মামাতো_বোন_যখন_অফিসের_বস..♥, .Part....5

চলে আসলাম আমার ঘরে। হঠাৎ আমার রুমে ঢুকে আমি যা দেখলাম তা দেখার জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না......
বড় মামা, ছোট মামা, মামী, মামাতো ছোট ভাই বোনেরা, সবাই আমার ঘরে বসে আছে। নানুও আছে, তাদের সাথে তানহাও..
আমাকে দেখার সাথে সাথে সবাই বসা থেকে উঠে আমার কাছে চলে এসে অস্থির ভাবে প্রশ্ন করতে লাগলো--







-- কেমন আছিস মেহেমেদ? কোথায় ছিলি বাবা এতটা বছর?( বড় মামা)
--তোর কি একটিবারের জন্য আমাদের কথা মনে পড়ে নাই? কেউ এভাবে ঘর ছেড়ে চলে যায় বাবা? (ছোট মামা)
-- ইস চেহারাটার কি হাল করে রেখেছিস, ভাগ্যিস তানহার সাথে দেখা হয়েছিল আর তানহা আমাদের কি সব কিছু খুলে বলেছে, না হয়তো তোকে আর কোনদিন খুঁজেই পেতাম না।( বড় মামী)
তারমানে তানহা সবাই কে বলেছে আমার কথা। ওকে নিষেধ করেছিলাম যেন কাউকে কিছু না বলে। আমি নিজেই একদিন সবার সাথে দেখা করতে আসব বলেছিলাম কিন্তু ও কথাটা রাখল না। আবার পিছনে দাঁড়িয়ে মুচকি মুচকি হাসছে পাজি মেয়ে একটা। আর আমি ভেবেছিলাম নানু সবাই কে বলেছে
-- তার মানে তানহা তোমাদেরকে আমার কথা বলেছে?
-- হ্যাঁ, ওই তো বললো। (ছোটমামী)
--যাই হোক তোরর কি কোনদিনও একটু কান্ডজ্ঞান হবে না মেহমেদ? (বড় মামা)
--উফ মামা নানু এ নিয়ে অনেক কথা বলেছে আমাকে। তুমি আবার শুরু করে দিও না প্লিজ।(আমি)
-- শুরু করে দিও না বললেই হলো, তুই আপার একমাত্র ছেলে, তোকে কি আমরা এভাবে ছেড়ে দিতাম। দেখাশুনা করতাম না তোর। তাই বলে তুই আমাদের ওপর রাগ করে চলে আসবি??
--মামা, রাগ করে কোথায় চলে আসলাম??
--তাহলে কেন চলে এসেছিস বল? এই চারটা বছরে না আমাদের খোঁজখবর নিয়েছিস না নিজের কোনো খোজ দিয়েছিস একটিবারও। (রাগী কন্ঠে)
--আমি মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছি।
--আহ এমনিতেই ছেলেটা এতো কষ্টের মধ্যে ছিল, তার ওপর তুমি এসে আবার রাগারাগি শুরু করে দিলে, চুপ করো তো। তোমার স্বভাব টা জীবনে পাঠাবে না।
তা হে রে বাবা কেমন আছিস তুই? ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করিস না তাই না? চেহারার কি হাল করে রেখেছিস, মুখটা একদম শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে. (বড় মামি)
--কই মামি ঠিকই তো আছি.
--হ্যা শরীরের যা অবস্থা, তাতে তো আমার মনে হয় না যে তুই নিজের যত্ন টা ঠিকমত নিয়েছিস..
--আমার কথা ছাড়ো তো, তুমি কেমন আছো মামী??( বড় মামি হচ্ছে আমার খুব পছন্দের একজন মানুষ। আম্মুর পরে তিনি একজন যে সবসময় আমার খেয়াল রাখতেন। আমার খোঁজ খবর নিতেন।)
--ভালো আছি বাবা, খুব ভালো আছি।
--এই সন্নাসীর মতো জীবন যাপন থেকে উঠিয়ে এবার একটা বিয়ে দিয়ে দাও দেখবে এমনিতেই সোজা হয়ে যাবে. (ছোটোমামী)
--তুমি কেমন আছো মামী?? তুমি তো দেখছি আগের মতই সুন্দরী আছো। এখনো দেখে মনে হয় না যে তুমি বিবাহিত। আমার কথা ছাড়ো, তোমারিই কিন্তু এখন বিয়ে দেওয়ার বয়স আছে।
আমার কান টেনে ছোট মামি বলল--
-- ওরে পাজি ছেলে, সম্পর্কে আমি তোর মামি হই না, তুই আমার বিয়ের কথা কিভাবে বলতে পারিস হুম..?(ছোট মামির সাথে আমি সবসময় রসিকতা করতাম. মজা করতাম. আর এবারের ন্যায় প্রতিবার ছোটমামী আমার কান টেনে দিত। আম্মু তো প্রায় সময়ই বলতো যে আমার কান নাকি ছোট মামী টানাতেই বড় হয়েছে)
--আরে আরে কি করছ, লাগছে তো।
-- দেখ মামা, যদি তোর ছোট মামীর বিয়ে টা ধরে দিতে পারিস। তাহলে হয়তো আমার জীবনে একটু শান্তি আসতে পারে। (ছোট মামা)
-- কি বললে তুমি? আমি তোমার জীবনে অশান্তি করে রেখেছি?(ছোট মামি)
--এটা আবার কখন বললাম?
-- বাড়িতে যাও তুমি, তোমার খবর নেব সেখানে।
--কি আর করতে পারবে সবসময়ের মত ঘ্যানঘ্যান, মশা-মাছিও এত ঘ্যান ঘ্যান করে না
--কি বললে তুমি(ছোট মামি খুব রেগে গিযেছে)
সবাই ছোট মামা আর ছোট মামির কথা শুনে হাসছে।
ছোট ভাই বোন গুলো আমাকে দেখেই জড়িয়ে ধরল। ওদের একটু আদর করলাম।
আমার ছোট মামার দুই মেয়ে নুসরাত আর ফাহিমা।
আর বড় মামার দুই মেয়ে এক ছেলে তানহা, পলাশ আর প্রিয়া। তানহাই সবার বড়।
পুরো ফ্যামিলি মিলে কয়েক ঘণ্টা গল্প করলাম। একসাথে ছোট ভাই বোন গুলোর সাথে সময় কাটালাম। নানু, ছোট মামী আর বড় মামী সবার জন্য রান্না করায় ব্যাস্ত,
তানহা কি দেখলাম বেলকোনিতে দাঁড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে। ওর এভাবে তাকিয়ে থাকা আমাকে যেন বারবার ওর মায়া ফেলছে। যতবারই মেয়েটাকে দেখছি ওর প্রেমে পড়ছি ততবারই। কিন্তু মুখ ফুটে কখনো বলতে পারেনি, "ভালোবাসি তোমায় তানহা, বড্ড বেশী"...
রান্না শেষ হলে সবাই খাবার টেবিলে একসাথে বসলাম। বড় মামা হঠাৎ বলে উঠল --
--খাওয়া শেষ করে কাপড়চোপড় সব গুছিয়ে নে.
-- গুছিয়ে নেব মানে?? কোথায় যাব আমি?
-- কোথায় যাবি মানে। আমাদের সাথে যাবি, আমাদের সাথে থাকবি।
--মামা প্লিজ.
-- কি. কি মামা প্লিজ হ্যা..?যেটা বলছি সেটা কর. বেশি কথা বলবি না.
-- তুমি আমার ছেলেটাকে বকাবকি শুরু করে দিলে। তোমার এই স্বভাবের কারণে আমার ছেলে মেয়ে গুলো হোস্টেলে পড়াশোনা করে। ঘরে আসতেই চায় না। (বড় মামী)
--তা আসবে কিভাবে. আসলে তো সব আওয়ারা গিরি বন্ধ হয়ে যাবে. যখন তখন বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে পারবে না, রাত্র জেগে মোবাইল টিপতে পারবে না,।
-- একটু চুপ করবে তুমি.
-- মামা আমি এখন আসতে পারব না
-- কেন.?
--আমার একটু সময়ের প্রয়োজন.
--কিসের সময়ের প্রয়োজন শুনি..? তোকে আমি আর একলা ছাড়ছি না. এই আমার শেষ কথা। আপার অবর্তমানে আমার তো কিছু দায় দায়িত্ব আছে তোর প্রতি নাকি..?
--চলে আয় না বাবা, কি করবি এখানে একা একা থেকে? আমাদের সাথে থাকলে মনটাও ভালো থাকবে. নিজেকে কখনো একা মনে করবি না.( বড় মামী)
-- ভাবী তো ঠিকই বলেছে মেহমেদ, কি দরকার তোর এখানে একা থাকার? চলে আয় না আমাদের সাথে।(ছোট মামা)
-- আমার তো শেষ কথা, তোকে বিয়ে দিয়ে, তোরঘরে একটা বউ এনে,তোকে সুখি দেখে তারপর আমি মরতে চাই। আমি আর কিছু চাই না (নানু)
--আমার একটু সময়ের প্রয়োজন
-- তোর কিসের সময়ের প্রয়োজন বলতো. এই চার বছরেো কি তোর এত সময় ফুরোয়নি??
--আহ বাবা, মেহমেদ যখন একটু সময় চাইছে নিজেকে সামলে নেয়ার, তখন ওকে একটু সময় দেওনা, হুট করে তো আমাদের সাথে গিয়ে মানিয়ে নিতে পারবে না।
-- যাক এতক্ষণে ম্যাডামের মুখ থেকে কিছু বের হলো (মনে মনে)
-- আচ্ছা ঠিক আছে তোর যত সময় প্রয়োজন তুই নেয়। কিন্তু একটি কথা বলে রাখি, যে দিন আমি তোকে বলবো এ বাড়ি ছাড়তে তোকে ছাড়তে হবে। আর এক মুহূর্ত এই বাড়িতে থাকতে পারবি না। ঠিক আছে..? --মাথা নাড়িয়ে বললাম হ্যাঁ বললাম.
বড় মামা বরাবরই একটু রাগী স্বভাবের মানুষ। তবে পরিবারের প্রতি তার দায়িত্ব টা যেন আকাশ ছোঁয়া। সবার প্রতি খুবই যত্নশীল, খুব কেয়ারিং,
ছোটবেলা থেকেই মামা আমাকে খুব আদর করতেন। কিন্তু উনার এই রাগী স্বভাবের কারনে উনার সাথে বেশি একটা কথা বলতাম না.
ছোট মামার সাথেই সব কথা বলতাম। সব সিক্রেট কথা গুলো ছোট মামাকে বলতাম। উনি আমার মামা কম বন্ধু বেশি। খুবই রসিক স্বভাবের মানুষ।
আমার নানুর তিন সন্তানের মধ্যে আম্মু ছিল সবার বড়। আর আম্মুর একমাত্র সন্তান হিসেবে সবাই আমাকে একটু বেশীই আদর করত।
সবার খাওয়া শেষ। এবার সবাই চলে যাবে।
বড় মামা যাওয়ার সময় ধমকের সুরে বলে গেল --
--আমার যেন আর বলতে না হয়. খুব জলদি বাড়ি ছেড়ে আমাদের কাছে চলে আসবি। বুঝতে পেরেছিস?
-- আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললাম।
বড় মামি কপালে একটা চুমু দিয়ে বলল --
--নিজের যত্ন নিস বাবা আর বর্তমান যে পরিস্থিতি বেশি রাত্র করে বাইরে থাকিস না, ঠিকমত খাওয়া দাওয়া করিস।
-- তুমিও নিজের যত্ন নিও মামী।
-- এবার একটু জিফ-টিএফ বানা। কয়দিন আর ব্যাচেলার থাকবি। তোর বয়সে আমার পেছনে যে কত মেয়ে ঘুরত তার কোনো হিসাবই রাখিনি।(ছোট মামা)
-- মামা তুমি আবার শুরু করে দিলে?
--আচ্ছা ঠিক আছে ভালোভাবে থাকিস আর খুব জলদি এখান থেকে আমাদের কাছে চলে আসিস.
--তুমিও ভালো থেকো
-- আর হ্যাঁ বিয়ের কথাটা যেন মাথায় থাকে (নানু)
--আরে নানু থাকবে থাকবে (জড়িয়ে ধরে)
নানু আমার মাথায় একটা চুমু দিয়ে চলে গেল। ছোট ভাই বোন গুলো কে আদর করলাম। ওরা বলল --
--মেহমেদ ভাই, তুমি তাড়াতাড়ি চলে এসো, তোমায় ছাড়া আমাদের একটু ভালো লাগে না। তোমার গল্প শুনতে খুব ইচ্ছে করে।
--ঠিক আছে, তোরা কিন্তু বেশি দুষ্টুমি করবি না, ঠিকমতো পড়াশোনা করবি, আমি খুব জলদি চলে আসব।
সবশেষে তানহা একটু মুচকি হাসতে হাসতে আমার কাছে আসলো। চোখ আমার চোখে রাখল। ইদানিং ওর চোখ যেন কথা বলে --
--শোন কালকে কিন্তু অফিস যাবি না.
--অফিস যাব না মানে. তাহলে কোথায় যাব?
-- কালকে আমি ফোন করলে তুই নিচে চলে আসবি। তোকে বাড়ির সামনে থেকে পিকআপ করে নেবো। তোকে নিয়ে একটি জায়গায় যাব।
--মাথা নাড়িয়ে বললাম আচ্ছা,,
সেই নজরকাড়া হাসি দিয়ে চলে গেল।
সবাই চলে গেল আমিও একটু প্রশান্তির ঘুম দিলাম। এক ঘুমে রাত পার হয়ে গেল ।
ফোনের আওয়াজে ঘুমটা হঠাৎ ভেঙে গেল। রিসিভ করতেই তানহার কন্ঠ
--কি রে, তুই এখনো ঘুমাচ্ছিস তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেশ হয়ে নে। 5 মিনিটের মধ্যে তোর বাড়ির সামনে আসছি।
বলেই ফোনটা কেটে দিলো।
ওর আসার কথা শুনে তারাতারি উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। ঠিক পাঁচ মিনিট পর ও বাড়ির সামনে আসলো এসে একটা কল দিলো। আমি নিচে চলে আসলাম। আমাকে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে কোন এক অজানা জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে।
পুরো গাড়িতে তানহা একটা কথাও বললো না.আমিও কোনো কথা বলিনি। আধঘন্টা পর খুব সুন্দর একটি জায়গায় গাড়ীটা থামলো।
চারিদিকে সবুজে ঘেরা, পাখির ডাক, অনেক বড় একটা পুকুর.
গাড়ি থেকে নামতেই তানহা কি দেখে আমি মুগ্ধ। আবার এক নতুন সাজে সেজে এসেছে।খুব মায়াবী লাগছে ওকে। এক অপরূপ সৌন্দর্য ওর মাঝে ফুটে উঠেছে।
ও আমাকে নিয়ে কিছুক্ষণ হাঁটার পর একটি পুকুরের সামনে ঘাসের উপর বসলো। চারিদিক খুব নিস্তব্ধ। নিঃশ্বাস ফেললেও যেন আওয়াজ হয়। এক থমথমে পরিবেশ।
ঝলমলে সকালে সূর্যের প্রতিফলন পুকুরের পানিতে পড়ছে। চারিদিকটা ঝিমঝিম করছে নীরবতার আড়ালে।
তানহা পুকুরের দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবছে।
পুরো পাঁচ মিনিট ধরে আমরা চুপ ছিলাম। কেউ কোনো কথা বলিনি।
হঠাৎ তানহা আমর হাতে একটা কাগজ দিয়ে বলল ওটা খুলতে। প্রশ্ন করলাম -
--কি এটা..?
--একটা চিঠি
--কিসের চিঠি?
--খুলেই দেখ না..
চিঠির কথা শুনে বুকের ভেতরটা যেন কেমন করে উঠলো??
আস্তে আস্তে চিঠিটা খুললাম..
চিঠিটা খুলতেই এবার আমি সারপ্রাইজড না...
রীতিমত Shocked খেয়েছিলাম..যা কখনো কল্পনাও করিনি...
কারণ চিঠিটা আমার লেখা, তানহাকে নিজের ভালোবাসার অনুভূতি জানাতে আমি চিঠিটা লিখেছিলাম।
তা প্রায় সাড়ে চার বছর আগের কথা, চিঠিতে লেখা ছিল,,," হৃদয়টাকে তোমার জন্য খালি রেখেছি তানহা, কারণ তোমায় জায়গা দিব বলি। এ হৃদয় তুমি ছাড়া অন্য কাউকে বসানো সম্ভব নয়,বড্ড ভালোবাসি তোমায় তানহা,, তোমায় ছাড়া আমার এ জীবন অসম্পূর্ণ। প্লিজ আমাকে ফিরিয়ে দিয়ো না"""..
শুধু এই টুকুই লিখেছিলাম চিঠিতে। কিন্ত কে চিঠিটা দিয়েছে সেটাও বুঝতে পারিনি। কারণ নিজের নাম লিখি নি তাই।
কিন্তু এ চিঠি ও কোথায় পেল..? এটা তো ওকে আমি দেইনি। কারণ যখন চিঠিটা লিখে আমি তানহাকে দিতে যাব। তখন ওর বাড়ির সামনে এক বন্ধুর কাছ থেকে শুনতে পাই,, তানহা তানিম নামে কাউকে ভালোবাসে। এবং ওর সাথে ওর বিয়ে ঠিক হয়েছে।
কথাটা শুনেই চোখটা যেন আমার পানিতে ছল ছল করছিল। না চাইতেও চোখ থেকে দু'ফোটা অশ্রু ফেলে ওর বাড়ির সামনে চিঠিটা ছুড়ে ফেলে চলে এসেছিলাম।
সেদিন খুব কেঁদেছিলাম।
হঠাৎ আমার চিন্তায় ব্যাঘাত ক্ষতি তানহা বলল --
--কিরে চুপ করে আছিস কেন? কিছু বল.
--কি বলবো বুঝতে পারছি না. এটা তো দেখছি আপনাকে প্রেম নিবেদন করেছে।
-- হুম,সাড়ে চার বছর আগে আমার বাড়ির সামনে এটা কুড়িয়ে পেয়েছিলাম।
--ও ও তা কে দিয়েছিল..?( না জানার ভান করে)
-- সেই মানুষটা কেই চার বছর ধরে খুঁজছি
-- পেয়েছেন তাকে
--জানি না (দীর্ঘশ্বাস ফেলে)
--জানিনা মানে?
-- তানহা চুপ করে পুকুরের দিকে চেয়ে আছে.
--আচ্ছা, আপনার তো বিয়ে ঠিক হয়েছিল তানিমের সাথে তাই না?
-- হুম,
-- তা বিয়েটা করলেন না কেন? তানিম কি আপনাকে ভালোবাসতো না?
-- হয়তো বাসত আবার না.
--মানে?







--হঠাৎ আমার মনে হলো, হয়তো তানিম এর থেকেও আরো অনেক বেশি ভালোবাসার মানুষ আমার জন্য এই পৃথিবীতে আছে, যে আমাকে অনেক ভালোবাসে
-- সেই মানুষটা কে? যে চিঠিটা লিখেছে?
--জানিনা, বলতে পারব না।(পুকুরের দিকে তাকিয়ে) --তানিমের সাথে বিয়ে ভাঙার কারণ টা কি? বিয়েটা তো পারিবারিক সূত্রে হয়েছিল তাই না? আপনার সম্মতিতেই?
--তানিম আমাকে কখনো ভালবাসেনি, ওর ভালোবাসাটা ছিল দেখানো, জাস্ট টাইম পাস, সব অভিনয়।
তবে ও এতটাই ধূর্ত ছিল যে অভিনয়টা আমি ধরতে পারিনি, ঠকে গেলাম ওর কাছে। তারপর বাবা কে বলে আমি নিজেই বিয়েটা ভেঙে দিলাম।
--কিভাবে বুঝবেন যে তানিম আপনার সাথে অভিনয় করছিল, ভালবাসেনি আপনাকে?
--ও অন্য একটি মেয়েকে ভালোবাসতো। নিজের চোখে ওকে অন্য একটি মেয়ের সাথে ডেটিং করতে দেখেছিলাম।
--ও,, নিশ্চয়ই আঘাত পেয়েছিলেন, কষ্ট পেয়েছিলেন অনেক?
--হুম, তা পেয়েছিলাম। তবে নিজেকে সামলে রেখেছিলাম,,, তারপর থেকে আমার শুরু হলো অপেক্ষার প্রহর গোনা।
-- অপেক্ষার প্রহর? কার জন্য?
--যে আমাকে সত্যিকারের ভালবাসে তার জন্য।
--জানেন কি সে মানুষটা কে?
--হয়তো জানি আবার না..
দুজনেই সামনের পুকুর টাতে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছি। যেন অজানা কোন নীরবতা আমাদেরকে গ্রাস করেছে
দিনের বেলাতেও এই জায়গাটা খুব নীরব। কারো আনাগোনা নেই।
হঠাৎ তানহা পুকুরের দিকে তাকিয়ে থেকেই প্রশ্ন করল--
-- আচ্ছা মেহমেদ, ভালোবাসা আসলে কি রে।
--বলতে পারব না..( ও দিকে তাকিয়ে থেকেই উত্তরটা দিলাম)
--একটি মানুষ আমাকে সত্যিকারের ভালোবাসে তা বুঝবো কিভাবে আমি।
-- যার ভালোবাসা যত গভীর, সে ভালোবাসার প্রকাশ ততটাই কম।
--সে আমাকে ভালোবাসে অথচ প্রকাশ করলো না। আমি বুঝবো কিভাবে সে আমাকে ভালোবাসে।
--শব্দ তো হয় অগভীর নদীর, সে শব্দ করে বয়ে চলে। তার মানে এই নয় যে তার গভীরতা অনেক। যে নদীর বয়ে চলার শব্দ কম তার গভীরতাই বেশি।
--হুম,তা ঠিক.
আমাদের দুজনের মাঝে নিস্তব্ধতা। দুজনই চুপ করে সামনের দিকে চেয়ে আছি। হুট করে পাশ দিয়ে এক বাদামওয়ালা যাচ্ছিল। তানহা কে বললাম --
--বাদাম খাবেন.
-- তুই খাওয়ালেই খাব, কেন খাব না?( মুচকি হেসে)
তানহাকে বাদাম কিনে দিলাম, আমিও বাদাম নিলাম।দুজনেই চুপ ছিলাম। হঠাৎ আমি কিছু প্রশ্ন করলাম--
-- আচ্ছা যদি কখনো কোনদিন ওই চিঠি লেখা মানুষটা আপনার সামনে এসে বলে, ভালবাসি।সেদিন আপনার উত্তরটা কি হবে।
-- জানিনা সেদিন আমার উত্তরটা কি হবে. তবে হ্যাঁ সেদিন ওই চিঠি লেখা মানুষটা কি একটি প্রশ্ন অবশ্যই করবো,
-- কি প্রশ্ন?
-- সে সত্যিকার অর্থে আমাকে ভালবাসে কিনা?
-- হয়তো বাসে?
-- তাছাড়া সে চিঠি লেখা মানুষটা যে আজও আমার জন্য অপেক্ষা করে আছে তারই বা কি নিশ্চয়তা আছে?
-- সত্যিকার অর্থে যেভালোবাসে, ভালবাসতে জানে তাদের অপেক্ষার প্রহর কোনদিন শেষ হয় না। আমৃত্যু থাকে।
--আজকাল এরকম ভালোবাসার মানুষ খুজে পাওয়া খুব দায়.
-- মন দিয়ে খুঁজলেই সেরকম ভালবাসার মানুষকে খুঁজে পাওয়া অতটাও কঠিন হবে না.
-- হুম, তুই জানিস তোকে চিঠিটা কেন দেখালাম?
-- কেন?
--কারণ আমি জানি এই চিঠিটা যে লিখেছে তার ভেতরের অনুভূতি, আবেগ, ভালবাসার পরিমাণ কতটুকু তা তা তুই অনুভব করতে পারবি। তোর মধ্যে সে ক্ষমতা আছে। বল না রে, সেই মানুষটা সত্যিকার আমাকে ভালবাসে কিনা?
--চিঠি দেখে কারো ভালোবাসার পরিমাণ মাপা যায় নাকি??( একটু হেসে)
-- মাপা যায় না??
-- ভালবাসার পরিমাণ মাপতে হলে মনের মধ্যে ভালোবাসা থাকতে হয়, ভালোবাসতে জানতে হয়।
-- তোর কি মনে হয়? আমার মনটা কি পাথর? আমি কাউকে ভালোবাসতে জানি না?
--না না আমি ঠিক তা বলিনি.
ছোটবেলা থেকেই আপনাকে যতটুকু দেখেছি, আপনার ভালোবাসা কোমল,পবিত্র। সেই মানুষটির জীবন অনেক ধন্য হবে, সে অনেক ভাগ্যবান হবে যে আপনার ভালোবাসা পাবে।
--আমাকে সান্ত্বনা দিচ্ছিস?? (একটু হেসে)
--তা দিতে যাব কেন? সত্যিই বলছি.
-- আচ্ছা সত্যি করে বলতো, তোর কোন ভালোবাসার মানুষ আছে। তাই না??
তানহার মুখে কথাটা শুনে আমি অবাক হলাম। ওর দিকে তাকিয়ে বললাম --
--হঠাৎ এই কথা না?
--আসলে কলেজ লাইফে এতগুলো মেয়ের প্রপোজাল পেলি। একটাও এক্সেপ্ট করলিনা। সব রিফিউজ করে দিলে। নিশ্চয়ই এর প্রসঙ্গত কোন কারণ আছে? আর না হয় তুই কাউকে পছন্দ করিস?
-- এ প্রসঙ্গ টা বাদ দেওয়া যায় না?
--তোর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে যখনই কোনো প্রশ্ন করতে চাই, তুই কথাটা অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিস। কেন রে?
-- মানুষের জীবনের সব চাওয়া কি পূরণ হয়। কিছু চাওয়া অসম্পূর্ণই থেকে যায়।
--তোর কোন চাওয়টা অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে মেহমেদ??
বলা যায় কি?
-- সময় আসুক আপনাকে ঠিক বলবে একদিন।
--তার মানে সেই সময়টা কোনদিন আসবেনা.
--কেন এ কথা মনে হলো?( হেসে বললাম)
--কারণ তুই তোর পার্সোনাল লাইফ নিয়ে খুবই স্পর্শ কাতর। কাউকে কখনো সহজে আন্দাজ করতে দিস না যে তোর জীবনে কি ঘটছে। কি ঘটতে চলছে।
--আমি মাথা নিচু করে চুপ করে শুধু হাসছি।
-- আচ্ছা দাদি তো খুব তড়িঘড়ি করে তোর বিয়ের জন্য মেয়ে দেখা শুরু করে দিয়েছে। দাদীর পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করবি নাকি নিজের পছন্দের??
--সেটা জানি না. তবে এটুকু জানি নানুর কাছে আমার পছন্দ-অপছন্দের একটা দাম আছে.
আমার কথা ছাড়ুন, যদি ওই চিঠি লেখা মানুষটি কোনদিন না আসে তাহলে কি করবেন?
--জানিনা
-- মামার পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করবেন?
--তাও জানিনা.
-- তানিম কে খুব ভালোবাসতেন তাই না?
--অনেক কিন্তু এখন ও আমার কাছে মৃত।
--হুম,
-- শোন একটা কথা বলি?
-- বলুন,
--তুই মানুষের মন পড়তে পারিস?
--কেন?
-- শুনেছি যারা মানুষের মন পড়তে পারে তারা নাকি অন্যের জীবনের ভালোবাসা, অনুভূতি, কষ্টগুলো অনুভব করতে পারে। তুইতো খুব ভালো সাহিত্য পারিস। ভালবাসার মানেটা তুই আমার থেকে ভাল জানিস। ভালোবাসা মানে কি??
--এক স্বর্গীয় অনুভূতি, যা মানুষের হৃদয়ে প্রশান্তি এনে দেয়। অফুরন্ত সুখের সন্ধান এনে দেয়. সুন্দরভাবে বাঁচতে শেখায়. হৃদয়কে পবিত্র করে. ভালোবাসার মানুষটির জন্য সারাক্ষণ চিন্তিত থাকা, তার কষ্টে কষ্ট পাওয়া, তার হাসি দেখে পৃথিবীর সকল কষ্ট ভুলে যাওয়া, সুখে দুখে তার পাশে থাকা, তাকে অসম্ভব ভালোবাসা। এটাই আমার কাছে ভালোবাসার মানে। --খুব ভালো বলতে পারিস তো,
-- ওর কথা শুনে আমি একটু হাসলাম.
এভাবেই প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয় কথার মধ্য দিয়ে দুপুরটা গড়িয়ে গেল।
সারাক্ষণ ওর সাথে ঘুরে বিকেলে বাড়ি ফিরলাম। অফিসে কিছু কাজ ছিল তা শেষ করে ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে সোজা অফিসে চলে গেলাম। আজ একটু তাড়াতাড়িই চলে আসলাম। তানহা এখনো অফিসে আসেনি।
এসে চেয়ারে বসতেই অফিসের কাজ করতে শুরু করলাম। হঠাৎ আমার সহকর্মী মিস শায়লা এসে আমাকে বললেন--
-- হ্যালো মিস্টার মেহমেদ?
--হ্যালো মিস শায়লা, কেমন আছেন?
-- অনেক ভালো আপনি কেমন আছেন?
--আমিও..
-- আজকে আপনাকে একটু অন্যরকম লাগছে মনে হয়?
-- যেমন?
-- এই যেমন মনে হয় কাউকে ইমপ্রেস করার চেষ্টা করছেন.
-- হঠাৎ এই কথা??
-- আজকে খুব হ্যান্ডসাম লাগছে আপনাকে. শার্টটা নাইস, কে গিফট করলো, হুম??
মিস শায়লা খুব একটা মিথ্যা বলেনি। আজকে তানহার গিফট করা ব্ল্যাক শার্ট টা পড়ে এসেছি। হয়তো নিজের অজান্তেই ওকে ইমপ্রেস করার চেষ্টা করছি।
--আরে না না.. ওরকম কিছু না,
-- সবিই বুঝি মিস্টার. কার প্রেমে পড়েছেন হুম।
আমি মিস শায়লার কথা হেসে উড়িয়ে দিলাম।অবশ্য প্রেমে তো আমি পড়েছি। তানহার প্রেমে..
হঠাৎ তানহা অফিস রুমে এসে গেল এসে দেখল যে আমি আর মিস শায়লা গল্প গল্পগুজব আর হাসি ঠাট্টা ব্যাস্ত। তানহা বোধহয় খুব ভালোভাবে নেয়নি ব্যাপারটা। আর এসেই লংকা কান্ড বাধিয়ে দিল তানহা--
চলবে...

Post a Comment

0 Comments