একটি সত্যিকারের ভালোবাসার গল্প। একটি সত্যিকারের প্রেমের গল্প
“আমি তোমাকে অসংখ্য ভাবে ভালবেসেছি, অসংখ্যবার ভালবেসেছি এক জীবনের পর অন্য জীবনেও ভালবেসেছি, বছরের পর বছর, সর্বদা, সবসময়।”
সত্যি তাই। যদি ভালোবাসার মত ভালোবাসা যায় তবে প্রতিক্ষণে নিজের মানুষকে নবীন লাগে, নতুন ভাবে খুঁজে নেওয়া যায় নিজের ‘মন মাধুরী‘ কে। নিজের মানুষ যেমনই হোক, তাকে স্বীকার করে যত্নে ভালোবেসে মুড়ে রাখার মধ্যে নিহিত থাকে হাজারো সুখ। এই দিনে সবাই কারণ দেখিয়ে দূরে সরে যায় কিন্তু কাছে থাকার কারণ দেখিয়ে কয়জনে আর থেকে যায়!
লেখক এমনই এক ব্যতিক্রমী চরিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন আজকের গল্পে। যে নিজের মানুষকে ভালোবেসে আগলে রাখার চেষ্টায় হাড় না মানা যোদ্ধা সর্বদা, সবসময়, সর্বক্ষণ।।
একটি সত্যিকারের ভালোবাসার গল্পঃ- “ঝাল মুড়ি”
ফিরতে দেরি হয়ে গেছে। ওরা জোর করলো বলেই এবার আমি নাটক টা করছি। ছুটকি বোধহয় আজ আসবে না রিহার্সালে। কাল যখন ওকে কথা গুলো বলছিলাম ওর চোখটা প্রায় ভিজে এসেছিল। ছটফটে সারাক্ষণ অকারণে হেসে যাওয়া, হালকা চরিত্রের মেয়ে ও। গম্ভীর নীরব হয়ে চুপচাপ কথা শোনার মেয়ে ও নয়। কিন্তু কাল সব কথা শুনলো , কোন বকবক করলো না। বুঝতে পারছি অনেক কষ্ট হয়ত ও পেয়েছে। ওকে আমি আঘাত করতে চাইনি। কিন্তু আমি কতটা অসহায় সেটা ও কি করে বুঝবে!
খবর কাগজ হেডলাইন হয় ১০০০ দিন অবস্থান বিক্ষোভের খবর। কিন্তু ১০০০ দিন মানে যে তিনটা বছর কেটে গেলো সে হিসাব কি কেউ রাখে! কলেজ জীবনে আমার , বন্ধু বান্ধবরা যখন সিনেমা দেখে প্রেম করে বেড়াচ্ছিল, আড্ডা মেরে জীবন টা উপভোগ করছিলো, তখন আমি লাইব্রেরিতে মুখ গুঁজে G.k বই পড়েছি।
পূজার হাতখরচ বাঁচিয়ে সরকারি চাকুরি পাওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা মুলক পরীক্ষার প্রশ্ন উত্তর বই কিনেছি। কিন্তু অনেক গুলো পরীক্ষা অকৃতকার্য হয়েও হাল না ছেড়ে শেষে স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় পাশ করলাম। বাড়িতে সবার মুখে হাসি ফুটে উঠলো। ছুটকি ও খুশি হয়েছিলো খুব। মজা করে বলছিলো ” তাহলে সত্যি সত্যি তুমি ষাঁড় হয়ে গেল।”
হুঁ ও আমাকে ষাঁড় বলে ডাকে আসলে এর পিছনে একটা গল্প আছে।
মা মরা মেয়ে ছুটকি। ও ওর বাবার দিদার আদরে বাদর। ওর দিদি পড়াশোনা জন্য চ্যাঁচামেচি করতো। তাই আমাদের বাড়িতে বেশি পড়ে থাকতো। ওর দিদির বিয়ের পর , ওর পড়াশোনার দায়িত্ব কিছুটা আমাদের ওপরে। তাই এক সময় দাদুর হুকুমে ওকে অঙ্ক শেখানোর দায়িত্ব আমার ওপর পরলো। সমীকরণ অঙ্ক। গরু মহিষ কেনা বেচার অঙ্ক। ও উত্তর বেড় করলো। আড়াই খানা গরু, মহিষ সাড়ে তেরোটা। গাঁট্টা মারতে যাবো তখন যুক্তি দিয়েছিলো দু’টো গরু একটা বাছুর। সবাই হেসে লুটিয়ে পড়েছিলো ওর উত্তরে।
আমি বলছিলাম ” হ্যাঁ ঠিক একটা তুই একটা তোর বর আর একটা তোর বাচ্চা।”ওকে গরু বলেছি তাই ও আমাকে ষাঁড় বলতে শুরু করল।
পড়ুনঃ- অসাধারণ শিক্ষণীয় সব গল্প
হুঁ ছোট বেলা থেকেই ও আমাকে ভালোবাসে। কিন্তু আমি অসহায়। সরকারি চাকুরি পরীক্ষা পাশ করেও চাকুরিটা জুটলো না। যদিও পাড়ার মন্টু বাবু বলেছিলেন , দুই লাখ টাকা দিলে, ভিতরে থেকে একটা ব্যবস্থা করে দেবেন। কিন্তু আমার এত কষ্ট, এত ত্যাগ, মেধার কি কোন মূল্য নেই! ১০০০ দিন অবস্থান বিক্ষোভের পর আমি খুব হতাশ হয়ে পরলাম।
গুগল নিউজে ছাড়পত্র-কে ফলো করতে এখানে প্রেস করুন।
আজ তাই বদলে ফেললাম জীবন। কাঁচা আর সেদ্ধ ছোলা , একটু চানাচুর, একসাথে একটু মশলা দিয়ে, পেঁয়াজ আর গন্ধরাজ লেবু দিয়ে মাখা। তার উপরে মুচমুচে ঝুরি ভাজা ছড়িয়ে , সেটা বাড়িয়ে দাও খদ্দেরের হাত। যাত্রীদের জিভে স্বর্গসুখ দেওয়াই আমার রোজকার জীবনের গল্প। স্বপ্নের মৃত্যু থাকলেও খিদের মরণ নাই।
তাই ওকে অপমান করলাম অত। যাতে ও সরে যায় আমার জীবন থেকে। ওর বাবা সেইদিন বলছিলো। ঘটক ওর জন্য একটা ভালো ছেলের খবর এনেছে। ছেলে বিদেশে কেটারিং সার্ভিস কোম্পানিতে চিপ স্টুয়ার্ড কাজ করে। মাইনে অনেক।ক্লাবে ঘরে ঢুকে দেখি , ছুটকি এসে গেছে। ওর যেন কিছুই হয় নি। আমার সাথে ঠাট্টা তামাশাও করলো।
রিহার্সাল শেষ হতে একসাথে বাড়ির ফেরা পথে , ও আমার হাত ধরলো আগের মতো করে। যেন কিছুই হয় নি। আমতা আমতা করে আমি বললাম ” I am Sorry.. কালকে খুব বাজে ব্যবহার করে ফেলেছি তোর সাথে।”
পড়ুনঃ- রহস্যে রোমাঞ্চে ভরা কাহিনী
ও বলল ” তাই বুঝি, কিন্তু শুকনো কথায় চিড়া ভিজবে না। শাস্তি পেতে হবে।”
আমি বললাম ” শাস্তি, কি শাস্তি পেতে হবে শুনি..”
ও বললো “কাল সন্ধ্যায় প্রিন্সেপ ঘাটে দেখা করতে হবে। সাথে খাওয়াতে হবে তোমার হাতের ঝাল মুড়ি।”
ঝাল মুড়ি কথা শুনেই আমি থমকে দাঁড়ালাম। আমি ঝাল মুড়ি বেঁচি সেটা কেউ জানে না। নদীয়া, রানাঘাট, কল্যাণী, উত্তর ২৪ পরগনার লোকাল ট্রেনে গুলো তে বেঁচি ঝাল মুড়ি। কেউ জানার কথা নয় । ও জানলো কি করে?
ও বললো ” আমার খবর তো তুমি কিছুই রাখো না। আমি তোমার সব খবর রাখি। আমি এম এ তে ভর্তি হয়েছি কল্যাণী ইউনিভার্সিটিতে। ট্রেনে যেতে গিয়ে তোমাকে দেখেছি। তুমি কষ্ট আছো। তাই আমাকে অত কথা শুনিয়েছ জানি। শিক্ষিত হয়েও অশিক্ষিত মানুষের মতো কাজ। হতাশার সময় বৌ পেটানো পুরুষ মানুষ। কিন্তু অসময়ে তোমাকে ছেড়ে যাবো তুমি ভাবলে কি করে? যে মানুষ ভালোবাসে সে আজীবনের জন্য ভালো বাসে, সুখে দুঃখ সব সময় পাশে থাকে। তাছাড়া তুমি যা কৃপণ ওই ঝালমুড়ি, ফুচকা খাওয়ানো ভয় বোধহয় প্রেম করলে না আমার সাথে কোন দিন।
যাই হউক এখন ঝালমুড়ি খেতে খেতে প্রেম করবো দুই জনে।
গল্পের পরিবেশনায়-
মানব বাবুর লেখা যে গল্প গুলি পাঠকের মন কেড়েছে- ভালোবাসার ছোট গল্প- এক পশলা বৃষ্টি বাছাই করা সেরা কয়েকটি অনুগল্প
গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে।
সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- ফেসবুক Group - গল্প Junction ফেসবুক- ছাড়পত্র টেলিগ্রাম- charpatraOfficial WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)
হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া অসাধারণ একটি সত্যিকারের ভালোবাসার গল্প। একটি সত্যিকারের প্রেমের গল্প। 1 Real love story bangla.
from ছাড়পত্র https://ift.tt/tRmT61i
via IFTTT
0 Comments