পবিএ__ভালোবাসা পর্ব__০৩ Bangali Lyrics Golpo





 পবিএ__ভালোবাসা পর্ব_Bangali Lyrics Golpo



পবিএ__ভালোবাসা
পর্ব__০৩
(Golpo)


তানহার আম্মু যেনো বাকরুদ্ধ হয়ে যায়।
তানহার আব্বু আর তুষার পাগলের মতো হয়ে যায়। তুষার নিজেকে কিছুতেই সামলাতে পারছে না। ওর বোন আর এই পৃথিবীতে নেই এটা মেনে নিতে বড্ড কষ্ট হচ্ছে তার।
তিশান ও অন্য দিকে ফিরে কান্না করছে। হঠাৎ এক জন নার্স এসে বলে।
-- স্যার ম্যাম এর শ্বাস প্রশ্বাস চলছে।
এটা শুনে সবাই চমকে উঠে। তিশান এক‌ প্রকার দৌড়ে অপারেশন রুমে যায়। গিয়ে দেখে সত্যিই তানহা নিশ্বাস নিচ্ছে। তিশান এটা বিশ্বাস ই করতে পারছে না। তিশান দ্রুত অক্সিজেন মাস্ক তানহা কে পড়িয়ে দেয়। প্রায় অনেক্ষন পর তানহা স্বাভাবিক হয়। মিরাক্কেল ভাবে হয়ে গেছে এটা। তিশান খুশিতে আত্মহারা। তানহা কে একটা ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে দেয় তিশান। তারপর তানহা কেবিনে নেওয়া হয়। তিশান অপারেশন রুম থেকে বের হয়।
-- তানহা বেঁচে আছে তুষার।(চোখে পানি নিয়ে)
-- সত্যি?
-- সত্যি বলছি তিশান?
-- হ্যাঁ সত্যিই। মিরাক্কেল হয়ে গেছে। তানহা ফিরে এসেছে।
-- এখন আমরা ওর সাথে কথা বলতে পারি ভাইয়া?
-- নাহ্ এখন তানহা কে ঘুমের ঔষধ দিয়ে ঘুম পারিয়ে রেখেছি।
-- আল্লাহ তোমার কাছে অশেষ অশেষ শুকরিয়া।
-- আপনারা গিয়ে একটু রেস্ট নিন।
-- আচ্ছা।
তানহার আব্বু আম্মু খুশিতে কান্না করে দেয়। তিশানের পারসোনাল সেক্রেটারি এসে বলে।
-- স্যার আমাদের দুবাই যাওয়ার ফ্লাইট কেনসেল হয়ে গেছে।
-- হুম। সমস্যা নেই। আমি তোমার সাথে পরে কথা বলছি এখন যাও।
-- আচ্ছা স্যার।
তিশান এক গ্লাস পানি খায়। আর একটু হলেই মনে হয় রুহু টাই বের হয়ে যেতো ওর। তানহার এ অবস্থায় অথচ ওর স্বামী কোথায়? তিশানের এই একটা কথা মাথা তে ঘুর পাক খাচ্ছে। নাহ্ এটা জানা জরুরি। তিশান তুষার কে ডেকে নিয়ে আসে।
-- আচ্ছা তুষার তানহার হাজব্যান্ড কোথায়? তানহার এই অবস্থা অথচ উনি নেই? (তিশানের প্রশ্নে তুষার চুপ হয়ে যায়। নিচের দিকে তাকিয়ে থাকে)
-- কি হলো তুষার চুপ করে আছো যে?
-- আসলে ভাইয়া!
-- বলো কি হয়েছে?
-- আসলে ভাইয়া আপুর ডিভোর্স হয়ে গেছে।
-- হোয়াট? কি বলছো তুমি?
-- হ্যাঁ ভাইয়া। আপুর ডিভোর্স হয়ে গেছে।
-- ক.কেন?
-- ((তারপর তুষার সব খুলে বলে))
তিশানের চোখ থেকে দু ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। এতো কিছু হয়ে গেছে তানহার সাথে। যার কাছে নিজের ভালোবাসার মানুষ টা সুখে থাকবে বলে কখনো ওদের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় নি সেই খানে এমন কিছু ঘটে গেলো। ছিঃ এমন দেহ লোভী ছিলো তানহার হাজব্যান্ড। ভাবতেই তিশানের ঘৃণা চলে আসছে। আর রাগে চোখ লাল হয়ে গেছে।তিশানের একটা কথা মনে পড়ে যায়। যেদিন তানহার বিয়ে হয়ে গিয়েছে এটা জেনেছিলো তিশান তখন সে কষ্ট পেয়ে প্রায় পাগলের মতো কান্না করেছিলো। আর এটা বলে ছিলো যে "তুমি ও সুখে থাকবে না" কিন্তুু সেটা তো তিশান বড্ড কষ্ট পেয়ে বলেছিলো। পরে ঠিক ই সব মেনে নিয়ে ও ছিলো। কিন্তুু সেই তুচ্ছ কথা টা কি তাহলে সত্যি হয়ে গেল। তানহার এ অবস্থার জন্য তিশান নিজেকেই দোষারোপ করছে।
-- তানহার এ অবস্থার জন্য আমি ই দায়ী।(বিড়বিড় করে)
-- ভাইয়া কিছু বললে।
-- কই না তো।
প্রায় ১ মাস পর_________________
তানহা এখন মোটামুটি সুস্থ। হাটাচলা করতে পারে। আর বেবি টাও ভালো আছে। তানহা বেবি টা কে দোলনায় শুইয়ে দেয়। বেবি টা দেখতে কিছু টা আনানের মতোই। তানহা ওর বাবুর দিকে তাকিয়ে অতীত টা ভাবে আর আনমনে চোখের পানি ফেলে। তিশান দরজার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় এটা দেখে।
তিশানের আর দুবাই যাওয়া হয়ে উঠে নি। তানহার এমন পরিস্থিতি জানার পর তার মন আর কিছুতেই দুবাই যাওয়ার জন্য স্থির করতে পারে নি। তাই তানহাদের বাসায় ই রয়ে গেছে।তিশান এখনো তানহাকে ভালোবাসে। সেখানে যদি অন্য কারো সাথে যদি নিজের ভালো বাসার মানুষের বিয়ে হয়ে যায় তবে কি ভালোবাসা কমে যায়? ভালোবাসা টা যদি সত্যিই হয়ে থাকে সেখানে বিয়ে কেন এর চেয়ে বেশি কিছু হয়ে গেলেও ভালোবাসা কমে না। তিশানের ও সেইম। তিশান চায় তানহার সব দুঃখ কষ্ট দূর করে আবার তাকে আপন করে নিতে। সে তানহা কে বিয়ে করতে চায়।
তিশান এই ১ মাসে অনেকবার চেষ্টা করেছে তানহার সাথে একটু ফ্রি হয়ে কথা বলতে। কিন্তুু তানহা তিশানের সাথে প্রয়োজনের বাহিরে একটা কথা ও বলে নি।আজকে তিশান ঠিক করে নেয় সে বলবে তানহা কে সব কথা।
-- তানহা আসবো?(তিশানের কথা শুনে তানহা চমকে উঠে। তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে ফেলে। কান্না করায় কাজল লেপ্টে গেছে। এটা দেখে তিশান হালকা হাসে। আগে তানহার এই কাজল লেপ্টে যাওয়া চোখ গুলো দেখার জন্য কতোই না পাগল ছিলো সে। কিন্তুু আজকে সব ই স্মৃতি।)
-- আসো।
-- কাঁদছো কেন?
-- কই নাতো।
-- মানুষের মুখ মিথ্যে বলতে পারে কিন্তুু চোখ না।
-- (...)
-- তোমার সাথে কিছু কথা কথা ছিলো!
-- বলো।
-- তানহা আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই।
-- দয়া দেখানোর জন্য?
-- নাহ্।
-- তো তাহলে?
-- আমি তোমাকে এখনো ভালোবাসি।
-- তবে এতোই যখন ভালোবাসতে চলে গিয়েছিলে কেন?
-- কারণ আমি চেয়েছিলাম তুমি যেনো সুখেই থাকো।
-- হ্যাঁ সুখেই তো আছি।
-- তানহা যা হয়েছে সেটা দুঃস্বপ্ন ভেবে ভুলে যাও।
-- কাকে দুঃস্বপ্ন ভাববো যেটা আমার আর আমার বাচ্চার জীবন শেষ করে দিয়েছে সেটা?
-- তানহা ওই মানুষ নামের জানোয়ার টার ভালোবাসা মিথ্যে আর অপবিএ হতে পারে কিন্তুু আমার ভালোবাসা তো অপবিএ নয়। আমার ভালোবাসা কে আমি কখনো অপবিএ হতে দেবো না। আমার ভালোবাসা পবিএ_ভালোবাসা
-- তবে আমি চাই না আর এ ভালোবাসা।
-- কেন তানহা?
-- তোমাকে ঠকিয়েছি বলেই তো আজকে নিজে ও ঠকে গেছি। প্রথমে যখন তোমার ভালোবাসার মূল্য দিতে পারি নি। তাই এখন আর চাই না। করুণার দান হয়ে তোমার জীবনে জড়াতে।
-- কিন্তুু তানহা!
-- ব্যাচ থামো। আমাকে সুখি দেখতে চাও তো?
-- হ্যাঁ।
-- তবে আমাকে আমার মতোই থাকতে দাও। এভাবেই আমি সুখি। আর একটা ভালো মেয়ে দেখে বিয়ে করে নাও।
-- তুমি যদি এভাবেই নিঃস্ব জীবন নিয়ে হ্যাপি থাকতে পারো তো আমি কেন পারবো না। আমি ও এভাবেই হ্যাপি থাকবো।
-- রাগ করছো?
-- নাহ তবে সাড়ে তিন বছর পর আজ আবার একবার তোমার প্রেমে পড়ে গেলাম।
-- এখন এর নকল।
-- নাহ্ এটাই পবিএ_ভালোবাসা
-- তানহা প্লিজ একটা বার ভেবে দেখো।
-- ভেবেই বলেছি।
তিশান আর কিছু না বলে চলে যায়।‌ তানহা তিশান কে আটকালো না। তানহা একবার তিশান কে ঠকিয়েছে আর দ্বিতীয় বার ও তিশান কে ঠকাতে পারবে না। তাই তানহা নিজের জীবনের সাথে আর তিশান কে জড়াতে চায় না। তানহা দু ফোঁটা অশ্রু ঝরায়। ভালোবাসা টা ও আজকালে জলের মতো। উপর থেকে গড়িয়ে পরতে পরতে ভেজা অংশ শুকিয়ে যায়। একজন নিজের সন্তানের কথা না ভেবে অন্য একটা মেয়ের সাথে অন্তরঙ্গ অবস্থায় জড়িয়ে সব সম্পর্ক শেষ করে আরেকজন যাকে এক সময় ঠকানো হয়েছিলো অথচ সে আজ সব টা জেনেই আবার তাকে ভালোবাসতে চাচ্ছে।
বড্ড আজব মানুষ এই পৃথিবীতে বসবাস করছে। কার মন কেমন সেটা বুঝা ই যায় না।থাক না তিশানের ভালোবাসা টা এভাবে পবিএ_ভালোবাসা হয়ে। হয়ত ২ টা মানুষ আর ২ টা মন কষ্ট পাবে তাতে কি। ভালোবাসা টা তো পবিএ ই।
{{{{{{{{{{{সমাপ্ত}}}}}}}}}}}}
গল্প টা হয়তো ভালো হয় নি। কিন্তুু বাস্তব জীবনে এমন কিছু ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটে চলেছে। ওই সব ঘটনার তো সব সমাধান মেলে না। কিছু সমাধান মাঝপথে এভাবেই। পবিএ_ভালোবাসা হয়েই থেকে যায়। তাই আমি ও ওই টাই ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আর আপনাদের মনের মতো করে না লিখতে পারার জন্য সরি।💜💙






Post a Comment

0 Comments