কলেজ লাইফ স্যাড লাভ স্টোরি। কলেজ জীবনের ব্যর্থ প্রেমের গল্প। 1 new bengali college life sad love story.

আজকের কলেজ লাইফ স্যাড লাভ স্টোরি টিতে পাঠক খুঁজে পাবেন এক ব্যর্থ লাভ স্টোরির ছোঁয়া। অব্যাক্ত প্রেমের শেষ পরিণতি বেশ সাবলীল ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক।

কলেজ লাইফ স্যাড লাভ স্টোরিঃ- ‘ডায়েরী টা’

বৃষ্টিতে আমার নীল শার্টটার ডান কাঁধটা পুরো ভিজে গেল। আসলে বাঁদিক ঘেঁষে ৯০এর দশকের ছাতার ভগ্নবিশেষ ধরলেও বেকার। দেখি পল্লবী ম্যাডাম বাংলা ব্যাকরন নিতে ক্লাসে ঢুকছেন। একটু ডেকে বললাম, আপনি আমার রোল নম্বরটা নোট করে নিন। আমি বি.এড এর ডিপার্টমেন্ট থেকে ঘুরে আসছি। পল্লবী ম্যাডাম রেগে গিয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে চলে গেল।

বি.এড রুমে ঢুকে শুনতে পেলাম অনুশ্রীর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে, এবং সেটা গোটা ক্লাসে বেশ, বিশেষভাবে ধ্বনিত হচ্ছে। আমি সহাস্যে রিয়াকে ডেকে বললাম, “তুই আগে থেকে সব জানতিস তো, আমাকে বলিসনি কারন আমি কষ্ট পাবো বলে! ও মাথা নিচু করে আমাকে যেন নিরুপায় সম্মতি জানাল। রিয়া হল অঙ্কিতা আর অনুশ্রীর বাল্যবেলার বান্ধবী। তাই সে হয়তো, তার বান্ধবীর হয়ে কথা বলবে। কেমন একটা চাপা কান্না ঠিকরে বের হতে চাইল, আমার দু চোখ দিয়ে। আমি ওয়াশ রুমে গিয়ে হঠাৎ পড়ে গেলাম। আসলে হয়তো শারীরিকভাবে না টলে গেলেও মানসিক অস্থিরতা নিজের পাকে ঠিক ভাবে রাখতে পারল না।

আমি হাত ধোয়ার বেসিনে কিছুক্ষন বমি করে ফেললাম, তবে চোখে মুখে জল দিয়ে ধাতস্থ হতে সময় লাগলো। কিছুক্ষন পরে, কিছু না বলেই ক্লাসে ঢুকে গেলাম। ম্যাডাম কিছু আঁচ করলেন, বললেন, “কি অবস্থা সৌগত, তোমার প্যান্টের কি অবস্থা, পুরো ভিজে গেছে, আর চোখটা এত লাল কেনো? আমি ম্যাডামের কথা শেষ হওয়ার আগেই সেকেন্ড বেঞ্চে গিয়ে বসলাম, সায়ন আমার হাঁটুর দিকে খেয়াল করে দেখলো, প্যান্টের কিছুটা অংশ ছিঁড়ে গিয়ে বেশ ভালোই রক্ত ঝরছে। আমি সায়নকে এই সাধারণ ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করতে বারন করলাম।

কলেজ লাইফ স্যাড লাভ স্টোরি
কলেজ লাইফ স্যাড লাভ স্টোরি

কিন্তু ততক্ষণে দেখি বি.এড এর রুম থেকে অনুশ্রী ব্যান্ডেজ নিয়ে আসছে। আমার চোখমুখ আর হাঁটু দেখে ছল ছল চোখে ও আমাকে ঠাস করে চড় মারলো। আমি রেগে গিয়ে ওর বিনুনীও জোরে টানলাম। অনুশ্রীকে যেনো কোনোকিছুই প্রভাব খাটালো না, অন্যসময় ওর সাধের বিনুনীতে কেউ স্পর্শ করলে, ও তাকে আস্ত রাখে না, সেখানে আজকে ও একটা শব্দও করলো না। “উফ্ফ, আরে জ্বলে গেলো অনু”, আমি বললাম। “হ্যাঁ বীরপুরুষ, একটা কথা বললে আরেকটা চড় কষাবো” অনু বেশ শাসন ভরা চোখে বললো। ড্রেসিং এর সাদা কাপড়টা রক্তে ভিজে গেলো।

অনুশ্রী ব্যান্ডেজ করতে করতে কাঁদতে লাগলো। আমি বললাম, “আরে তেমন কিছু হয়নি, একটু রক্তেই তোমার চোখে অশ্রু। যেন আরো জোরে কাঁদতে লাগলো অনুশ্রী। আমার মনে তবে ওর কান্নাটা বিদ্রুপ করার ইচ্ছে হচ্ছিল, কয়েকদিন পরে যে নিজেই বিয়ে করতে চলেছে, সে আবার…। যাই হোক আমার পায়ের রক্ত তার কাছে অতিসামান্য। একটা মানসিক রাগ থেকে ওর হাত আমি সরিয়ে দিলাম, আর পায়ের পাতা ফেলার চেষ্টা করলাম। হ্যাঁ অনু আটকানোর চেষ্টা করছিল তবে, আমার লাল চোখের জল তার সাহসকে কমিয়ে দিয়েছে। সেও বুঝেছে এর অর্থ। আমি ওই পা নিয়ে কলেজের দোতালার একটি ঘরে গেলাম। না না, আমার সঙ্গে কেউ যায়নি, হয়তো একজনের ভাঙা হৃদয়কে নীরবতার সংলাপে সাহায্যকারী তারা, তাই আসেনি।

পড়ুনঃ- কলেজ লাইফের ব্যর্থ প্রেমের গল্প- 'মন পাখি' 

যে ঘরে ঢুকলাম, তার চাবি আমার কাছে থাকে। এটা এক পরিত্যক্ত লাইব্রেরী রুম। তাই চাবি কেউ দিতে অস্বীকার করেনি। ঘরে ঢুকে এদিক ওদিক হাতড়াতে লাগলাম, কিন্তু ঘরের ধুলোয় খুঁজে পাচ্ছিলাম না, মনে পড়লো তখন। একটা তুঁতে রঙের ড্রয়ার খুলে দেখলাম, আমাদের ডায়েরীটা। আমাদের মানে, অনুশ্রী আর সৌগতর। এক অদ্ভুত বিষয় হলো, এই ডায়েরীটা আমাদের কারোর কাছে থাকতো না।

তাহলে একটু বলা যাক, আমি তখন সবে ফার্স্ট ইয়ারে, অনুও তাই। একদিন কলেজ গ্রাউন্ডে ক্রিকেট খেলা হচ্ছে, ছোটো থেকেই খুব ভিতু ছিলাম খেলা ধুলায়, তাই নাম দিইনি। কিন্তু অনুশ্রী আমার নাম দিয়ে দেয় আর আমি খেলার সময় খালি রান নিতে পরে যাই। তবে সে বারে অনুশ্রী আমাকে ওই খেলায় দুবার বোল্ড আউট করে। আর একবার সিনিয়ার সেজে খুব জ্বালিয়েছিল, ধরতে পেরে আমি প্রিন্সিপালকেও জানিয়েছিলাম, তার জন্য ওকে কলেজের সামনে কান ধরতে হয়েছিল, আর আমি দূর থেকে হাসছিলাম।

কলেজ জীবনের ব্যর্থ প্রেমের গল্প new
কলেজ জীবনের ব্যর্থ প্রেমের গল্প new

তবে একদিন অদ্ভুতভাবে এই ঘরেই প্রথম ও আমাকে হাত ধরে টেনে এনে একটা কাগজের টুকরো আর একটা লজেন্স ধরিয়ে দেয়, জিজ্ঞেস করলে বলে, এই চকোলেটটা খেও আর ওই কাগজের টুকরোর মধ্যে লেখাটা মাথায় ঢুকিয়ে নিও। তখনও ঠিক বুঝতে পারিনি। এরপর একবার কলেজে সরস্বতী পূজায় পুষ্পাঞ্জলী দেওয়ার সময় অনুশ্রী বার বার আমার গায়ে ফুল ছুঁড়ছে পেছন থেকে। আমি সত্যি খুব অবাক হয়েছিলাম ওর ওই ধরনের ব্যবহারে।

সেই বছরই একটি বার্ষিক অনুষ্ঠান করে কলেজ। আর সেখানে অনুশ্রী গান গেয়েছিল আর আমি তবলায় সঙ্গদ করি। তখন থেকেই গোটা কলেজে আমার সম্পর্কের ব্যাপারে আঁচ করতে পারে। সত্যি বলতে প্রথম দিন থেকে আমার পছন্দের মানুষটা ছিল অনুশ্রী। আমাদের সমস্ত মনের কথা আমরা ওই ডায়েরীতে লিখে রাখতাম। আমার কথা ও পড়তো, আর ওর কথা আমি। এভাবেই বছর দুয়েক যায়। একদিন কলেজ পার্কে আমরা দুজন বসে আছি, তখন একজন মাঝবয়সী ভদ্রলোক আমাকে একটা সজোরে চড় কষায় এবং অনুশ্রীকে খুব বকাবকি করে তিনি ওকে নিয়ে যান। পরে জেনেছিলাম, অনুশ্রী এক অত্যন্ত প্রভাবশালী ব্যক্তির একমাত্র কন্যা।

bengali college life sad love story
bengali college life sad love story

তবে সেই চড় আজ খুব মনে পরছে, তবে সেই চড়টার থেকে অনুর বিয়ের খবরটা আরো আরোতর মর্মাঘাত। তবে ও সুখে থাক, আর আমার মনের কথা কোনোদিনই বলতে পারিনি ওকে, সাহসে ভর রাখতে পারিনি হয়ত। যাই হোক, ডায়েরীটা খোলার এক অদ্ভুত কৌতূহল জন্মালো নিজে থেকে। ওর লেখার জায়গায় দেখলাম ও লিখেছে, “আমার বিয়ে সামনে, তবে তোমার সঙ্গে নয়। বাবার এক মাসতুতো দাদার বন্ধুর ছেলের সাথে।

আমি কিছুতেই চাইনি, তবে একটা কথা মনে হলো, আমাদের ভালোবাসা তো পরিনয় এর দিকে যেতে তোমাকে একটা চাকরী অন্তত পেতেই হবে, কিন্তু আমার যার সাথে বিয়ে হচ্ছে, সে বিশাল বড়ো একটি শিল্পপতির ছেলে, আর সেই ভেবে আর সব কিছু ভেবেই স্থির করলাম, ভালোবাসার থেকে হয়তো ভালো থাকাটা খুব দরকার বা আবশ্যক। পারলে আমাকে ভুলে যেও, আর আমি চাই আমার থেকেও অনেক ভালো মেয়ে তুমি পাবে, যে তোমায় সুখে রাখবে”। আমি সজোরে ডায়রীটিকে বন্ধ করে দিলাম। মনের মধ্যে এক নিশ্চুপ ক্লান্ত ঠকে যাওয়া দেখলাম। দরজার কারা যেন ধাক্কাচ্ছে, তবে সেই দরজা খোলার সামর্থ্য মুহূর্তের মধ্যে আমি হারিয়ে ফেলেছি।

সৌগত প্রামাণিক

গল্পটির চিত্রশৈলীতে-
গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে। 

সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।

পড়ুনঃ- 
ভালোবাসার দুঃখের ছোট গল্প- না পাওয়া প্রেমের গল্প

প্রেমের গল্প- ভালোবেসে ত্যাগ
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- 

ফেসবুক Group - গল্প Junction

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)


from ছাড়পত্র https://ift.tt/9k02PbV
via IFTTT

Post a Comment

0 Comments