিয়ার মেয়েটা তার মার কান্না দেখে বলল,,
-- আম্মু ততমি কেদ না, আমিই আর যাবব
না অইই আনকেলটার কাছে !
দিয়া ওর মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কান্না
করতে লাগল,,
আর বলল,,
-- তুই ওর কাছে যাওয়াতে আমি কাদছি না !
তুই ওর কাছে যাওয়াতে আমি আরও খুশি
হয়েছি ৷
বলেই দিয়া মেয়েটার কপালে একটা চুমু
খেল,,
দিয়া এখন বুঝতে পারল, কালকে শপিংমলে
কেন তার মনে হয়েছিল যে নিয়ান তার
আশেপাশেই ছিল,,
তারমানে সত্যিই নিয়ান শপিংমলে ছিল,,
দিয়া চোখের পানি মুছে জোরে একটা
নিশ্বাস নিল,,
এখন দিয়ার ভিতরটা একটু হালকা লাগছে,,
কারণ আজ পাচঁ পাচঁটা বছর পর নিয়ানকে
সে দেখল,,
.
.
আমি সামনে এগোচ্ছি আর ভাবছি এটাই
আমার প্রাপ্য ছিল,,
আমি মেয়েটাকে একসময় কত্ত কষ্ট
দিয়েছি,,
এখন মেয়েটার ছেয়ে দ্বিগুন কষ্ট আমি
পাচ্ছি, হ্যা এটাই আমার প্রাপ্য ৷
.
আমাকে অনেক্ষণ পর কেবিন থেকে
বেরিয়ে আসতে দেখে জিসান এগিয়ে
আসল,,
এসে বলল,,
-- কি ভাই, এতক্ষণ ধরে আমাদের পরি বস
আপনার কি পরিক্ষা নিচ্ছিল?(জিসান
আমাকে চোখ টিপে বলল)
-- .......(চুপ হয়ে আছি)
জিসান আবার বলল,,
-- সাবধান ভাই অন্য কোনো ধান্দায়
পইরেন না, আমাদের পরি বসটা কিন্তু
মেরিড !
আর আমাদের মেডামের হাসবেন্ড হচ্ছে
এই সারা কম্পানির মালিক !!
আমি বললাম,,
-- অহহ,,আচ্ছা !
-- আপনার মুখটা এমন লাগছে কেন ভাই?
আপনার কি কিছু হয়েছে?
আমি একটা নকল হাসি দিয়ে বললাম,,
-- না ভাই কিছু হয় নাই ! আব্বু আম্মুর
কথা একটু মনে পড়ছে ৷ তাই একটু মন
খারাপ,,!
-- আচ্ছা চলুন ভাই এখন কাজে লেগে
পড়ি,,!
.
আমি আমার চেয়ার টেবিলে বসলাম,,
আমার ডান সাইটে একটা মালয়েশিয়ান
ছেলে,
আর বা সাইটে একটা মেয়ে,,
দেখে মনে হচ্ছে বাংলাদেশিই,,
এই অফিসের প্রায় লোকই বাংলাদেশি,
মেয়েটা আমাকে তার পাশে বসতে দেখে
বলল,,
-- হায় আমি রাইসা রহমান,,
বলেই আমার দিকে তার একটা হাত বারিয়ে
দিল,,
আমি হাত বারিয়ে হ্যান্ডশিপ করতে
করতে
বললাম,,
-- আপনি কি বাংলাদেশি?
-- জ্বি..!
একটা কথা বলব?
-- হ্যা বলুন !
-- আপনি দেখতে অনেক হ্যান্ডসাম আর
কিউট !
আমি কিছু বললাম না, কষ্ট করে শুধু একটা
হাসি দিলাম ৷
.
আমি কম্পিউটার অন করার সাথে সাথেই
দিয়ার মেয়েটা এসে হাজির,,
আনকেল আনকেল বলে আমার কোলে
উঠে এসে বসল,,
আমি বললাম,
-- তুমি আবার আমার কাছে আসছ কেন?
তোমার আম্মু বকবে তো?
-- না বকবে না আমিইই আম্মুকে বলে
এসেছিইই !
-- আচ্ছা তোমার নাম কি?
-- হিয়া...!
দিয়ার ওর মেয়ের নামটা নিজের নামের
সাথে মিল রেখেই রাখছে,,
আমি দুইহাত দিয়ে ওর গাল টিপে বললাম,,
-- খুব সুন্দর নাম,,আর তুমিও অনেক
কিউট,,
-- আনকেল আমিও ততোমাকে এএটা
করিইই !!
বলেই ওর ছোট্ট ছোট্ট হাত দিয়ে আমার
গাল টিপে ধরে হাসতে লাগল,,
হিয়ার হাসি দেখি আমি ওর দিখে তাকিয়ে
রইলাম,,
হিয়া সেইম দিয়া মতই হাসে,,
তারপর হিয়া আমার দাড়িতে হাত দিয়ে
বলল,,
-- আনকেল এগুলার নাম কি?
-- এগুলার নাম দাড়ি !
হিয়া নিজের গালে হাত নিয়ে মুখ গুমড়া
করে বলল,
-- আমারর নাইই কেন?
হিয়ার কথা শুনে আমার হাসি চলে আসল,
আমি ওর কথা শুনে হাসতে হাসতে
বললাম,,
-- তোমার কোনোদিনও উঠবে -- তোমার কোনোদিনও উঠবে না
মামনি, কারণ তুমি মেয়ে ৷
আমি আবার বললাম,,
-- আচ্ছা মামনি তোমার আব্বু এখন কই?
-- আব্বুওও কে?
-- সেকি তুমি তোমার আব্বুকে চিন না?
দিয়া এতক্ষণ দাড়িয়ে দাড়িয়ে ওদের কান্ড
দেখছিল,,
আর হাসছিস..
নিয়ানের প্রশ্নে হিয়াকে চুপ থাকতে
দেখে,,
দিয়া ওদের দিকে এগিয়ে এসে বলল,,
-- হিয়া ওর আব্বুকে পাপা বলে ডাকে?
হঠাৎ কারো কথায় পিছন ফিরে তাকিয়ে
দেখলাম দিয়া,,
দিয়াকে দেখে আমি বসা থেকে উঠে
দাড়ালাম !!
#চলবে
0 Comments