আজকের আসল ভালোবাসার গল্পে অতীতের স্মৃতি চারণে অংশগ্রহণ করেছে গল্পের মূল দুই চরিত্র।
আসল ভালোবাসার গল্পঃ- “প্রেম আঙিনায়”
“আচ্ছা মনে পরে তোমার সেই রাতের কথা? তুমি আমাদের বাড়ির আঙিনায় আমার হাত ধরে দাঁড়িয়ে, বাবা দাদার কাছে তুমি সমানে বলে যাচ্ছ যে, পরিস্থিতি যাই হোক না কেন আমি অনি কে বিয়ে করবই করব, এতে গোটা দুনিয়া আমার বিরুদ্ধে গেলেও আমি দমবার নয়।“
সুশিল, উঠে গিয়ে অনির কপালে একটা চুমু দিয়ে বলল, সেই রাতের কথা কি ভোলা যায় পাগলী! সেই রাতেই তো আমাদের জন্য বিশেষ রাত। আর কয়েকটা মেয়ের থেকে আমার পাগলীর পার্থক্যটা তো এখানেই, আর কয়েকটা মেয়ে পরিবারের খুশির জন্য নিজের ভালোবাসার মানুষকে ছেড়ে দিতে পর্যন্ত রাজী হয়ে যায়, কিন্তু তুমি আমাকে বেঁছে নিয়েছ আমার কাছে এর থেকে বড় পাওয়া আর কি হতে পাড়ে!
অনি সুশীলকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বলল, ছেড়ে যাওয়ার জন্য তো ভালোবাসিনি প্রিয়। পরিস্থিতি যেমনি হোক আমার যে তোমাকে ছাড়া চলবে না, এটা আমার পাগলামি বলো আর যাই বলো আমার তোমাকে ছাড়া চলবে না।
আজ থেকে ২০ বছর আগে সুশীল এবং অনির বিবাহ হয়েছিল। আর এই ২০ বছরে অনি একটি বারের জন্যও তার নিজের পরিবারের কারুর সাথে দেখা করতে যায় নি। অনি মায়ের কাছে কথা বললেও কখনোই তার বাবা দাদার কাছে কথা বলেনি, তার যুক্তি ছিল, যে বাবা- দাদা আমার ভালো থাকা আমার পছন্দ কে গুরুত্ব দেয় না, আমি তাদের কাছে মূল্যহীন। কেননা মানুষ সেই সমস্ত জিনিসকে গুরুত্ব দেয়, যেটা তার কাছে অমূল্য মনে হয়।
চলুন এবার সুশীল আর অনির পুরো গল্পটি জেনে নিই।
কলেজের অ্যালুমিনি গ্রুপে সুশীলের সাথে পরিচয় হয় অনির। সুশীল তখন থার্ড ইয়ার এ আর অনি তখন সেকেন্ড ইয়ারে। পরিচয় হয়েছিল কলেজের গ্রুপে অনির একটা প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে। আর এরকম বেশ কয়েকবার সুশীল অনির জিজ্ঞাসা করা প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিল।
আর এর পরেই পার্সোনাল ভাবে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা শুরু আর সেখান থেকেই একে অপরকে ভালো লাগা। তবে এই ভালোলাগা টা প্রকাশ পেতেও সময় নিয়েছিল বেশ। সে যাই হোক এভাবেই চলছিল ওদের দিন।
পড়ুনঃ- বন্ধুত্ব থেকে ভালোবাসার গল্প
ভালোবাসার মাঝে ঝগড়াটা না হলে ঠিক মানায় না, আর অনিদের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এই ঝগড়া তো প্রতিটা সম্পর্কে হয়, তাহলে কি এদের সম্পর্কটাও বাকিদের মত! উহু মোটেও না, অন্য কাঁপল দের সম্পর্কে যেখানে ঝগড়া হলে কথা বলা বন্ধ হয়ে যায়, একে অপরকে ব্লক করার পর্যায়ে চলে যায়, সেখানে অনিদের সম্পর্কে তার বিন্দুমাত্র ছোঁয়া নেই। ওদের মাঝে যতই ঝগড়া হোক না কেন, কথা না বলে একটি মুহূর্ত থাকা ওদের কাছে কয়েক যুগের সমান। আর এই বিশেষ কারণেই ওরা বাকিদের থেকে আলাদা।
এভাবেই চলতে থাকে দিন, সপ্তাহ ঘুরে মাস আসে, মাস গিয়ে বছর গড়ায়। কিন্তু সুশীল তখন কোন কাজ জোগাড় করতে পাড়ে নি। একদিন অনি সুশীলকে সারাদিন ফোন করে না, এমনকি একটি ম্যাসেজ পর্যন্ত নেই। সুশীল বারবার অনিকে ফোন করেও ফোনের সুইচ অফ পায়। ব্যাপার টা কি, ওদের মধ্যে তো কোন ঝগড়া হয়নি! চিন্তায় স্থির থাকতে পাড়ে না সুশীল। রাত তখন প্রায় ২ টে, বেজে উঠল সুশীলের মোবাইল, ওপার থেকে ভেসে এলো অনির কান্না মিশ্রিত গলা।
-তুমি কাল, আমার সাথে দেখা করবেই করবে।
-অনি, এই অনি তুমি কাঁদছ কেন। অনি কথা বলো অনি, চুপ করে আছো কেন!
কিন্তু ওপার থেকে কান্না ছাড়া আর কিছুর শব্দ ভেসে আসে না। সারাদিন ফোন ম্যাসেজ না পেয়ে অনির মনে যে রাগ অভিমান জমা হয়েছিল তা এক মুহূর্তে উড়ে গেল। সেদিন অনি ফোন কাটেনি, কাঁদতে কাঁদতে নিজেই ঘুমিয়ে গিয়েছিল, কিন্তু সুশীলের ঘুম আসে নি। সে যখন বুঝতে পারল অনি ঘুমিয়ে গেছে সে নিজেই কল কেটে অপেক্ষা করতে লাগল পরের দিনের।
পরের দিন দুপুর বেলা, অনির সাথে সুশীলের দেখা হলো, মাঠের শেষে সেই চেনা পরিচিত কৃষ্ণচূড়া গাছটার নীচে। সুশীলকে দেখা মাত্রই অনি ছুটে গিয়ে সুশীলকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল। প্রায় এক ঘণ্টা সে এইভাবেই সুশীলকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদেছিল।
কেঁদে কেঁদে অনির চোখ পুরো লাল হয়ে গেছে, চোখে জমে থাকা জল যেন সব বেড়িয়ে গেছে, তাই ওর চোখ দিয়ে আর জল বেড়িয়ে আসছে না। অনিকে শান্ত করে, সুশীল কান্নার কারণ জিজ্ঞাসা করে। অনি জানায়-
-বাড়ি থেকে আমার জন্য ছেলে দেখেছে।
পড়ুনঃ- কলেজ লাইফের ব্যর্থ প্রেমের গল্প
কথাটা শোনা মাত্রই সুশীলের মনে হতে থাকে গোটা দুনিয়া তাকে স্থির রেখে তারই চারদিকে ঘুরছে। তবুও সে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল-
-কি করে সেই ছেলেটা?
-সেই বখাটে টা এস.আই।
চোখের জল লুকিয়ে রেখে মুখে হাসি দিয়ে সুশীল বলে-
-আমি তো এখনও বেকার, আর তোমার পরিবার অবশ্যই তোমার জন্য খারাপ কাউকে খুজবে না, সেই ছেলেটাই আমার চেয়ে বেশি যোগ্য।
অনি ঠাস ঠাস করে সুশীলের দুই গালে থাপ্পর কষিয়ে দিয়ে বলে-
-সেই ছেলেটা আমার পরিবারের কাছে যোগ্য হতে পাড়ে, কিন্তু আমার কাছে সেই ছেলেটা যোগ্য নয়। আমার কাছে এই পৃথিবীর ৮ বিলিয়ন মানুষের মধ্যে যোগ্য শুধু একজন, আর সে এখন আমার সামনে দাঁড়িয়ে। এমনকি স্বয়ং ইন্দ্রদেব যদি নেমে আসে আমার কাছে সর্বদা তুমিই শ্রেষ্ঠ। আমার ব্রহ্মাণ্ডের তুমিই সর্বদা সেরা। হুম হতে পাড়ে তুমি দুনিয়ার কাছে বেকার। আমি সর্বদা তোমার পাশে আছি। দুইজনে ঠিক দেখে নেব, না খেয়ে অন্তত পৃথিবীর কেউ মরে না। দেখবে দুইজনে ঠিক সব কিছু বাগিয়ে নেবো।
এরপর সুশীল অনিকে বুকে টেনে নেয়, অঝোরে কাঁদতে থাকে অনি। আর সুশীলের চোখ দিয়েও সমানে বয়ে চলেছে বারিধারা।
এরপর সেই ছেলেটা অনিকে দেখতে আসে, অনি সরাসরি সবার সামনে বলে ফেলে, আমি এই ছেলেকে বিয়ে করতে পারবো না। এই ছেলেটা আমার যোগ্য নয়।
এই কথাটি শোনা মাত্রই অনির বাবা তেড়ে এসে অনির গালে থাপ্পর কষিয়ে দেয়। এরপর অনি বলে-
-তোমরা আমার শরীর কে আঘাত করে শেষ করে দিতে পারো কিন্তু আমার মনকে তোমরা এতটুকুও ছুইতে পারবে না। আমার বিয়ে ঠিক করার আগে কখনোই আমার মতামত নেওয়ার প্রয়োজন মনে করলে না তোমরা!
পড়ুনঃ- কয়েক লাইনের ছোট্ট প্রেমের গল্প
এই ঘটনার দিন থেকেই অনিদের বাড়িতে শুরু হয়, অনিকে জোড় পূর্বক বিবাহ দেওয়ার প্রস্তুতি। কিন্তু বিবাহের এক সপ্তাহ আগে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায় অনি, চলে যায় সোজা সুশীলের কাছে। সুশীল অনির হাত ধরে সোজা চলে আসে অনিদের বাড়ি। অনি সুশীলকে বলে-
ভেবেছিলাম, তুমি আমাকে নিয়ে পালিয়ে যাবে কোথাও, কিন্তু তুমি আবার আমাকে আমার পরিবারের হাতেই সপে দিচ্ছ…
আরও নানান কথা বলতে থাকে অনি, কিন্তু সুশীল অনির একটি কথার উত্তর দেয় না। অনির হাত ধরে সোজা চলে আসে তাদের বাড়ি। ততক্ষণে রাত হয়ে গেছে। সুশীল অনির হাত ধরে অনিদের বাড়ির আঙিনায় দাঁড়িয়ে। আর সুশীল বলে-
শুধু আপনারা কেন, এই গোটা দুনিয়া যদি আমার বিরুদ্ধে যায় তবুও আমি অনিকে চাইব। এটাকে আমার পাগলামি বলুন আর যাই বলুন সেটা আপনাদের ব্যাপার। সব মানুষ যে আমাদের সমর্থন করবে সেটা আমি মোটেও আশা করি না।
আর হুম মেয়েকে বিয়ে দিচ্ছেন মেয়ের অমতে। এতে আপনাদের মনে হতে পাড়ে, মেয়ে সুখে থাকবে। কিন্তু জানেন কি বাহ্যিক সুখের চেয়ে মনের শান্তি বেশি দামী। অনিকে জোরপূর্বক বিয়ে তো দিবেন ঠিকই, কিন্তু পারবেন কি অনির মনের ক্ষত কে সাড়িয়ে তুলতে! আপনারা সারাজীবন অনির সাথে থাকবেন না, তাই অনিকে আপনাদের যাকে যোগ্য মনে হয়েছে তার সঙ্গে অনির বিবাহ ঠিক করেছেন। আরে মশাই কখনো মেয়েকে তো জিজ্ঞাসা করুন, যে সে কাউকে চায় কি না!
আর সেই ছেলেকে যদি আপনাদের কাছে যোগ্য মনে হয়েছে, তো আপনারাই তাকে বিয়ে করুন না মেয়েকে ফাসিয়ে দিচ্ছেন কেন।“
পড়ুনঃ- হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া প্রেমের গল্প
অনির দাদা তেড়ে আসে সুশীলের দিকে, কিন্তু অনি চেঁচিয়ে বলে- “দাড়া ওখানে, যে দাদা বাবা আমার ভালোলাগা কে গুরুত্ব দেয় না, আমি তাদের কাছে কখনোই দামী হতে পারি না। আমি তাদের কাছে প্রতিটা প্যাকেটের গায়ে থাকা ছোট ছোট লেখা গুলির মত, যে আছে ঠিকই কিন্তু কখনই কেউই সেটার দিকে ফিরে তাকায় না। অনেক হয়েছে, যদি তোদের মনে হয়, আমি নিজের পছন্দের কাউকে বেঁছে নিয়ে ভুল কিছু করছি তাহলে সেটা তোদের মনের ভুল।
আর আমার তরফ থেকে সর্বদা তোদের জন্য দরজা খোলা আছে। যেদিন মনে হবে এবার বোন টার খবর নেওয়া দরকার আসবি, আমি সহৃদয় দিয়ে তোদের সম্মান করে ঘরে নেব। কিন্তু কখনোই আমার এই মানুষটাকে নিয়ে উল্টোপাল্টা কিছু বলিস না প্লিজ।“
এই বলে অনি সুশীলের হাত ধরে সেখান থেকে চলে আসতে থাকে। আর দক্ষিণ আকাশে এতক্ষণ ধরে গর্জন করতে থাকা মেঘটা প্রবল বৃষ্টি হয়ে নেমে আসে, পিছনে পরে রইল অনির দাদা- বাবার মাথা ভর্তি রাগ, আর সামনে একে অপরের হাত ধরে নতুন এক দুনিয়ার খোঁজে পা বাড়িয়ে চলেছে অনি-সুশীল।
গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে।
সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।
পড়ুনঃ- অভিমানী ভালবাসার গল্প সত্যি ভূতের গল্প- অভিশপ্ত স্কুল অসাধারণ সব রহস্যে ঘেরা গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- ফেসবুক Group - গল্প Junction ফেসবুক- ছাড়পত্র টেলিগ্রাম- charpatraOfficial WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)
আসল ভালোবাসার গল্প। নিউ ভালোবাসার গল্প। 1 new bengali beautiful love story
from ছাড়পত্র https://ift.tt/QYZVqLR
via IFTTT
0 Comments