হারানো ভালোবাসা ফিরে পাওয়ার গল্প। হারানো ভালোবাসা গল্প। 1 new outstanding love story in bengali.

ভালোবাসা মানে শুধু একে অপরকে চাওয়া নয় বরং একে অপরকে কাছে পাওয়া এই কাছে পাওয়ায় নেই কোনো কামের আশা, আছে কেবল নিঃস্বার্থ ভালোবাসা। আজকের এই হারানো ভালোবাসা ফিরে পাওয়ার গল্প টিও জেন সেই কথাই জানান দিচ্ছে বারংবার।

হারানো ভালোবাসা ফিরে পাওয়ার গল্পঃ- ‘শৈলশ্রী’

” সবাইকে জানাই সাদর আমন্ত্রণ”- সকাল থেকে হাতিখেদা বৃদ্ধাশ্রমের কমিটির ছেলে গুলো গোটা শহর জুড়ে এই স্লোগান মাইকিং করে বেড়াচ্ছে। কারণটা কি, কোথায় আমন্ত্রণ জানাচ্ছে তারা! তাহলে চলুন জানাই যাক।

এই এক বছর আগের ঘটনা –
হাতিখেদা বৃদ্ধাশ্রমের মধ্যমনি হলেন শৈলেন বাবু, জিনি সবে মাত্র ৬৮ বছর বয়েসে পা দিয়েছেন তার বিয়ে হচ্ছে ওই বৃদ্ধাশ্রমেরই ৬২ বছর বয়স্কা মহিলা শ্রীদেবীর সাথে।

শৈলেন বাবুকে শ্রীদেবী এসে জিজ্ঞাসা করলেন- ” কি গো, বলছি এই বয়সে আমাদের বিয়েটাকে আদৌ কেউ স্বীকৃতি দেবে?”
শৈলেন: “না দেওয়ার কি আছে শ্রী ?মিয়া বিবি রাজি তো কেয়া করেগা কাজী?”
শ্রী: “ইয়ে মানে এই বয়েসে পালিয়ে বিয়েটা একটু বাড়াবাড়ি হচ্ছে না তো? সবাই কি বলবে বলতো? আর একদিন তো তুমিই সমরেশ মজুমদারের বলা ওই উক্তিটা বলেছিলে আমায় – ‘বিজ্ঞজনেরা বলে কখনও কাউকে ভালবাসলে তাকে বিয়ে করো না । ভালবাসা হল বেনারসী শাড়ির মত, ন্যাপথালিন দিয়ে যত্ন করে আলমারিতে তুলে রাখতে হয়, তাকে আটপৌরে ব্যবহার করলেই সব শেষ।'”

হারানো ভালোবাসা ফিরে পাওয়ার গল্প
হারানো ভালোবাসা ফিরে পাওয়ার গল্প

শৈলেন: “জীবনের এই চল্লিশটা বছর বেনারসি বানিয়ে কি লাভ টা হলো শুনি ? বিয়েটা তো আমি করবো তোমায়,তাই সবার কথা বাদ দিয়ে না হয় আমার কথা টুকুই ভাবো।”
শ্রী: “শৈলেন … বড্ডো ভুল করেছিলাম সেদিন , তাই না!”
-“আরে সেসব কথা বাদ দাও না । আজ আমাদের বিয়ে । তুমি কিন্তু ভালো করে সাজবে। আমি তোমাকে ওই লাল টুকটুকে বেনারসিতেই দেখতে চাই।”

বিয়ের মণ্ডপে পাত্র হাজির পাত্রীও হাজির। বিয়ে প্রায় শেষের দিকে। সাতপাকে ঘুরতে গিয়ে শৈলেন বাবুকে ৪ বার ইনহেলার নিতে হয়েছে । এবার সিঁদুর দান করলেই বিয়ে কমপ্লিট কিন্তু এ কি, পাত্রর মেয়ে জামাই আর পাত্রীর ছেলে বউমা কোথা থেকে এসে হাজির! তারা এই বুড়ো বাবা মায়ের বিয়ের জন্য লোকলজ্জায় পড়তে পারবে না বলে আবার তাদের বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে এসেছে । ছেলে মেয়েদের বিয়েতে আপত্তি দেখে শ্রীদেবী জিজ্ঞাস করলেন ” যখন পালিয়ে বিয়ে করে বউ ঘর ঢোকালি , তখন এই জ্ঞান গুলো কোথায় ছিল ?”

পড়ুনঃ- দাদাকে নিয়ে কিছু কথা 

-“তুমি তো জানোই মা তোমার বৌমার বাবা আমাদের বিয়েটা কোনোদিন মেনে নিতেন না, তাই পালিয়ে বিয়ে করেছিলাম। কিন্তু তুমি এই বয়েসে এরম করলে আমার মানসম্মানের কি হবে ? আমার কি তোমার প্রতি এটুকু অধিকার ও নেই। আমি তোমার ছেলে তোমাকে সবচেয়ে বেশি ভালবাসি।”

-“যখন কাজের ব্যস্ততার মাঝে সময় দিতে পারবি না বলে এই বৃদ্ধাশ্রমে রেখে গিয়েছিলি, তখন এই ভালোবাসা কোথায় ছিল ?
আর শৈলেন এর সাথে আমার সম্পর্কটা মেনে নেওয়ার তোরা কারা? ওর আর আমার সম্পর্কটা এই ২ বছরের নয় চল্লিশ বছরের । ও আমার প্রথম প্রেম ।”

এই কথা শুনে সবাই চমকে উঠলো। ভেবে বসলো হয়তো এরা লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করতো। তাই পাত্রের জামাই আর পাত্রীর বৌমা তো বেশ মিষ্টি মিষ্টি সুরে বংশ ,জাত – কূল, আরো নানান বিষয়ে কথা শুনিয়ে ছাড়লো ।

হারানো ভালোবাসা গল্প
হারানো ভালোবাসা গল্প

তবে এসবের মাঝে অল্পবয়সী পুরোহিত তো ভীষণ উৎসাহী। সে বলেই ফেললো ” দাদু – দিদা তোমাদের প্রেমের গল্পটা বলো না প্লিইইইইইইজ। তারপর নিজের দায়িত্বে আমি এই বিয়েটা দেবো। দেখি কার কত দম এই বিয়ে আটক করে? কাঁদো কাঁদো গলায় শৈলেন বাবুর কাঁধে মাথা রেখে শ্রীদেবী তখন সবাইকে সবটা বললেন-

“বাঁকুড়া তে থাকতাম আমি । মা বাবার একমাত্র আদরের মেয়ে । বাবা তো কাজের চাপে বাড়ি খুব কম আসতো তাই মা তার চিন্তায় দিন গুনত । এভাবেই দেখেতে দেখতে জীবনের ২২ টা বছর কেটে গিয়েছিল আমার। তখন আমি সবে মাত্র গ্র্যাজুয়েশন পাস করেছি, আমাদের বাড়িতে ভাড়াটিয়া হয়ে এলো শৈলেন ব্যানার্জী । যেমন নম্র ভদ্র স্বভাব তেমন কর্মনিপুন ছিল ছেলেটা। সব বিষয়ে পারদর্শী । মাঝে মধ্যে মায়ের সাথে এসে গল্প করা আর আমার সাথে ইয়ার্কি করা ছিল শৈলেনের স্বভাব। নানান সাহিত্যিকদের বলা বাণী গুলো বুঝিয়ে জিজ্ঞাসা করতো- ‘কি গো কোনটা ভালো আর কোনটা মন্দ?’ আমি যা বুঝতাম তাতেই ‘হ্যাঁ’ ‘না’ করে কাটিয়ে দিতাম । দিন দিন খুব কাছের হয়ে উঠেছিল সে।

এরপর হঠাৎ একদিন মায়ের শরীর খুব অসুস্থ হয়ে পড়লে মাকে হসপিটালে ভর্তি করতে হলো । সেই ফাঁকে কাজের মাসীও বাহানা দেখিয়ে কাজ ছেড়ে দিলো । তখন ওই নির্জন বাড়িটাতে আমার একমাত্র ভরসা ছিল শৈলেন । রান্নার “র” টুকুও না জানা আমি কি খাবো সেই নিয়ে যখন চিন্তায় পড়েছি তখন শৈলেন প্রতিদিন আমার জন্য রান্না করে নিয়ে আসতো। আর একটু-আদটু রান্না করতেও শেখাতো। ঠিক মায়ের মতো করেই আমার খেয়াল রাখার চেষ্টা করতো। এর মধ্যে মা বাড়ি ফিরে এলো সাথে বাবাও।

বাবা তো প্রথম থেকেই শৈলেন কে পছন্দ করতেন না কারণটা হয়তো ওর স্পষ্টবাদী স্বভাব। বাবা শৈলেন কে নতুন বাড়ি খুঁজতে বললেন , উনি চাইতেন না তার মেয়ে কোনো ভাবে এই ছেলের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ুক । বর্ষাকালের এক ঝমঝমে বৃষ্টির বিকেলে শৈলেন এসে বললো ” শ্রী, বাবার শরীর অসুস্থ তাই আমাকে গ্রামের বাড়িতে ফিরে যেতে হবে। ফিরে যাবার আগে তোমার কাছে একটা প্রশ্ন আছে আমার । উত্তরটা কিন্তু ভেবে দিও। আমি বেশ বুঝতে পারলাম হয়তো বিয়ের প্রস্তাবেই হবে। লজ্জায় মাথা নিচু করে বললাম-


পড়ুনঃ-
 মধ্যবিত্তের প্রেম 

প্রেমের শেষ পরিণতি- দুঃখের লাভ স্টোরি 

– ‘হ্যাঁ বলো, কি জানতে চাও?’
-‘ তোমার পছন্দের ওই দামী ঘড়িটা তুমি সবসময় ব্যবহার করো না কেন?’
মনে মনে ভাবলাম- এ তো আজব পাগল ! কোথায় ভাবলাম বিয়ের কথা বলবে ,এসব কি বলছে !

বিস্ময়ের সাথে জিজ্ঞাসা করলাম ‘এসব কি বলছো তুমি ?’
‘আরে বলোই না তবে ভেবে বলো’
শৈলেন এর বলা প্রশ্নটার মানেটা বুঝতে পেরে, বাবার মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠলো ,মনে পড়লো এই শান্ত নিরীহ গ্রামের ছেলেটার ক্ষতির কারণ কোনোভাবে যদি আমি হই, তাহলে হয়তো সারাজীবন নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না । তাই চোখের জল চেপে উত্তর দিলাম-

‘প্রিয় ঘড়িটা প্রতিদিন ব্যবহার করলে, এক সময় ওটা বে-রঙিন হয়ে মরচে পড়ে যাবে। তখন ওটার প্রতি ভালোবাসা, গুরুত্ব , মায়া কোনোটাই থাকবে না। ঘরেই ওটার আশ্রয় হবে তবে স্থানটা একই হবে না কাঁচের বক্স থেকে ডাস্টবিনে জায়গা হবে । তাই প্রিয় জিনিসটা কে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখাই ভালো ।আসলে কি বলতো প্রিয় জিনিস গুলো কে জীবনের শ্রেষ্ঠ স্মৃতি হিসেবে রাখতে হলে সেগুলোর সবসময় ব্যবহার করা চলে না ।’

-‘তারমানে তুমি এটাই বলছো সবসময় ওটা সাথে থাকলে হয়তো গুরুত্বটা কমে যাবে এমনকি ভালোবাসাটাও।’
‘হ্যাঁ , একদম ঠিক বুঝেছ ।’
-‘আমি আমার উত্তর পেয়ে গেছি শ্রী । ভালো থেকো ,সুখে থেকো । আশা করি আবার দেখা হবে ।’

হারানো ভালোবাসা
হারানো ভালোবাসা

সেই ছিল আমাদের শেষ দেখা।তারপর আবার ৪০ বছর পর দেখা এক বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যায় এই বৃদ্ধাশ্রমের ওই শিউলি গাছটার তলায় । তোদেরকে ধন্যবাদ জানাই, তোরা আমাদের এখানে না পাঠালে হয়তো আমাদের গল্পটা অধরাই রয়ে যেতো। সেদিনের উত্তরটার জন্য ,দীর্ঘ এই এতগুলো বছর আমি কষ্ট পেয়েছি। এতদিন পর যখন আবার শৈলেন আমায় একি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলো তখন আমি বললাম- ‘ ওই ঘড়ি টা কে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে কাঁচের বাক্সের ভেতর সাজিয়ে রেখে কোনো লাভ নেই । ওটাকে যতক্ষণ হাতে রাখতে পারবো ততক্ষনেই ওটার মূল্য দিতে পারবো। ওটা হাতে থাকলে ওটার প্রতি ভালোবাসা আর গুরুত্ব বাড়বে, কিন্তু কমবে না । বে-রঙিন বা মরচে পড়লে একটু পালিশ করে নাহয় আবার পরবো।

শৈলেন হেসে জবাব দিলো ‘তাহলে এতদিনে বুঝলে।’
পুরো বিষয়টি শোনার পর, কেউ ‘ন্যাকামো’ আবার কেউ প্রাক্তন প্রেম বলে ছোট করলেও পাত্রের মেয়ে আর পাত্রীর ছেলে বিয়েটাকে মেনে নিয়ে সিঁদুর দান করালো। আস্তে আস্তে সমাজ , পরিবার ,সবাই মেনে নিলো এই বৃদ্ধ দম্পতিকে । শিক্ষার যেমন কোনো বয়েস হয় না হয়তো ভালোবাসার ক্ষেত্রেও তাই। নইলে দীর্ঘ ৪০ বছর পর কি আবার এক হওয়া সম্ভব বলুন ?

পড়ুনঃ- অসম্পূর্ণ লাভ স্টোরি 

তাদের ছেলে মেয়েরা বারবার তাদের বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাইলেও তারা আর ফিরে যাননি। তারা বেশ সুখেই সংসার করছেন। আর আজ তাদের বিয়ের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে কমিটির ছেলেদের এই সাদর নিমন্ত্রণের আহ্বান ।

সত্যি এমন কতো শৈলেন – শ্রীদেবী রয়েছে সমাজে । তবে তারা লোকলজ্জার ভয়ে এক হতে পারে না । বিজ্ঞজনের কাছে একটাই প্রশ্ন – বেনারসি সাজিয়ে রেখে বেশি মূল্যবান না আটপৌরে শাড়িটা, যেটার কদর কেউ না করলেও সবসময় ওটাই প্রয়োজনীয়?

আলোরানি মিশ্র

গল্পটির সুন্দর ভাবনায়-

আপনার গল্প/লেখা আমাদের পাঠান- charpatrablog@gmail.com -এ, অথবা সরাসরি WhatsApp এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে।

© সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্রের অধীনে সংরক্ষিত। কপিরাইট নিয়ম লঙ্ঘনে, ছাড়পত্র উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণে বাধ্য হবে।
আলোরানির যে লেখা গুলি পাঠকের পছন্দ হয়েছে- 

দাদাকে নিয়ে কিছু কথা- দাদাকে নিয়ে গল্প 

হাসির কল্প কাহিনী- কুমিকম্প 

মধ্যবিত্ত ছেলেদের জীবনের গল্প- পুরুষ 
এক ক্লিকেই ছাড়পত্রের সমস্ত আপডেটের জন্য- 

ফেসবুক Group - গল্প Junction 

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)

হারানো ভালোবাসা ফিরে পাওয়ার গল্প। হারানো ভালোবাসা গল্প। 1 new outstanding love story in bengali.



from ছাড়পত্র https://ift.tt/5uQZjcf
via IFTTT

Post a Comment

0 Comments