জীবন নিয়ে গল্প। পরাজিত জীবনের গল্প। 1 awesome emotional story of life. bengali very sad story.

জীবন নিয়ে গল্প টিতে প্রেম কে ভালোবাসায় রূপান্তরিত করতে না পারার এক পরাজিত জীবনের গল্প তুলে ধরা হয়েছে। গল্প সম্পর্কিত মতামতের জন্য কমেন্ট বক্স আছেই।

জীবন নিয়ে গল্পঃ- “মুক্তি”

পাঁচ বছর পর বাড়ি ফিরছি আবার। আমার চেনা রাস্তা গ্রামের বাড়ি আর ওই শিমুল তলা, সব কিছু কেমন যেন বদলে গেছে। আর বদলে গেছে আমার চেনা সেই প্রিয় নদীর ঘাটটা , বর্ষাকালের জল আর সেখানে বোধহয় কাদা করতে পারে না কারণ পুরোটাই সিমেন্টের বাঁধানো বেশ সুন্দর সিঁড়ি দেওয়া। ওই নদীর ঘাটে কয়েকটা মেয়ে জল ছুড়াছুড়ি করে স্নান করছে দেখে ওদিকে আর গেলাম না।

তবে রাস্তায় দেখা হলো একটা নতুন মেয়ের সাথে , দেখে বুঝতে পারলাম সদ্য বিয়ে হয়েছে হয়ত মেয়েটার , তাই একেবারে মাথার ওপর অবধি ঘোমটা টানা। নানা ভুল ভাবছেন , এটা আসলে গ্রাম তাই এখানের সংস্কৃতি এই বউ মানুষদের মাথায় ঘোমটা টেনে আর শ্বশুর ভাশুর গণ্য করে চলা। যাই হোক সেসব কথায় আমার কোনো মাথা ব্যথা নেই। আর সেই মাথা ব্যথা না থাকার কারণেই এত বছর পর আমার গ্রামে ফেরা।

আমার নাম ধাম জানিয়ে খুব একটা লাভ নেই , কারণ এতটাও জনপ্রিয় নই যে আপনারা কেউ আমার নামটা জানার পর, অবাক ভাবে পড়ে বলবেন আরে ইনার নিয়ে তো অনেক শুনেছি, তাই সরাসরি আমার জীবনের গল্পতেই আসি।

জীবন নিয়ে গল্প
জীবন নিয়ে গল্প

আমি খুব সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের একটা মেয়ে । যার স্বপ্ন গুলো সবার অনাকাঙ্ক্ষিত। তাই এক কথায় বলতে গেলে আমি আজ সর্বহারা। আমার আপন বলতে কেউই আর নাই।.

কলেজ লাস্ট ইয়ার তখন , যখন আমি বাড়িতেই বিভিন্ন পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করেছি । এদিকে প্রস্তুতি নিতে গিয়ে দেখতে দেখতে দুটো বছর পেরিয়ে গেলেও কোথাও কোনো কাজের সংস্থান করতে পারলাম না । দিন যত যেতে লাগলো আত্মীয় পরিজনেরা বিয়ের জন্য চাপ দিতে শুরু করলো। বাবাও দিন দিন কেমন যেন বদলে যেতে লাগলো , বিয়ের নিয়ে কথা বার্তা শুরু হলো বাড়িতে।

এদিকে অপেক্ষারত আমার ভালোবাসার মানুষটাও কাজের জন্য তখন হন্যে হয়ে বেড়াচ্ছিল। সেও কোথাও কিছু কাজ পেলেই আমার কথা তার বাড়িতে জানাবে বলে আসায় দিন গুনছিল । কিন্তু একদিকে পরিবারের চাপ অন্যদিকে ভালোবাসার মানুষটাকে দেওয়া কথা রাখার চাপে, বুঝে উঠতে পারছিলাম না , আমার ঠিক কি করা উচিত !

পড়ুনঃ- হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়ার মত একটি মর্মস্পর্শী গল্প

একসাথে সব সমস্যা যেন আমার জীবনটাকে ঘিরে ধরেছিল। মনে হচ্ছিল এখানেই জীবনের শেষ , তবে না ! ঠিক সেই সময় সেন্ট্রাল ফোর্স এ ফর্ম বের হয়। আর কোনদিকে না ভেবে আমি সরাসরি ফর্ম ফিলাপ করে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে শুরু করি। তখন আমার একমাত্র লক্ষ্য যেভাবে হোক একটা কাজ পেয়ে , ভালোবাসার মানুষটাকে সারাজীবনের মত নিজের করা।

কিন্তু না ! অবিশ্বাস্য ভাবেই পরিবারের সাথে সাথে সেই মানুষটাও আমার পরিস্থিতি টা বুঝলো না । সরাসরি জানিয়ে দিলো, এই সমস্ত প্রফেসেনে গেলে সে আর আমায় বিয়ে করতে পারবে না । এমনকি আমার সাথে কোনো যোগাযোগ ও রাখবে না।

সে যেভাবে ইচ্ছে একটানা অপমান করেই গেলো , কিন্তু একবারও আমার পরিস্থিতি বা মনের অবস্থাটা বোঝার চেষ্টা করলো না । সেদিন তার মুখ থেকে আমি শুধু একটাই কথা শুনতে চেয়েছিলাম , ” যাই হয়ে যাক আমি তোমার পাশে আছি আর হুম আমি তোমাকে ওই প্রফেসেন যেতে দেবো না “। কিন্তু একবারও সে এই কথা বলেনি শুধু শেষে বলেছিল , কি করবে না করবে সেটা তোমার ব্যাপার বাকিটা নিজে বুঝে নাও ।

পরাজিত জীবনের গল্প
পরাজিত জীবনের গল্প

খুব অদ্ভুত ভাবেই সেদিন জীবনের চরম শিক্ষাটা আমি পেয়ে গিয়েছিলাম। যাকে পাওয়ার জন্য আজ এই প্রফেসেন এ যেতেও একবারও ভাবিনি সে, কি সুন্দর ভাবে নির্দ্বিধায় সমস্ত কিছু আমার ওপর চাপিয়ে চলে গেলো। তাই সেদিনের পর আর পেছন ফিরে তাকাইনি। খুব মনোযোগ লাগিয়ে শেষমেশ সব ধাপ শেষ করে পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে পাড়ি দিলাম ট্রেনিং করতে । এরপর আর কখনো বাড়ি আসার আগ্রহ জন্মেনি । দীর্ঘ পাঁচ , পাঁচটা বছর কেটে গেছে , এর মধ্যে দেখুন না কত কিছু বদলে গেছে কিন্তু মানুষ গুলো কি বদলে গেছে ?

পড়ুনঃ- ছাত্রদের জীবনের মোটিভেশনাল গল্প 

দূর থেকে দেখলাম কফিনের ভেতর আমার দেহ টা কে দেখে আমার মা বাবা সবাই খুব কান্নাকাটি করছে আর সেই যে মেয়েটা মাথায় ঘোমটা দেওয়া , তাকে সাথে নিয়ে আমার সেই ভালোবাসার মানুষটা আমার নিথর দেহটাকে দেখতে এসেছে । বুঝতে পারলাম তার মানে সেই নতুন মেয়েটা আমার প্রাক্তন এর স্ত্রী। তার মানে এবার আমি মুক্তি নিতেই পারী কি বলেন ?

আসলে আমার ইচ্ছেই ছিল না আর কখনো এখানে ফেরার। কিন্তু সেদিন সীমান্তে গুলি লেগে আমার দেহ টা নিথর হয়ে গেছে আর তাই শেষকৃত্য সম্পন্ন করতেই তারাই দায়িত্ব সহকারে আমার দেহটা গ্রাম এসে পৌঁছে দিয়ে গেছে । এযাবৎ কেউই খুব একটা যোগাযোগ করার চেষ্টা করেনি আমার সাথে। কিন্তু আজ দেখুন কীভাবে সবাই কান্নাকাটি করছে।

bengali very sad story
bengali very sad story

আর আমার প্রাক্তন, সে তো তার স্ত্রী কে জড়িয়ে চোখের জল মুছছে। কতটা কষ্ট হচ্ছে তার আমি জানি না কিন্তু সে হয়ত আমার ওই দেহটাকে প্রমাণ দিচ্ছে, তার চোখের জল ফেলার একটা নিরাপদ আশ্রয় সে পেয়ে গেছে, আমি তার কাছে মূল্যহীন। হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিক পড়েছেন মূল্যহীন।

শেষমেশ তাই সবাইকে রেখে এখানেই আমার মুক্তি।।

নাইবা পেলাম হারিয়ে যাওয়া রূপকথার সেই জিয়ন কাঠি
যার ছোঁয়ায় আবারো জীবিত হয়ে ফিরতো শ্বাসের গতি ।।

আলোরানি মিশ্র

গল্পের কল্পকথায়-

গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে।

সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।

পড়ুনঃ- 
অসাধারণ সব শিক্ষণীয় গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

দারুণ দারুণ সব হাসির গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- 

ফেসবুক Group - গল্প Junction 

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

WhatsApp Group- ছাড়পত্র () 

জীবন নিয়ে গল্প। পরাজিত জীবনের গল্প। awesome emotional story of life. bengali very sad story.



from ছাড়পত্র https://ift.tt/6DMbjn3
via IFTTT

Post a Comment

0 Comments