গ্রামের ছেলে দিনেশ। টিউশন পড়িয়েই তার সারাদিন কাটে। এই রহস্যময় রাত গল্প টিতে সেই দিনেশের সাথে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে। কোন এক রাতে আমাদের বাড়ি এসে সে সবার সামনে তার সাথে ঘটে যাওয়া সেই ভয়ানক রাতের ঘটনাটি ভাগ করে নেয়।
রহস্যময় রাত গল্পঃ-
টিউশন পড়িয়ে বাড়ি আসতে দিনেশের রাত ১১ টা বেজে যায়। ইংরেজি তে পি এইচ ডি ধারী দিনেশ পড়াশোনায় আগাগোড়া ভালো। কিন্তু চাকরির আশায় সে বসে থাকলেও তার বয়স যে বসে নেই। উপরন্তু তার বাবা সব টাকা তার পিছনে শেষ করেছে। এমনকি তাদের বাস্তু ভিটে পর্যন্ত মহাজনের কাছে বন্ধক রেখে দিনেশের পড়ার পিছনে খরচ করতেও পিছুপা হননি দিনেশের বাবা।
মনে আশা ছিল ছেলে একজন প্রফেসর হবে, কিন্তু সেই আশায় থেকে থেকে ছয় মাস আগে দিনেশের বাবাও শুভ বিদায় জানিয়ে চলে গেলেন অজানা কোন এক দেশে। বাড়িতে ছোট বোন আর মা। সংসারের হাল এসে পড়ল দিনেশের উপর। একসময় চাকরির আশায় হন্যে হয়ে ঘুরতে থাকা দিনেশ এখন দিন রাত টিউশন পড়িয়ে বেড়ায়। আর বাড়ি আসে রাতে।
মায়ের বারণ না শুনেই সে রাতের টিউশন করিয়ে যাচ্ছে। কারণ একটাই এই বাস্ত ভিটে মহাজনের খপ্পরে যেন না পড়ে।
এরকমই একদিন রাত ১০.৩০ নাগাদ দিনেশ, বাবলু দের বাড়ি থেকে টিউশন পড়িয়ে ফিরছে। বাড়ি আসার পথে ওই বিশাল বাঁশ ঝাড়টা পেরিয়ে আসতে হয়। অমাবস্যা থাকায় এমনিতেই অন্ধকার তার উপর বাঁশ ঝাড়ে প্রবেশ করা মাত্রই অন্ধকার যেন জাপটে আলিঙ্গন করতে আসছে। একমনে বাড়ি ফিরছে দিনেশ।
কিছুদূর আসার পর তার মাথা ঝিমঝিম শুরু হল। হয়ত কাজের প্রেসারটা একটু বেশিই হয়ে গেছে আজ, তার উপর সে আজ সারাদিন খায় নি। তখন শরীর সয়ে গেলেও শরীর আর কিছুতেই সইতে চাইছে না।
সে আর পারছে না হাঁটতে মাথায় তীব্র যন্ত্রণা শুরু হল তার। সে হাতের টর্চ লাইট টা দিয়ে বাঁশ ঝাড়ের মধ্যেই এদিক ওদিক দেখতে লাগল। সে দেখল সামনের একটি বাঁশ ঝাড়ের মধ্যে মাচা টাইপের কিছু একটা বসার আছে। সে সেদিকে গিয়ে সেটার উপর বসে পড়ল। আর এদিকে মাথার তীব্র যন্ত্রণা ক্রমে ক্রমে বেড়েই চলছে।
পড়ুনঃ- ভুতুড়ে গল্প- বস্তা বন্দী লাশ
সে বসে আছে, তার মনে হতে লাগল সে সেখানে একা নেই এমন কেউ আছে যে তার দিকে নজর রাখছে। অদ্ভুত এক গরম ভাব অনুভূত হতে লাগল তার। সে পিছনে টর্চ জ্বালিয়ে দেখল বাঁশ ঝাড় ছাড়া আর কিছুই নেই।
তার চোখ বুজে আসছে, হঠাৎ কার পায়ের শব্দে যেন তার তন্দ্রা কেটে গেল। সে শুনল কয়েকজন মানুষের গলার আওয়াজ, আর আওয়াজ গুলি অন্ধকার বেয়ে তার দিকেই এগিয়ে আসছে। সে টর্চ জ্বালাতে চাইল কিন্তু এরকম রাতে এদিকে সাধারণত কেউ আসে না। চোর ডাকাতের দল নয় তো!
এই ভেবে সে টর্চ না জ্বালিয়ে চুপচাপ বসে রইল। অন্ধকারে তার চোখে ভেসে এলো চারটি কালো ছায়া। সেই ছায়া গুলি কথা বলতে বলতে এগিয়ে আসছে তার দিকেই। সে ভেবেছিল সেই লোকগুলি হয়ত রাস্তা দিয়ে চলে যাবে, কিন্তু অনাকাঙ্খিত ভাবে লোকগুলি এগিয়ে আসছে যেন তাকে উদ্দেশ্য করেই।
দিনেশ ভয় পেয়ে মাচা থেকে উঠে মাচার নীচে লুকিয়ে পড়ল। সে দেখল চারটি ছায়া এসে মাচার উপর বসল। তারা কি ভাষায় কথা বলছে কিছু বঝুতে পারছে না সে। এটি নিশ্চয়ই ডাকাতের দল। পাশের গ্রামে হানা দেওয়ার প্ল্যান করছে হয়ত।
ভাগ্যিস তারা দিনেশ কে দেখে নি, নাহলে হয়ত দিনেশ এর অবস্থা খারাপ হত। দিনেশ দেখল সেই ছায়া গুলির মধ্যে একটি ছায়া উঠে বসে পড়ল। অবস্থাটা এমন যে সেই ছায়া আর দিনেশের মাঝের দূরত্ব মাত্র কয়েক সেন্টিমিটার। তবে তারা কি দিনেশকে দেখে ফেলেছে!
দিনেশের গোটা গায়ে তালা লেগে গেছে সে আর সেখান থেকে পালাতেও পারছে না। সেই ছায়া মূর্তি টি হাত বাড়িয়ে দিনেশ কে ধরে ফেলল। তারপর তাকে সবাই মিলে চিপে ধরে মাচার উপর শুয়ে দিল আর অট্টহাসি হাসতে লাগল। সেই ছায়া মূর্তি গুলি বিড়বিড় করে কি যেন বলছে, তবে দিনেশ কিছুই বুঝছে না।
পড়ুনঃ- মায়ের ত্যাগ
এইভাবে কিছুক্ষণ যাওয়ার পর দিনেশ দেখল একটি ছায়া মূর্তি তার পায়ের দিকে চলে গেল, লম্বা কিছু একটা বেড় করল। দিনেশের মনে হতে লাগল তার পায়ের তীব্র যন্ত্রণা হচ্ছে। আর সে চাইলেও চিল্লাতে পারছে না কারণ একটি ছায়া মূর্তি তার মুখ চিপে ধরেছে। দিনেশের চোখ গেল উপরের দিকে সে দেখল বাঁশ ঝাড়ের মাথা থেকে আরও তিনটি ছায়া মূর্তি নেমে আসছে।
তবে এরা কি মানুষ নয়! দিনেশের মনে হতে লাগল তার ডান হাতে যেন কেউ কামড় বসাচ্ছে। তার মনে হতে লাগল হাতের ভিতর দিয়ে যেন কিছু একটা চলে যাচ্ছে তার শরীরের ভিতরে।
নেমে আসা ছায়া মূর্তি গুলোর মধ্যে একটি তার জামা টা খুলে দিয়ে পেটে কামড় বসাচ্ছে, আর অসহ্য যন্ত্রণায় তার অবস্থা কাহিল হচ্ছে। কিন্তু সব ছায়া মূর্তি গুলো মিলে তাকে এমন ভাবে চেপে ধরেছে সে বিন্দুমাত্র নড়াচড়া করতে পারছে না।
সে দেখল ছায়া মূর্তি গুলো তাকে খেতে শুরু করে দিয়েছে। ধীরে ধীরে তার শরীরের সমস্ত মাংস খেয়ে নিচ্ছে সেই ছায়া মূর্তির দল। কিন্তু তার মাথা তথা মুখমণ্ডল তখনও অক্ষত অবস্থায় আছে। দিনেশের মনে হতে লাগল তার যে অসহ্য যন্ত্রণা টি হচ্ছিল সেটি আর হচ্ছে না।
আর একটি চেনা শব্দ তার কানে ভেসে আসছে, সে চোখ খুলে দেখল পাশের গ্রামের নিতিন তাকে ডাকছে। তড়াক করে সে লাফিয়ে উঠল সে দেখল তার গোটা শরীরে গুটি কয়েক মশার কামড় এর দাগ ছাড়া পুরো শরীর অক্ষত অবস্থায় আছে। তার মানে সে এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিল, আর সে বাঁশ ঝাড়ের সেই বসার এর উপরেই কাল মাথা ঝিমঝিম নিয়ে ঘুমিয়ে গেছে।
তারপর এইসব নানান বাজে স্বপ্ন দেখে নিতিন এর ডাকে ঘুম ভেঙেছে। তবে দিনেশ কিছুতেই বুঝছিল না কাল রাতে তার সাথে এরকম উদ্ভট স্বপ্ন আসার কারণ টা কি!!
গল্পের পূর্ণতায়-
সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।
পড়ুনঃ- এক ভয়ানক রাতে আমি ও নিলি অসাধারণ সব ভালোবাসার গল্প
গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে।
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- ফেসবুক Group - গল্প Junction ফেসবুক- ছাড়পত্র টেলিগ্রাম- charpatraOfficial WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)
রহস্যময় রাত গল্প। ভয়ানক ভূতের গল্প। rohossomoy raat golpo. Fabulous bengali horror story
from ছাড়পত্র https://ift.tt/aQvkx0u
via IFTTT
0 Comments