অসমাপ্ত ভালোবাসার গল্প। কলেজ লাইফের ব্যর্থ প্রেম কাহিনী। অসমাপ্ত প্রেম কাহিনী। 1 emotional bengali love story.

কিছু কিছু ভালোবাসার গল্প অসমাপ্ত ভালোবাসার গল্প এর তকমা পেয়ে বসে সময়ের সাথে সাথে। আমরা ভেবে বসি সবকিছু আমাদের পরিকল্পনা মতই চলবে, কিন্তু অধিকাংশ সময় আমরা যাকে মন থেকে চাই সে অন্যকারো থেকে যায়। কিন্তু আমাদের সঙ্গে থাকে একরাশ স্মৃতি যেগুলো ঝাপসা হতে গিয়েও হয়না, মনের মাঝে বাহুডোরে বারংবার তাকেই পেতে চায়।

অসমাপ্ত ভালোবাসার গল্পঃ-

এই সবে ডি. এল. এড কলেজে ভর্তি হল শুভ। প্রথম দিনেই সে দেখলো সবাই কতো অ্যাডভান্স। আসলে শুভ খুব চুপচাপ। তাই বাইরের দুনিয়াটাকে বুঝতে টাইম লাগছে। সে খুব সাধাসিধে হওয়াতে সবাই কেমন সেটার সুযোগ নেয়। সে কিন্তু সবকিছু বুঝলেও কিছু বলে না, ভয় পায়। সে যখন ভর্তি হয় তখন সেখানে বলা হয় এখানে বেশি ক্লাস করতে হবে না, শুধু পরীক্ষার সময় আর কিছু দিন করে কলেজ আসতে হবে। ব্যাস, কোন অসুবিধা হল না শুভ এর। কলেজের প্রথম দিন ওর বাবা এসেছিলেন দিয়ে আর যান নি। এক বন্ধুর সাথে আলাপ হয় সে শুভদের গ্রামের কাছেই মানে কিছুটা দুরের একটা স্কুলে পড়ত। কলেজে সেই রকম কারো সাথে আলাপ হয় নি তখনো।

শুভ মাসির বাড়িতে ছিলো, হঠাৎ একদিন শুভদের মেসের এক দাদা কল করে ওকে বলে যে, সে যে কলেজে ভর্তি হয়েছে সেই কলেজে তার এক রিলেটিভকে ভর্তি করাবে। শুভ যেন সেই দাদার সাথে কথা বলে, যে তাকে ভর্তি করিয়েছিল। সে বলল বেশ। সে তখনো জানে না যে তার জন্য কি অপেক্ষা করছে। আসলে শুভ খুব একটা কারো সাথে কথা বলে না। তাই সে খুব চিন্তাতে ছিলো কি করে সে তার সাথে কথা বলে বন্ধু হবে। টাইম মতো সে ওই মেসের দাদার গাড়িতে উঠে পড়লো। গাড়িতে উঠেই মিষ্টি একটা আওয়াজ তার মনকে অস্থির করে দিলো। দাদাটি বলল তার ভাইজিকে সে ভর্তি করবে।

কেমন জেনো আনমনা হয়েই শুভ বলল কোনো অসুবিধা হবে না। কিছুদুর যাওয়ার পর দাদা বলল কিছু খাওয়া যাক। শুভ ঘাড় নেড়ে সম্মতি দিলো। এতক্ষণ শুভ মেয়েটাকে দেখতে পায় নি, এবার দেখলো। যে কোনদিন কারো সাথে কথা বলে নি সেই শুভ তার দিকে তাকিয়ে আছে সবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে। খাওয়ার পর সেই দাদা এলে পর গাড়ি ছাড়া হয়। কলেজে পৌছাতে ওদের তিনটা বেজে যায়। ওখানের ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হচ্ছিলো তখন মেয়েটা বলল, “কোনো অসুবিধা হবে না তো”! “না না কোনো অসুবিধা হবে না।“ – শুভ বলল।

অসমাপ্ত ভালোবাসার গল্প
অসমাপ্ত ভালোবাসার গল্প

তখনো পর্যন্ত মেয়েটার নাম জিজ্ঞাসা করতে পারেনি সে। ভাবল হয়তো ফর্ম ফিল আপের সময় দেখে নেবে। কিন্তু সাহস হল না নাম টা দেখতে আর জিজ্ঞাসা করতে। ভর্তি শেষে শুভ গাড়িতে উঠে বসলো তখন ওই মেয়ে তার কাকাকে বলতে শুনল “ তুইও পিছনে যা আলাপ করে নে দুজনে “। শুভ চিন্তাতে পড়ে গেছে। মেয়েটা বলল আসছি আমি। “হুম, এসো”- অজান্তেই শুভ বলে ফেলল। কলেজ থেকে বার হতে চারটা বেজে গেলো। দাদাকে নামিয়ে দিয়ে গাড়ি এগোতে লাগলো। মেয়েটা বলল “কলেজের একটা বুকলেট হয় সেটা কি আছে “।

যথারীতি শুভ বলল “না নেই, না নেই মানে আছে এখন আমার কাছে নেই”। শুভ একটু থতমত খেয়ে উত্তর দিলো। যে ছেলেটা মেয়ে দের সাথে কথা বলাটা দূর কারো সাথে কথা বললে ভয় পায় আজ তার পাশে মেয়ে বসে আছে। অনেকক্ষণ বসে থাকার পর মেয়েটা বলল ” শুভ তোমার নম্বরটা দাও তো”। শুভ বলে বসলো “নম্বর নিয়ে কি হবে”। “মানে , নম্বর নিয়ে সেভ রাখবো তুমি তো মেসের থেকে যাবে আর আমি বাড়ি থেকে, যখন স্ট্যান্ডে আসবো তোমায় কল করে দেবো দিয়ে এক সাথে কলেজে যাবো”।

পড়ুনঃ- একটি সত্যি প্রেমের গল্প- বিশ্বস্ত হস্ত 

নম্বরটা দিলো, মেয়েটা কল করে সেভ করে নিয়েছে। শুভ জিজ্ঞসা করছে “কি নামে সেভ করবো”? মেয়েটা বলল “তুমি নাম জানো না”। ইতস্তত হয়ে শুভ বলল, “না”। মেয়েটা একটু হেসে বলল “মৌমিতা , তুমি মৌ নামে সেভ করতে পারো”। শুভ মৌমিতা বলেই সেভ করে রেখে দিল। মৌ কিন্তু গান করে খুব ভালো। দু একটা গানও শুনিয়েছে। শুভ জানেও না কি হচ্ছে তার সাথে। শুভ শুধু শুনে যাচ্ছে। শুভ কোনো দিন এতো কথা তো বলেই নি তাও আবার কোনো মেয়ের সাথে। যাক সেই দিন বাড়িতে এসে শুভ মৌয়ের সাথে কথা বলল। অনেকদিন হল শুভ ওই মেস তাতে থাকেনা যে মেসে মৌয়ের কাকা থাকে, অন্য একটা রুম নিয়ে থাকছে শুভ তার এক গ্রামের দাদার সাথে।

আজ শুভ কলেজ যাবে, মৌকে কল করেছিলো। ও বলল ১০ মিনিটের মধ্যে পৌঁছচ্ছে। শুভ তড়িঘড়ি করে বার হল। কলেজে গিয়ে সবার সাথে আলাপ হল। কিছুদিন পর কলেজ আর একসাথে যায় না। মৌ আসছিলো না। সপ্তাহ শেষে দেখা যেত মৌ দুদিন আসছে আর শুভ দুদিন যাচ্ছে।

কলেজ লাইফের ব্যর্থ প্রেম কাহিনী
কলেজ লাইফের ব্যর্থ প্রেম কাহিনী

খুব ভালো বন্ধু হয়ে ওঠে দুজনে। মৌ খুব ভালো আর্ট জানে, সেই গুলোই শুভকে দেখায়। নিরীহ ছেলেটা জানে না কি হচ্ছে তার সাথে। কথায় কথায় মৌ একদিন বলছে “আমার জীবনে একটা রহস্য আছে যেটা কাওকে বলি না”। শুভ বলে ফেলল “ও আমায় বলবে নাকি সেটা”। “না না” সাথে সাথেই মৌ উত্তর দিলো। “আমার জীবনেও একটা ঘটনা আছে বলিনি কাওকে” শুভ বলে বসল। “আচ্ছা বল কোনো দিন”। কিছুদিন এমন কথা বলার পর একদিন শুভ কল করছে কিন্তু মৌ ধরছিল না। এস.এম.এস করলেও উত্তর দিলো না। কিছুক্ষণ পর কল করে জিজ্ঞসা করছে “কিছু বলছিলে কি”? “না না তেমন কিছু না।

কি হয়েছে তোমার কথা বলছিলে না”, শুভ জিজ্ঞসা করলো। শুভ এতো দিনে অনেক বেশি কথা বলে। মৌ বলল “তেমন কিছু না। একটু ঝগড়া হয়েছে এক জনের সাথে”। শুভ সাথে সাথেই বলে বসলো “বয়ফ্রেন্ড”! বলল “হুম, তোমায় বলেছিলাম না শুভ আমার জীবনে এক রহস্য আছে এটাই ছিল”। শুভ কেমন যেন মুষড়ে গেল। স্বপ্ন দেখতে দেখতে কাওকে ঘুম থেকে তুলে দিলে যেমন হয় ঠিক তেমন। শুভ শুধু একটা কথা বলল “ও”। শুভ বলতে লাগলো আমার জীবনেও একজন আছে যদিও অনেক কম দিন হয়েছে বন্ধু হয়েছি।

কথা শুনে মৌ বলে উঠলো “কে সে”? পরে একদিন বলবো শুভ বলল। মৌ আবারো বলল,” শুভ , কোনো ভাবে আমি তো নই”। আগের শুভ থাকলে হয়তো কিছু বলতো না। কিন্তু শুভ উত্তর দিলো “যদি তুমিই হয়ও কি হবে”। “না না আসলে আমাদের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে”। নিজেকে সামলে বলল “না না তুমি না। অন্য কেউ”। এই করে পেরিয়ে যায় কয়েকটা দিন।

পড়ুনঃ- অভিমানী প্রেমের গল্প 

একদিন শুভ , মৌ আর এক বান্ধবী কলেজ যাচ্ছে একসাথে, কলেজ যেতে হলে দুবার বাস পালটাতে হতো , সেই মতো দ্বিতীয় বাসে উঠার সময় শুভ দেখে ওর ফোন নেই, চুরি হয়ে গেছে। মৌ বলছে “দাড়াও কল করে দেখি”। “না না আমি দেখছি কি করা যায়”, শুভ বলে উঠলো। মৌ চুপ করে বসে পড়ল। কারণ মৌ জানে, শুভ কেন বলল ওই রকম। মৌকে দেখে শুভ বলল, “ঠিক আছে কল করে দেখো। পাওয়া যায় কিনা”। পাওয়া গেলো না। মৌ শুভকে বন্ধু ভাবে কিন্তু শুভ অন্যকিছু। যতবার মৌয়ের কাছ থেকে দূরে যেতে চেয়েছে তত বার কাছে চলে এসেছে।

কয়েকদিন পর কলেজে টিচিং হবে মানে প্রাথমিক স্কুলে গিয়ে পড়াতে হবে। সেই জন্য কলেজে লটারি করে স্কুল চয়েস করা হচ্ছে। এই টিচিং এ শুভ কলেজ হস্টেলে থাকছে। শুভ সবাই কে বলছে যেন মৌ আর ওর আলাদা ইস্কুলে পড়ে, কিন্তু শুভ মনে মনে চায় যেন একই ইস্কুলে পড়ে। সব শেষে মনের কথাই সত্যি হল। মৌ আর শুভর একটাই স্কুল। ৬ জন একটা স্কুলে পড়াতে যাচ্ছে। সত্যি কি আজব দুনিয়া, কয়েকদিন আগের শুভ যে কিনা কারো সাথে কথা বলতে ভয় পেতো আজ সে যাকে ভালবাসে তার সাথে পড়াতে যাচ্ছে।

পড়ুনঃ- কষ্টের গল্প- ব্যস্ততা  

এক বান্ধবী বলল ”শুভ তুমি তাহলে মৌ কে বলে দাও যে তুমি ওকে ..” , “না না থাক তার দরকার নেই” শুভ বলল। অনেক বার অনেক সময় একসাথে কাটিয়েছে শুভ আর মৌ কিন্তু শুভ মৌকে বলেনি নিজের মুখে। মৌ আর ওর বান্ধবী শুভ ও তার দুই দাদা মিলে পাঁচজনে একটা রেল পাড়ে আড্ডা দিত। শুভ একদিন সেই নিয়ে বলেছিল মান্না দের গানের মতো করে, “ রেল পাড়ের আড্ডাটা আজ আর নেই , কোথায় হারিয়ে গেলো রুপালি সন্ধ্যা গুলো আজ আর নেই…”।

অসমাপ্ত প্রেম কাহিনী
অসমাপ্ত প্রেম কাহিনী

মৌ জানে যে শুভ তাকে পছন্দ করে। একদিন স্কুল থেকে হস্টেল যাচ্ছে বৃষ্টি নামিয়েছে, একটা মন্দিরে দাঁড়িয়েছে পাঁচ মূর্তি। এক দাদা শুভ কে বলছে “মৌ কে বল আজ, যে তুই ওকে পছন্দ করিস”। শুভ বলে, “না থাক”। শুভ বলতে চেয়েছিল মৌ তোমায় ভালবাসি, পারেনি সেদিন। একদিন কিন্তু সে বলেছিলো, নিজের মুখে না চিঠি লিখে। লিখেছিলো, “মৌ, তোমায় মুখে বলার সাহস কোন দিন ছিলনা। তাই লিখে দিলাম। যখন তোমায় গাড়িতে প্রথম দেখি হয়তো ভালোবেসে ফেলি। কিন্তু তোমায় বলতে পারিনি। আমার জীবনে তুমিই রহস্য আর ঘটনা। আগে বলতে পারিনি ভয় পেয়েছিলাম। জীবন সঙ্গী হতে চাই তোমার“।

মৌ বলল, “হয়তো তোমায় ভালবাসি কিন্তু বন্ধু হিসেবে, জীবন সঙ্গী না। তোমার ভালবাসাকে অসম্মান করছিনা। বন্ধু হয়ে পাশে থাকবো”। “না মৌ হবে না, আমি পারবো না। এভাবে যদি থাকি তোমাদের মধ্যে অশান্তি হবে। ভুলে যেতে চাই এই দুটা বছরের কথা”। “বন্ধুত্বকে অসম্মান করোনা শুভ”। শুভ বলল “কথা বললে দূরত্ব কমবে তা চাইনা”।

শুভ নিজেও জানে না কি করে বলল এই কথা গুলো। “যদি বন্ধু হও মৌ তাহলে আমার এই কথা রাখো। আমি ভুলতে পারবো না তোমায়। তুমি আমার সাথে কোন রকম কথা বোলোনা”। মৌ কথা বন্ধ করলেও শুভ ভুলতে পারেনি। আজ শুভ তার মৌকে কলমের মধ্যে নিয়ে এসেছে। হয়তো মৌ জানেও না তা।

শুভদীপ গরাই

গল্পের প্লটে-
গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে। 

সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।

পড়ুনঃ- 
প্রিয়জন হারানোর গল্প- জন্মদিন

কলেজ লাইফের ব্যর্থ লাভ স্টোরি 
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- 

ফেসবুক Group - গল্প Junction 

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

WhatsApp Group- ছাড়পত্র () 

অসমাপ্ত ভালোবাসার গল্প। কলেজ লাইফের ব্যর্থ প্রেম কাহিনী। অসমাপ্ত প্রেম কাহিনী। 1 emotional bengali love story



from ছাড়পত্র https://ift.tt/yfokh2p
via IFTTT

Post a Comment

0 Comments